—প্রতীকী ছবি।
এক তরুণীকে খুনের অভিযোগে তাঁর স্বামী ও শাশুড়িকে গ্রেফতার করল বৌবাজার থানার পুলিশ। ধৃতদের নাম সূর্যকান্ত তিওয়ারি ও ইন্দিরা তিওয়ারি। সূর্যকান্ত গড়িয়াহাট এলাকার একটি হিন্দি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষক। পুলিশ জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার ভোরে বৌবাজার থানা এলাকার যদুনাথ দে রোডের বাড়ি থেকে সূর্যকান্তের স্ত্রী দীপ্তি শুক্লকে (২৫) অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক। দেহের ময়না তদন্তের রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, আগুনে পুড়ে নয়, মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করার ফলে মৃত্যু হয়েছে ওই তরুণীর। তার পরে দেহে আগুন লাগানো হয়েছে। বুধবার রাতে মৃতার বাবা ইন্দ্রসেন শুক্ল জামাই সূর্যকান্তের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। সে দিনই গভীর রাতে সূর্যকান্তকে গ্রেফতার করে বৌবাজার থানার পুলিশ। ধৃতের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতন, খুন-সহ একাধিক ধারা প্রয়োগ করে তদন্ত শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার ধৃতকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে বিচারক ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। এর পরে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করা হয় তার মা ইন্দিরাকে। পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার রাতে খাওয়াদাওয়ার দু’ঘণ্টা পরে দীপ্তিকে খুন করা হয়। মঙ্গলবার সকালে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় দেহে।
সূর্যকান্ত ও দীপ্তি, দু’জনেই আদতে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের বাসিন্দা। তবে, কর্মসূত্রে সূর্যকান্ত সপরিবার কলকাতায় থাকে, যদুনাথ দে রোডের একটি বহুতল বাড়ির চারতলার ভাড়ার ফ্ল্যাটে। চার মাস আগে দু’জনের বিয়ে হয়েছিল। মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে উত্তরপ্রদেশ থেকে তাঁর বাবা-সহ পরিবারের সদস্যেরা কলকাতায় এসেছেন। তাঁদের তরফে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে, বিয়ের পর থেকেই গাড়ি কিনে দিতে চাপ দিচ্ছিল সূর্যকান্ত। পাশাপাশি, সে নিয়মিত নেশাও করত, যা নিয়ে আপত্তি ছিল দীপ্তির। এ দিন যদুনাথ দে রোডে সূর্যকান্তের ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা গেল, দরজায় তালা ঝুলছে। ওই বহুতল বাড়ির মালিক পরিতোষ বন্দ্যোপাধ্যায় পাঁচতলায় থাকেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বিয়ের পর থেকেই সূর্যকান্ত ও তার বাড়ির লোকেরা দীপ্তির উপরে অত্যাচার করত। মেয়েটি সাদাসিধে বলে কোনও প্রতিবাদ করত না। গত সোমবারও দীপ্তিকে ছাদে নিয়ে গিয়ে সূর্যকান্ত মারধর করছিল। আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম।’’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, যদুনাথ দে রোডের ওই ভাড়ার ফ্ল্যাটে সূর্যকান্তের দুই বোন, মা, বাবা ও এক মামাও থাকতেন। সূর্যকান্ত ও ইন্দিরা বাদে বাকিরা বেপাত্তা। এ দিন সকালে বৌবাজার থানায় গিয়ে দেখা যায়, ইন্দিরা নীচে বসে রয়েছে। পুলিশ তাকে গ্রেফতারের আগে তখন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছিল। মহিলার দাবি, ‘‘বৌমা প্রায়ই সিঁদুর পরত। আমার ছেলে সেটা পছন্দ করত না। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে প্রায়ই মনোমালিন্য হত।’’ এই দাবি নস্যাৎ করে পরিতোষের অভিযোগ, ‘‘ওরা সবাই মিলে মেয়েটিকে খুন করেছে। তথ্য লোপাট করার জন্য খুনের পরে গায়ে আগুন ধরিয়েছিল।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘মঙ্গলবার সকালে হেঁটে সবে বাড়ির কাছে এসেছি। দেখি, সূর্যকান্তদের ফ্ল্যাট থেকে গলগল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। আমরা সবাই ছুটে গিয়ে ওদের একাধিক বার ডাকাডাকি করলেও কেউ দরজা খোলেননি। পরে দরজা ভেঙে ঢুকে দেখি, পাশের ঘরে দীপ্তির পোড়া দেহ পড়ে রয়েছে। সেই সময়ে আমাদের সঙ্গে পুলিশও ছিল।’’