ত্রিধারাকাণ্ডে ধৃতদের জামিনের খবর পৌঁছতেই অনশনমঞ্চে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেল অনশনকারী স্নিগ্ধা হাজরাকে। —নিজস্ব চিত্র।
শুক্রবার দুপুর থেকেই ধর্মতলায় ঢল নেমেছিল জনতার। আন্দোলনকারী ছ’জন জুনিয়র ডাক্তারের অনশনমঞ্চের সামনের বিকেলের জমায়েত অনায়াসে টেক্কা দিয়েছে ত্রিধারা সম্মিলনীর দুর্গাপুজোর ভিড়কে। মঞ্চের সামনে তখন মাইক্রোফোনে আন্দোলনের অন্যতম নেতা দেবাশিস হালদার বক্তৃতা করছেন। ঠিক তখনই এল খবর— ত্রিধারাকাণ্ডে ধৃত ন’জন আন্দোলনকারীকেই অন্তর্বর্তী জামিন দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট।
কয়েক হাজার কণ্ঠে হঠাৎই শোনা গেল হর্ষধ্বনি। থমকে গিয়ে পিছনে তাকালেন বক্তা দেবাশিস। মঞ্চে তখন বিহ্বলতা। দু’হাতে চোখ ঢেকে কান্না আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছেন অন্যতম অনশনকারী স্নিগ্ধা হাজরা। অন্যেরা তাঁকে শান্ত করতে ব্যস্ত। এর পর শুরু হল হাততালি দিয়ে হাই কোর্টের নির্দেশকে স্বাগত জানানোর পালা। হাতে হাত ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার। আরজি কর-কাণ্ডের আন্দোলনপর্বের ধর্মতলার অনশন ১৪১ ঘণ্টার মাথায় সাক্ষী হল এমনই অভিনব দৃশ্যের।
প্রসঙ্গত, ১০ দফা দাবিতে শনিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে ধর্মতলায় আমরণ অনশন শুরু করেন কলকাতার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের ছ’জন জুনিয়র ডাক্তার। স্নিগ্ধা ছাড়াও সেই তালিকায় রয়েছেন তনয়া পাঁজা, সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা, অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়, অর্ণব মুখোপাধ্যায় এবং পুলস্ত্য আচার্য। রবিবার অনশনে যোগ দিয়েছিলেন আরজি করের জুনিয়র চিকিৎসক অনিকেত মাহাতোও। বৃহস্পতিবার রাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় অনশনরত অনিকেতকে আরজি কর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
অন্য দিকে, বুধবার রাতে ত্রিধারার পুজোয় গিয়ে ‘বিচার চাই’ স্লোগান তুলে গ্রেফতার হয়েছিলেন ন’জন আন্দোলনকারী। বৃহস্পতিবার নিম্ন আদালত তাঁদের সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিল। শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্ট ধৃত সুজয় মণ্ডল, উত্তরণ সাহা রায়, কুশল কর, জহর সরকার, সাগ্নিক মুখোপাধ্যায়, নাদিম হাজারি, ঋতব্রত মল্লিক, চন্দ্রচূড় চৌধুরী এবং দৃপ্তমান ঘোষকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেয়। বিচারপতি শম্পা সরকারের ওই নির্দেশ মুহূর্তেই বদলে দিল ধর্মতলার পরিবেশে। অনশনকারী ছ’জন জুনিয়র ডাক্তারের শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের আবহেও মঞ্চে ফুটল হাসি।