এ বার কলকাতার পর্যটনে গঙ্গাকে পুরোদস্তুর সামিল করার উদ্যোগ।
গঙ্গার পাড়েই কলকাতা। অথচ এই শহরের পর্যটনে গঙ্গা যেন ব্রাত্য। কলকাতার পর্যটনে গঙ্গাকে তেমন ব্যবহার করা হয়নি। পর্যটক ও পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষের এ আফসোস বহু দিনের। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ভারতীয় জাদুঘর, ইডেন গার্ডেন্সের মতো দ্রষ্টব্যের তালিকায় কখনওই নেই গঙ্গা। শহরের বহু মানুষও ছুটির দিনে গঙ্গার পা়ড়ে না গিয়ে শপিং মলে বা মাল্টিপ্লেক্সে সময় কাটান। কেন? অধিকাংশের বক্তব্য মোটামুটি একই: কলকাতার গঙ্গা তাঁদের কাছে খুব একটা আকর্ষক বা উত্তেজক নয়।
আর সেই অভাব পূরণেরই চেষ্টায় এখন রাজ্য পর্যটন দফতর। গঙ্গায় প্রমোদ-তরণী করে এ বার কলকাতা থেকে যাওয়া যাবে থেকে মায়াপুর পর্যন্ত। সেখান থেকে বেলুড়-দক্ষিণেশ্বর হয়ে ফেরা। আবার কেরলের আলেপ্পিতে যেমন হাউসবোটে থাকার বন্দোবস্ত, তেমন ব্যবস্থাও হবে কলকাতার গঙ্গাপাড়ে। সঙ্গে এ বছরের শেষেই গঙ্গায় চালু হবে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস।
শুক্রবার রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব জানান, বহু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কলকাতার পর্যটনে গঙ্গাকে সে ভাবে ব্যবহারই করা হয়নি। এ বার সেই কাজটাই করা হবে বলে জানান মন্ত্রী। এ দিন বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সে সাংবাদিক বৈঠক করেন গৌতমবাবু। সেখানেই বলেন, ‘‘পর্যটকেরা যাতে কলকাতা থেকে জলপথে মায়াপুর-বেলুড়-দক্ষিণেশ্বর যেতে পারেন, তার জন্য অক্টোবরেই চালু হবে প্রমোদ-তরণী।’’
বিদেশের বহু শহরে যে সব নদী ঘিরে পর্যটনের রমরমা, কলকাতার গঙ্গা তথা ভাগীরথীর তুলনায় সে সবের অনেকগুলোই নালা বা খাল। অথচ গঙ্গাকে ঘিরে পর্যটন শুরু থেকেই অবহেলিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হয়েই জানিয়েছিলেন, কলকাতাকে তিনি লন্ডন বানাতে চান। কিন্তু লন্ডনে যাওয়া পর্যটকেরা টেমস-এর তীরে যে ভাবে ভিড় করেন, কলকাতায় আসা পর্যটকদের মধ্যে গঙ্গাকে নিয়ে তেমন উন্মাদনা তৈরি করা হয়নি।
মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতার শাসনকালের প্রথম পাঁচ বছরে গঙ্গা পাড়ের সৌন্দর্যায়ন শুরু হয়েছিল। সেই কাজ অনেকটাই হয়েছে। তৃণমূল দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় ফেরায় গঙ্গাকে কেন্দ্র করে কলকাতার পর্যটনে আরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
রাজ্যের পর্যটন সচিব অজিতরঞ্জন বর্ধন বলেন, ‘‘এই সব পরিকল্পনা কয়েক মাসের মধ্যেই বাস্তবায়িত হবে।’’ পর্যটন দফতরের একটি সূত্রের খবর, আটটি বিলাসবহুল হাউসবোট কেনা হচ্ছে। তারই চারটি আপাতত ভাসবে কলকাতার গঙ্গায়। বাকি যাবে সুন্দরবন এবং দিঘায়।