পাশের বাড়ির গায়ে হেলে পড়েছে ছ’তলা এই বহুতলটি (ডান দিকে)। হাওড়ার নন্দীবাগানে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
প্রায় ছ’মাস হয়ে গেল, এক দিক মাটিতে বসে গিয়ে পাশের বাড়ির উপরে বিপজ্জনক ভাবে হেলে পড়েছে একটি বহুতল। যে কোনও মুহূর্তে সেটি ভেঙে বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে। অথচ সেই খবর জানেই না পুরসভা!
ঘটনাস্থল: হাওড়ার অন্যতম জনবহুল এলাকা বলে পরিচিত, জি টি রোড সংলগ্ন নন্দীবাগান। স্থানীয় সূত্রের খবর, হাওড়া পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত ৩৬৫/৯এ ঠিকানার ওই ছ’তলা বহুতলটি মাসখানেক আগে থেকে ধীরে ধীরে হেলতে শুরু করে। পাঁচতলার কার্নিস ঠেকে যায় মাত্র কয়েক ফুট দূরত্বে তৈরি হওয়া আর একটি বহুতলের গায়ে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত ছ’মাস ধরে এমন ঘটলেও বাড়ির মালিক পুরসভাকে বিন্দুবিসর্গ জানাননি। পুরসভার তরফেও কোনও খোঁজ নেওয়া হয়নি।
মাস চারেক আগে হাওড়া পুরসভারই ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ত্রিপুরা রায় লেনে একটি নির্মীয়মাণ পাঁচতলা বাড়ির নীচের তল সম্পূর্ণ বসে গিয়ে পাশের বাড়িতে হেলে পড়েছিল। ওই ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়। ফাটল ধরে পাশের তিনটি বাড়ির দেওয়ালে। পরে দেখা যায়, মাত্র তিন ফুট চওড়া গলিতে পুর আইনের তোয়াক্কা না করে তৈরি হচ্ছিল ওই বাড়িটি। সেটি শেষমেশ ভেঙে দেয় পুরসভা।
১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ওই ঠিকানায় গিয়ে সম্প্রতি দেখা গেল, জি টি রোডের পাশে চার ফুট চওড়া একটি গলির মধ্যে পরপর তৈরি হয়েছে আট থেকে ন’তলা কয়েকটি বহুতল। সেগুলির মধ্যে থাকা, অন্তত বছর পঁচিশের পুরনো একটি ছ’তলা বাড়ি হেলে পড়েছে পাশের একটি নতুন ছ’তলা বহুতলের উপরে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুরনো বাড়িটিতে দেওয়াল কেটে স্তম্ভ তৈরি করে উপরে একটি ঘর বানানোর পরেই সেই ভার সহ্য করতে না পেরে বাড়িটি হেলে যায়।
যে বাড়ির উপরে ২৫ বছরের পুরনো বহুতলটি হেলে পড়েছে, সেখানকার এক বাসিন্দা কুমার সহানি বলেন, ‘‘ওই বাড়িতে আটটি পরিবারের বাস। তাঁদের ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে রাখা হয়েছে।’’ হেলে পড়া ওই বাড়ির বাসিন্দা এক মহিলার সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি প্রথমে এড়িয়ে যান। পরে বলেন, ‘‘আমি তো দেখিনি বাড়ি হেলে গিয়েছে। আমাদের কোনও সমস্যা নেই।’’
বাড়ি হেলে গেলেও পুরসভাকে খবর দেওয়া হয়নি কেন?
এলাকার প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর অনুপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমি ওই এলাকার ৭৮টি বেআইনি বাড়ির তালিকা পুরসভায় পাঠিয়েছি। তারা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। হেলে পড়া বাড়িটা ভেঙে দেওয়ার জন্য পুরসভাকে চিঠি দেব।’’
হেলে পড়া বহুতলটির অন্যতম অংশীদার রমাকান্ত শেঠ বলেন, ‘‘আমার বাড়ি তো হেলেনি। পাশের বাড়িটিই প্রায় দেড় ফুট বসে গিয়েছে। ওটা তো বেআইনি ভাবে তৈরি। এ সব পুরসভাকে জানিয়ে কী হবে?’’
পুরসভার বিল্ডিং দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা যে হেলে পড়া বাড়িটির খবর রাখেন না, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে পুর কমিশনার বিজিন কৃষ্ণের বক্তব্যে। তিনি প্রথমে বলেন, ‘‘আমি জানি না। খোঁজ নিতে হবে।’’ পরে আবার বলেন, ‘‘বিষয়টি জানতে লোক পাঠিয়েছি।’’