প্রতীকী ছবি।
থাকার কথা ২৮৪ জনের। কিন্তু আছেন সর্বসাকুল্যে ৭০ জন মালি। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৭০০টি উদ্যান রয়েছে কলকাতা পুরসভার। কিন্তু অভিযোগ, মালির অভাবে সেই সমস্ত উদ্যানের পরিচর্যার কাজ শিকেয় উঠেছে। শ্রীহীন হয়ে পড়েছে পুরসভার উদ্যানগুলি। সেই কারণে পুরসভার উদ্যান বিভাগ এ বার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রতিটি ওয়ার্ডে চার জন করে একশো দিনের কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে মালির কাজে লাগানো হবে। এর জন্য একশো দিনের কর্মীদের বাছতে ওই বিভাগের তরফে পুরসভার ১৪৪ জন কাউন্সিলরকে সম্প্রতি চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলগুলির কাউন্সিলরেরা। তাঁদের বক্তব্য, গাছ পরিচর্যার মতো বিষয় কি অল্প কিছু দিনের প্রশিক্ষণে শিখে ফেলা সম্ভব? একশো দিনের কর্মীরা কি পারবেন উদ্যান পরিচর্যার কাজ নিখুঁত ভাবে করতে?
পুরসভা পরিচালিত বড় উদ্যানের সংখ্যা প্রায় ৪০০। এ ছাড়া, রাস্তা সংলগ্ন উদ্যান (রোডসাইড গার্ডেন) এবং ছোটখাটো উদ্যান মিলিয়ে রয়েছে আরও তিনশোটি। উদ্যান বিভাগ সূত্রের খবর, পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা স্থায়ী মালিরা অবসর নিলেও তাঁদের জায়গায় বহু উদ্যানেই নতুন নিয়োগ হয়নি। বর্তমানে পুরসভার আর্থিক অবস্থা এতটাই সঙ্গিন যে, কর্তারা নতুন করে মালি নিয়োগ করতে চাইছেন না। বরং একশো দিনের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েই সেই কাজ সারতে চান তাঁরা। পুরসভার উদ্যান বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘চলতি মাসের শেষে টালা পার্কে ধাপে ধাপে ৫৭৬ জন একশো দিনের কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বাগান পরিচর্যা থেকে গাছের ডাল ছাঁটাই (ট্রিমিং), সব কাজই পুরসভার উদ্যানবিদেরা তাঁদের হাতেকলমে শিখিয়ে দেবেন।’’
উত্তরের হেদুয়া থেকে শুরু করে দক্ষিণের যতীন দাস পার্ক— শহরের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা উদ্যানগুলির রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। মালির অভাবে উদ্যান পরিচর্যার অভাব তো রয়েছেই, পাশাপাশি শহরের অনেক উদ্যানের জঞ্জাল ও প্লাস্টিকের স্তূপ পরিবেশ দূষণেরও অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে। শহরের বহু উদ্যানেই বসার আসনে আর বসা যায় না, এমনই অবস্থা সেগুলির। কোথাও বা পাঁচিল ভেঙে পড়েছে। উদ্যান বিভাগের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, লোকবলের অভাবই এখন রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই কারণেই একশো দিনের কর্মীদের জরুরি ভিত্তিতে প্রশিক্ষণ দিয়ে উদ্যান পরিচর্যার কাজে লাগানো হবে।
পুরসভার এক উদ্যানবিদের কথায়, ‘‘শহরের বড় উদ্যানগুলিতে পর্যাপ্ত মালি না থাকায় গাছের পরিচর্যা ঠিকমতো হচ্ছে না। যার ফলে বহু গাছ অকালে মরে যাচ্ছে।’’ গাছে জল দেওয়া থেকে শুরু করে গোড়ার মাটি কাটা, সার দেওয়া— এ সব কাজ সাধারণত মালিরাই করে থাকেন। উদ্যান বিভাগের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, গাছের কোনও ক্ষতি না করে ওই সমস্ত কাজ কী ভাবে করতে হবে, সে ব্যাপারে একশো দিনের কর্মীদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে টালা পার্কে। পুরসভা সূত্রের খবর, পুর উদ্যানগুলির মধ্যে টালা পার্কের নার্সারি সব থেকে ভাল। সেখানে বিভিন্ন রকমের গাছ রয়েছে।
তাই প্রশিক্ষণের জন্য টালা পার্ক বাছা হয়েছে। মালিদের বিকল্প হিসেবে একশো দিনের কর্মীরা উদ্যান পরিচর্যার কাজে কতটা সফল হবেন, তা নিয়ে অবশ্য ঘোরতর সন্দিহান বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘আমার ওয়ার্ডে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে চার জন মালি ছিলেন। এখন আছেন মাত্র এক জন। প্রশিক্ষিত মালিদের নিয়োগ করে গাছ পরিচর্যায় জোর না-দিলে সবুজ বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়বে।’’ ৯২ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআই কাউন্সিলর মধুছন্দা দেবের প্রশ্ন, ‘‘মালির পরিবর্তে একশো দিনের কর্মীরা গাছ পরিচর্যার কাজ ঠিক মতো করতে পারবেন তো?’’ কংগ্রেস কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠকের পরামর্শ, ‘‘বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে পুরসভা যেন একশো দিনের কর্মীদের ভাল করে প্রশিক্ষণ দেয়।’’