রূপা চট্টোপাধ্যায়।
রবিবার ছটপুজোর দুপুরে গঙ্গায় স্নান করতে নেমে তলিয়ে মৃত্যু হয়েছিল এক মহিলার। তাঁর পরিচয় জানার পরে সেই মৃত্যু নিয়ে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম রূপা চট্টোপাধ্যায় (৩২)। বাড়ি শিবপুর বাজারের পাশে শিবপুর রোডে। পাশের পাড়ার মন্দিরতলা টেলিফোন এক্সচেঞ্জের কাছে তাঁর শ্বশুরবাড়ি। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলার বাড়ি থেকে একটি চিঠি উদ্ধার করা হয়েছে, যেটিকে সুইসাইড নোট বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ওই গৃহবধূ সম্ভবত মানসিক অবসাদে গঙ্গায় ডুবে আত্মঘাতী হয়েছেন। শিবপুর থানার পুলিশ দেহটি ময়না তদন্তে পাঠিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
রবিবার দুপুর ১টা ১৫ মিনিট নাগাদ ছটপুজো করতে এসে ওই বধূ গঙ্গায় নেমে তলিয়ে যান। প্রায় ৫০০ মিটার দূর থেকে তাঁকে স্থানীয় এক যুবক ও পুলিশের লঞ্চ উদ্ধার করে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানান। এর পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ মৃতার পরিবারের লোকজন শিবপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করতে এলে মহিলার নাম-পরিচয় জানা যায়। পুলিশ জানিয়েছে, ওই বধূর বাড়ির তরফে পুলিশের কাছে একটি চিঠি দেওয়া হয়, যাকে সুইসাইড নোট বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ জানিয়েছে, রূপা নিজের স্বামী, শাশুড়ি ও ননদদের বিরুদ্ধে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন চিঠিতে। এমনকি, তাঁকে পাগল সাজানোর চেষ্টাও করা হয়েছে বলে চিঠিতে লিখেছেন তিনি। তাঁর মা-বাবার কাছ থেকে টাকা নেওয়া এবং তাঁর উপরে দিনের পর দিন মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার করা হত বলেও লিখেছেন ওই বধূ।
কিন্তু কী ভাবে এমন ঘটনা ঘটল? রূপার মা সবিতা গঙ্গোপাধ্যায় সোমবার জানান, কালীপুজোর আগেই শ্বশুরবাড়ি থেকে তাঁর মেয়ে শিবপুর বাজারে তাঁদের কাছে চলে এসেছিলেন। তাঁর ডান হাত ভাঙা ছিল। শ্বশুরবাড়িতে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে মা-বাবার কাছেই থেকে যান তিনি। রবিবার বেলা ১২টা নাগাদ বন্ধুর বাড়িতে ছটপুজোর অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন বলে সেজেগুজে আচমকা বেরিয়ে যান রূপা। তার আগে বাড়ির লোকেদের নিয়ে ছবি তোলেন তিনি। কিন্তু তার পরে বিকেল হয়ে গেলেও রূপা বাড়ি না ফেরায় পুলিশের দ্বারস্থ হয় তাঁর পরিবার। সন্ধ্যায় পরিজনেরা জানতে পারেন, গঙ্গায় ডুবে মারা গিয়েছেন তাঁদের মেয়ে। তবে সোমবার পর্যন্ত রূপার পরিবারের তরফে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে শিবপুর থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি।
২০১০ সালে বিয়ে হয়েছিল রূপার। তাঁর স্বামী পেশায় ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি। তাঁদের বছর দশেকের একটি ছেলে রয়েছে। ওই গৃহবধূর শাশুড়ি এ দিন বলেন, ‘‘বৌমা রোজ প্রচুর ঘুমের ওষুধ খেত। কোনও কথা শুনত না। আমাদের উপরে রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছিল। তার পরে কী ভাবে মৃত্যু হয়েছে, বলতে পারব না।’’