Pet Dogs

দায়িত্ব নিতে নারাজ! মোহ কাটতেই ‘লকডাউন-সঙ্গী’র ঠাঁই রাস্তায়

হুগলির একটি সংস্থা আবার প্রবল ঝড়বৃষ্টির মধ্যে হাইওয়ের ধার থেকে উদ্ধার করেছিল একটি কুকুরকে। পাগ এবং বক্সার প্রজাতির মিশেল সেই কুকুরটিকে কেউ বেঁধে রেখে গিয়েছিলেন বাতিস্তম্ভের সঙ্গে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:০৪
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

কালো কুকুর চাই। কারণ, ‘গুরুজি’ বলেছেন, বাড়ির দরজায় একটি কালো কুকুর বেঁধে রাখলেই নাকি আর খারাপ কিছু ঘটবে না। সেই মতো একটি কালো ল্যাব্রাডর এনে তাকে সর্বক্ষণ বাড়ির দরজায় বেঁধে রাখতেন এক ব্যক্তি। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা— রোদে, জলে সেখানেই পড়ে থাকতে থাকতে শেষে রেনাল ফেলিয়োর হয়ে মারা যায় কুকুরটি। কোনও ভাবেই তাকে উদ্ধার করে আনতে পারেননি পশুপ্রেমীরা।

Advertisement

আর একটি বছর তিনেকের বিগেল প্রজাতির কুকুরকে আবার সর্বক্ষণ রেখে দেওয়া হত ছোট খাঁচার ভিতরে। খাবারও দেওয়া হত সেখানেই। হাড় জিরজিরে চেহারায় পোকা ধরে যায় তার শরীরে। শেষে উদ্ধারের পরে খাঁচা থেকে বার করতেই টানা ২৪ ঘণ্টা ছুটে বেড়াতে শুরু করে সে। এমন ‘দুরন্ত’ পোষ্যকে এর পরে বাড়িতে রাখতে চাননি আরও অনেকেই।

হুগলির একটি সংস্থা আবার প্রবল ঝড়বৃষ্টির মধ্যে হাইওয়ের ধার থেকে উদ্ধার করেছিল একটি কুকুরকে। পাগ এবং বক্সার প্রজাতির মিশেল সেই কুকুরটিকে কেউ বেঁধে রেখে গিয়েছিলেন বাতিস্তম্ভের সঙ্গে। কুকুরটি বার বার মলত্যাগ করছিল। বাজ পড়ার আওয়াজে কেঁপে কেঁপে উঠছিল। মলত্যাগের সমস্যার কারণেই হয়তো তার এই পরিণতি। উদ্ধার হওয়ার পরে মলত্যাগের সমস্যা সারলেও ঝড়বৃষ্টি, বাজের শব্দে ভয় কাটিয়ে উঠতে পারেনি সে। এক বছরের মাথায় আরও একটি ঝড়বৃষ্টির দিনেই মৃত্যু হয় তার!

Advertisement

এগুলির কোনওটিই কোনও বিচ্ছিন্ন ব্যাপার নয়। শহরে উত্তরোত্তর বাড়ছে এ ভাবে পোষ্যকে রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে চলে যাওয়ার ঘটনা। প্রায় প্রতিদিনই সমাজমাধ্যমে কেউ না কেউ লিখছেন এমন সারমেয় খুঁজে পাওয়ার কথা। অধিকাংশই রোগে আক্রান্ত, নয়তো হাত-পা ভাঙা। শরীরে গভীর ক্ষত রয়েছে, এমন পোষ্যও উদ্ধার হওয়ার ঘটনা প্রচুর। পশুপ্রেমী থেকে পশু চিকিৎসকদের দাবি, বেশ কিছু ক্ষেত্রে বাঁচানোর মতো পরিস্থিতিও থাকছে না।

কিন্তু পোষ্যকে রাস্তায় ছেড়ে দেওয়ার পুরনো এই রোগ হঠাৎ এমন নতুন করে বেড়ে যাওয়ার কারণ কী? দেখা যাচ্ছে, এই মুহূর্তে উদ্ধার হওয়া বেশির ভাগ পোষ্যেরই বয়স তিন থেকে চার বছরের মধ্যে। পশু চিকিৎসক অভিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘বছর তিনেক আগে লকডাউনের সময়ে বাড়িতে পোষ্য রাখার ঝোঁক প্রচণ্ড বেড়েছিল। সেই সময়ে অনেকেই বাড়িতে থাকছেন বলে পোষ্য নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু এখন সব স্বাভাবিক হওয়ার পরে আর তাদের সময় দিতে না পেরে রাস্তায় ছেড়ে দিচ্ছেন। গত কয়েক মাসে এই প্রবণতা মারাত্মক বেড়েছে।’’

পশু অধিকার আন্দোলনের কর্মী তথা অভিনেতা তথাগত মুখোপাধ্যায় আবার বললেন, ‘‘সমাজমাধ্যমে কুকুরের ভাল ভাল ভিডিয়ো দেখতে পেয়ে আমরা ধরেই নিচ্ছি, কুকুর পোষা মানে সেটুকুই। তার বাইরে যে পোষ্য অসুস্থ হতে পারে, তাদের ঋতুকালীন সময় আসতে পারে, তা ভুলে যাচ্ছি। দায়িত্ব নেওয়ার প্রশ্ন এলেই রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রথমেই বুঝতে হবে, পোষ্য মানে খেলনা নয়।’’ পশুপ্রেমীরা জানাচ্ছেন, উদ্ধার হওয়া কুকুরের মধ্যে বেশি ভাগকেই অনৈতিক ভাবে প্রজননের কাজে ব্যবহারের পরে ছেড়ে দিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে দেখা যায়। বয়স যে হেতু বেশি, তাই সহজে তারা নতুন ঘরও পায় না।

অভিরূপ বলছিলেন, ‘‘একটি পোষ্য কোনও দিনই বুঝতে পারে না যে, তার সঙ্গে এ রকম হল কেন! সে সারা জীবন নিজের মালিকের অপেক্ষা করতে থাকে। এর পরে বাড়ি পেলে ভাল, নয়তো এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় তাকে ঘুরে বেড়াতে হয়। অবসাদ, মেজাজ, সব কিছু মিলিয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, যাতে সেই নিরীহ প্রাণটার বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে যায়।’’

পশু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, উদ্ধার হওয়া পোষ্যের পুরনো রোগের ইতিহাস জানতে না পারাটাই সব চেয়ে বেশি সমস্যা তৈরি করে। অনভিজ্ঞ কারও পক্ষে উদ্ধার হওয়া কাউকে রাখা আরও কঠিন। এই পরিপ্রেক্ষিতেই পশু অধিকার রক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তদের দাবি, প্রজনন ব্যবসার সঙ্গে যুক্তদের লাইসেন্সের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। পোষ্য রাখার জন্য কড়া আইনও করতে হবে। যাতে চাইলেই পোষ্যকে রাস্তায় বসিয়ে দিয়ে আসা না যায়।

তেমন আইন কি আদৌ হবে? প্রশাসনের কোনও স্তর থেকেই এ সম্পর্কে সবুজ সঙ্কেত মেলে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement