হাওড়ার আরপিএফ কোয়াটার্সের মাঠে রান্না হয়ে পড়ে রয়েছে পাহাড় প্রমাণ ভাত। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের জনসভা বলে কথা! তা-ও আবার কলকাতা শহরের একেবারে কেন্দ্রস্থলে। আয়োজকদের আশা ছিল, জনজোয়ারে বুঝি থই পাওয়া যাবে না। তাই আয়োজনে কোনও রকম ত্রুটি রাখতে চাননি হাওড়ার বিজেপি নেতৃত্ব। প্রায় ২০ হাজার কর্মী-সমর্থককে খাওয়ানোর পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। যার জন্য রীতিমতো কেটারার ডেকে দু’জায়গায় ১২-১৩টি উনুন জ্বালিয়ে ভাত-তরকারি-ডাল-চাটনির ব্যবস্থা করেছিলেন তাঁরা। এক বেলা নয়, দু’বেলার আয়োজন। কিন্তু খাবে কে? যত ভিড় হবে বলে ভাবা হয়েছিল, বাস্তবে হল তার চেয়ে অনেক কম। তাই দিনের শেষে দেখা গেল, ভাতের পাহাড় নিয়ে বসে আছেন পরিবেশন কর্মীরা। পাশে একাধিক বড় বড় ডেকচি ভর্তি ডাল, তরকারি। ওই পরিমাণ খাবারের গতি করবে কে? তাঁরাও জানেন না।
হাওড়া সিটি পুলিশের দাবি, বুধবার মেরেকেটে ১২-১৩ হাজার বিজেপি সমর্থক হাওড়া থেকে সভাস্থলের দিকে গিয়েছেন। যদিও বিজেপির একাংশের দাবি, পুলিশ ঠিক বলছে না। সংখ্যাটা এর দ্বিগুণ। তবে, ঘটনা যা-ই হোক, প্রত্যাশার তুলনায় লোকজন যে অনেকটাই কম এসেছিলেন, তা নিয়ে নেতাদেরও সংশয়ের অবকাশ নেই।
ধর্মতলা বা ব্রিগেডে সভা হলে শাসক দল তৃণমূলও দূরের জেলা থেকে আসা সমর্থকদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে। প্রয়োজনে অনুষ্ঠানবাড়িও ভাড়া নেওয়া হয়। এ দিন বিজেপি সমর্থকদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা হয়েছিল রেল ও কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের দু’টি জায়গায়। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়া সেতুর পাশে কলকাতা বন্দরের কোয়ার্টার্সের মাঠে একটি প্যান্ডেল করা হয়েছিল। চেয়ার-টেবিল সাজিয়ে প্রায় ছ’হাজার জনের নিরামিষ রান্না করা হয়েছিল সেখানে। সব থেকে বড় প্যান্ডেলটি করা হয়েছিল রেল মিউজ়িয়ামের কাছে, আরপিএফ কোয়ার্টার্সের ফাঁকা মাঠে। সেখানে ২৫ হাজার লোকের দু’বেলার খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল।
এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়প্রমাণ ভাত রাঁধা হয়েছে সমর্থকদের জন্য। ছ’টি গ্যাসের উনুনে চলছে রান্নাবান্না। কাজ করছেন ১০-১২ জন কেটারিং কর্মী। গোটা বিষয়টির দায়িত্বে বিজেপির শ্রমিক সংগঠনগুলির জেলা আহ্বায়ক সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। সুদীপ্ত জানান, দু’জায়গায় খাওয়ানোর ব্যবস্থা হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের মাঠে এক বেলা ভাত, তরকারি, ডাল খাওয়ানো হচ্ছে। আর তাঁর ওখানে সকালে ভাত, ডাল, তরকারি, চাটনি এবং রাতে ভাতের সঙ্গে কুমড়ো-আলু-সয়াবিনের তরকারি। সুদীপ্ত জানান, তাঁর ওখানে ২৫ হাজার লোকের খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। সকালে ১০ হাজার, রাতে ১৫ হাজার।
কিন্তু এত লোক কি হাওড়ার মিছিলে এসেছিলেন? কারণ, হাওড়া স্টেশন থেকে গুটিকয়েক মিছিল ছাড়া বেশি লোকজনকে বেরোতে দেখা যায়নি। ওই বিজেপি নেতারই দাবি, সকালে মাত্র ৭৫০ জন খেয়েছেন। পরে বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রেনে অনেকে এসেছিলেন। কিন্তু বেলা ১২টার পরে দেখা যায়, হাতে গোনা কয়েক জনই খাওয়াদাওয়া করছেন। কেটারিং সংস্থার তক্তপোশে পড়ে পাহাড় প্রমাণ ভাত, ১০-১৫ ডেকচি তরকারি। সন্ধ্যাতেও সেই একই চিত্র।
তবে যে নেতারা বললেন, রাতে ১৫ হাজার লোকের খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে? এত খাবার কি তা হলে পুরো নষ্ট হবে? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজেপি নেতা বললেন, ‘‘এত বড় অনুষ্ঠানে খাবার একটু নষ্ট হতেই পারে। তবে এটা ঠিকই যে, রাতে পাঁচ হাজারের বেশি লোক হবে না। কেন এত আয়োজন করা হয়েছিল, জানি না।’’