ভস্মীভূত: পুড়ে যাওয়া কারখানায় জিনিস উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
পাঁচ হাজার বর্গফুট এলাকা। তার মধ্যেই তিনটি কারখানা। প্রত্যেকটিই ছিল কাঠ ও প্লাইউডে ঠাসা। কারখানার এক দিকে একটি বহু পুরনো ল্যাবরেটরি। অন্য দিকে একটি হিন্দি সংবাদপত্রের দফতর। কারখানার উপরে বসবাস মালিকপক্ষের লোকজনেরই। কারখানার চার দিকে বসতি। তালতলায় পূরণ নাহার অ্যাভিনিউয়ে এমনই এক জায়গায় ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছিল ওই তিনটি কারখানা। এমন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় কী ভাবে ওই কারখানাগুলি চলছিল, সোমবার রাতে আগুন লাগার পর থেকেই সেই প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়েরা। যদিও স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের দাবি, কারখানার সব নথিই বৈধ।
ওই কারখানা তিনটির পাশেই প্রবীণ প্যাথোলজিস্ট সুবীর দত্তের ক্লিনিক। সোমবার রাতেই তিনি অভিযোগ করেছিলেন, চল্লিশ বছর আগে এক বার আগুন লাগার পরেও ওই এলাকাটি নিয়ে কেউ সচেতন হননি। মির্জা গালিব স্ট্রিটে দমকলের সদর দফতর। তার কিছুটা দূরে কলকাতা পুরসভার প্রধান অফিস। দু’টি জায়গা থেকেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল খুব বেশি দূরে নয়। ফলে কারখানার আশপাশের বাসিন্দাদের প্রশ্ন, দমকল কিংবা কলকাতা পুরসভা অফিসের এত কাছাকাছি একটি জায়গার এই বিপজ্জনক অবস্থা কী করে সবার নজর এড়িয়ে গেল?
মঙ্গলবার দেখা যায়, কারখানার পিছনের একটি চারতলা বাড়ির গায়ে জল দিয়ে সেটির দেওয়াল ঠান্ডা করার চেষ্টা করছেন দমকলকর্মীরা। রাতে আগুনের তাপে গলে গিয়েছে বাড়ির পলিথিনের জলের ট্যাঙ্ক। অন্য অনেকগুলি বাড়ির দেওয়ালও আগুনের তাপে তেতে ছিল। সোমবার রাতে ওই সব বাড়ির লোকজনদের নীচে নামিয়ে আনা হয়।
যে বাড়িতে কারখানা, সেটির দোতলায় মালিকপক্ষের বসবাস। ভস্মীভূত কারখানার সামনের রাস্তায় এ দিন বসে ছিলেন তাঁরা। মালিক পক্ষের তিনটি পরিবার। তিনটি কারখানার উপরেই তাঁরা থাকেন। তাঁদের তরফে পুনম গুপ্ত, কৌশিক গুপ্তেরা জানান, আগুন ধরার পরেই তাঁরা নীচে নেমে যান। গুরুত্বপূর্ণ নথি-সহ নগদ টাকা, গয়না সব কিছুই পুড়ে গিয়েছে। তাঁদের অবশ্য দাবি, কারখানা সব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনেই চালানো হত। কলকাতা পুরসভা ওই তিনটি পরিবারকে কম্বল, ত্রিপল দিয়ে সাহায্য করেছে। তাদের বৌবাজারে পুরসভার ‘আশ্রয়’ নামে একটি বাড়িতে রাখা হয়েছে।
সোমবার রাতে আগুন নিয়ন্ত্রণ এলেও এ দিন সকালে কারখানায় ছাইয়ের স্তূপের ভিতরে ধিকিধিকি আগুন দেখা যাচ্ছিল। দমকলকর্মীদের দেখা যায় তাতে জল দিতে। তাঁরা জানান, ওই কারখানাগুলিতে দামি সেগুন কাঠ-সহ প্রচুর আঠার কৌটোও ছিল। কাঠ ও প্লাইয়ের সঙ্গে আঠা মিশে থাকায় প্রায় ১২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও আগুন পুরোপুরি নেভেনি।
দমকলের ডিজি জগমোহন এ দিন বলেন, ‘‘ওই কারখানাগুলির ফরেন্সিক পরীক্ষা করা হচ্ছে। সমস্ত নথিও পরীক্ষা করা হবে। সেগুলি নিয়ে স্থানীয় দমকল অফিসের কাছে কোনও অভিযোগ রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে।’’
কলকাতা পুরসভার ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মৌসুমী দে বলেন, ‘‘সত্তর থেকে আশি বছরের পুরনো কারখানা। সব নথিই রয়েছে। এখন পুরসভা নির্বাচনের আগে নানা লোক উস্কানিমূলক নানা মন্তব্য করছেন।’’