শুভেচ্ছা: বাসে করে বিগ্রেড সমাবেশে যোগ দিতে যাওয়া এক সমর্থককে পতাকা নাড়িয়ে অভিবাদন দুই প্রজন্মের। রবিরার, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: সুমন বল্লভ।
ব্রিগেডের সমাবেশে আসা বাসের ভিড়ে প্রায় আটকে গিয়েছে মেয়ো রোডের মুখ। দীর্ঘ সময় বাসে বসে থাকার পরেও এতটুকু এগোতে না পেরে হেঁটেই সভার পথ ধরেছেন অনেকে। একই অবস্থা রেড রোডেও। দু’পাশে পর পর গাড়ি দাঁড় করিয়ে পুলিশের তরফে
রাস্তা সচল রাখার চেষ্টা করা হলেও মিছিলের ভিড়ে বাসের চাকা গড়ানোর উপায় নেই! ‘‘আর এগোনো যাবে না?’’— বাসের জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীকে জিজ্ঞাসা করলেন কয়েক জন যুবক। তিনি খুব একটা আশা দিতে না পারায় বাস থেকে নেমেই পড়লেন ওই যুবকেরা। ভিড়ের সঙ্গে যেতে যেতে বললেন, ‘‘এইটুকু তো পথ! আমাদের নেতারা সারা রাজ্য হাঁটলেন। আমরা এইটুকু হাঁটতে পারব না?’’
রবিবার ডিওয়াইএফআইয়ের ডাকে ব্রিগেড ভরাতে কেউ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন শনিবার মাঝরাতে। কেউ বা শনিবার বিকেলে বেরিয়ে রাতেই এসে গিয়েছিলেন। ডিওয়াইএফআই নেতৃত্ব আগেই জানিয়েছিলেন, জেলার পাশাপাশি শহরের সাত জায়গা থেকে সাতটি মিছিল এ দিন আসবে। সকাল ১০টা নাগাদ সেই মিছিল শুরুর আগে থেকেই অবশ্য মাঠ ভরাতে শুরু করেছিলেন যুব ফেডারেশনের কর্মী-সমর্থকেরা। বেলা বাড়তে সেই ভিড়ই প্রায় জনসমুদ্রের চেহারা নিল। রেড রোডে মিছিল এবং গাড়ির চাপ সামলানোর ফাঁকে এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘অনেকে বলেছিলেন যে মাঠ তেমন ভরবে না। কিন্তু এখন তো দেখছি, বাস ভর্তি লোক আসা আর শেষই হচ্ছে না!’’
যদিও সকালের দিকে ছবিটা ছিল ভিন্ন। রাস্তায় সে ভাবে কর্মী-সমর্থকদের ভিড় দেখা যায়নি। শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরও ছিল ফাঁকা। তবে সময় গড়াতেই ছবিটা বদলাতে থাকে। জেলা থেকে বাস ভর্তি করে বাম কর্মী-সমর্থকদের আসার পাশাপাশি ছোট ছোট মিছিলে ভরে উঠতে থাকে রাজপথ। ভিড় বাড়তে শুরু করে শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরেও। শহরতলির একের পর এক লোকাল ট্রেন যত এসেছে, ছোট ছোট মিছিলে ততই ভিড় বেড়েছে মৌলালি, এস এন ব্যানার্জি রোডে।
এ দিনের মিছিলে তরুণ প্রজন্মের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। হাতে পতাকা, লাল বেলুন নিয়ে স্লোগান উঠেছে মুহুমুর্হু। কোনও মিছিল থেকে নিয়োগের দাবি তোলা হয়েছে, কোনও মিছিল আবার গলা মিলিয়েছে দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে। ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেল দিয়ে মিছিলে বাবার সঙ্গে হেঁটে যাচ্ছিলেন টালিগঞ্জের দীপ্তি সরকার। বললেন, ‘‘বাবা প্রতি বার আসে। এ বার আগেই বাবাকে বলেছিলাম, আমিও ব্রিগেডে আসব। কলেজে পড়ি। চার দিকে যা দেখছি-শুনছি, কোথাও একটা তো প্রতিবাদ হওয়া দরকার।’’
মিছিলে পিছিয়ে ছিলেন না প্রবীণ-প্রবীণারাও। সকাল সকালই বসিরহাট থেকে কলকাতায় চলে এসেছিলেন মাঝবয়সি মহম্মদ নাসির। ডিওয়াইএফআই নেতৃত্বের বক্তৃতা শোনার ফাঁকে ব্রিগেডের ভিড় মোবাইলে ক্যামেরাবন্দি করছিলেন তিনি। নাসির বললেন, ‘‘একটু বড় বয়স থেকেই ব্রিগেডে আসছি। বামেরা যখন সরকারে ছিল, তখন তো এসেছিই। এখন তারা শূন্য ঠিকই। তবে, শূন্য পাওয়া দলের যুবদের এমন ব্রিগেড ভরানো না তুলে রাখলে চলে? বাড়ি ফিরে দেখাতে হবে তো।’’
এ দিন সভামুখী মিছিল আর গাড়ির চাপ যত বেড়েছে, ততই গতি কমেছে শহরের। একটা সময়ে ধর্মতলা চত্বরের একাধিক রাস্তায় গাড়ির লম্বা লাইন পড়ে যায় বলে অভিযোগ। একই অবস্থা ছিল শিয়ালদহ চত্বরে। মিছিলের পাশাপাশি একটি ধর্মীয় শোভাযাত্রা আরও জট বাড়ায় শহরের রাস্তায়। ধর্মতলায় গাড়ির ভিড় সামলাতে সামলাতেই এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীর মন্তব্য, ‘‘রবিবার বলে তা-ও কিছুটা দম ফেলা গিয়েছে। কাজের দিন হলে কী হত, সেটাই ভাবছি।’’