Coronavirus in Kolkata

করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধের ভর্তি নিয়ে হেনস্থা, অভিযুক্ত হাসপাতাল

সূত্রের খবর, জ্বর ও কাশির উপসর্গ নিয়ে সোমবার সকালে সল্টলেকের একটি বেসরকারি করোনা হাসপাতালের বহির্বিভাগে যান ওই বৃদ্ধ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

knkele শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২০ ০২:১৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

দীর্ঘ সাড়ে ছ’ঘণ্টার চূড়ান্ত দুর্ভোগের পরে করোনা পজ়িটিভ বৃদ্ধ সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হলেন ঠিকই। তবে করোনা আক্রান্তকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রক্রিয়া যে এখনও কতটা জটিল এবং রোগীর পক্ষে কতটা অসম্মানের, নিউ টাউনের বাসিন্দা ৬৭ বছরের এক বৃদ্ধের ২৪ ঘণ্টার অভিজ্ঞতাই বলে দিচ্ছে সে কথা। একই সঙ্গে রোগীদের হয়রানি কমাতে সম্প্রতি রাজ্য সরকার যে মৌখিক নির্দেশিকা জারি করেছে, তা লঙ্ঘনেরও অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

Advertisement

সূত্রের খবর, জ্বর ও কাশির উপসর্গ নিয়ে সোমবার সকালে সল্টলেকের একটি বেসরকারি করোনা হাসপাতালের বহির্বিভাগে যান ওই বৃদ্ধ। বহির্বিভাগের চিকিৎসক তাঁকে দেখে করোনা পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিলে তৎক্ষণাৎ নমুনা দিয়ে বাড়ি চলে যান তিনি। বিকেলে বৃদ্ধকে ফোন করে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক জানান, তাঁর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। তিনি যেন ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যান। সেই মতো সন্ধ্যায় দাদা, দুই বন্ধু এবং এক ভাগ্নে আক্রান্তকে নিয়ে সল্টলেক আমরি হাসপাতালে যান।

আক্রান্তের অভিযোগ, বেসরকারি হাসপাতালের প্রবেশপথের সিঁড়িতে পা রাখা মাত্রই রক্ষীরা তাঁদের বাধা দেন। বৃদ্ধের কথায়, ‘‘তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত ছেলের স্বাস্থ্য বিমার সুবিধা নিতে সেখানে ভর্তি হতে চাই, এ কথা শোনা মাত্র আমাকে বলা হয়, শয্যা নেই!’’ গত সপ্তাহেই বেসরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে বৈঠক করে নবান্নের তরফে নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছিল, কত শয্যা খালি রয়েছে, তা হাসপাতালের মূল প্রবেশপথে ‘ডিসপ্লে’ করতে হবে। আক্রান্তের পরিজনেরা তা স্মরণ করিয়ে দিলে দুর্ব্যবহারের মাত্রা বাড়ে বলে অভিযোগ।

Advertisement

এক পরিজনের কথায়, ‘‘বাউন্সারের মতো দেখতে রক্ষীরা এসে বলেন, এটা বেসরকারি হাসপাতাল। এখানে সরকারি হাসপাতালের নিয়ম চলে না!’’ ওই বেসরকারি হাসপাতাল সরকার মনোনীত করোনা হাসপাতাল হওয়ার পরেও এ ধরনের আচরণ কেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে।

প্রশ্ন আরও আছে। বৃদ্ধের কাছ থেকে করোনা পরীক্ষার জন্য পাঁচ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। বিলের বিবরণ অনুযায়ী, পরীক্ষা বাবদ সাড়ে চার হাজার টাকা এবং নমুনা সংগ্রহের জন্য আরও ৫০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহের বৈঠকে নমুনা পরীক্ষার খরচ কমানো নিয়েও মৌখিক নির্দেশ দিয়েছিল নবান্ন। ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, মঙ্গলবার থেকে নমুনা পরীক্ষার খরচ সাড়ে চার হাজার টাকা থেকে কমিয়ে সাড়ে তিন হাজার করা হয়েছে।

বেসরকারি হাসপাতালের বাইরে ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করার পরে রোগীকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে নিয়ে যান পরিজনেরা। সেখানে স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ ছাড়া কিছু করা সম্ভব নয় জানার পরে আক্রান্তের ভাগ্নে স্বাস্থ্য ভবনে ছোটেন। এ দিন আক্রান্তের ভাগ্নে জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য ভবনের এক আধিকারিক জানান, আক্রান্তের নাম এখনও আইসিএমআরের পোর্টালে আপলোড করা হয়নি। তাই তাঁদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। ভাগ্নের কথায়, ‘‘আধিকারিক অনেক কিছু বোঝাচ্ছিলেন। কিন্তু অত কিছু বুঝে কী করব? আমি তো জানি, এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরেও মামাকে ভর্তি করতে পারছি না।’’

স্বাস্থ্য ভবন থেকে ফিরে আইডি হাসপাতালে চলে যান আক্রান্তের ভাগ্নে। রাত ১০টা নাগাদ আইডি চত্বরে আক্রান্ত এবং তাঁর পরিজনদের দিনভর হয়রানির কথা জানার পরে সেখানকার চিকিৎসকেরা তৎপর হয়ে বৃদ্ধকে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করেন। এ দিন বৃদ্ধ বলেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালে যা পরিষেবা পেয়েছি, তাতে আমি খুশি।’’

বৃদ্ধের অভিযোগ প্রসঙ্গে ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, সরকারি নির্দেশ মেনে শয্যার পরিসংখ্যান হাসপাতালের গেটের বাইরে লাগানো রয়েছে। রোগী যখন এসেছিলেন, তখন সত্যিই শয্যা ছিল না বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।

আক্রান্তের বন্ধু রঞ্জিত শূরের বক্তব্য, ডিসপ্লে করার অর্থ, তা যাতে সহজেই রোগী ও তাঁর পরিজনদের চোখে পড়ে। শয্যা সংক্রান্ত সেই ডিসপ্লে থাকলে রক্ষীরা দেখিয়ে দিলেন না কেন? তা হলেই তো বিতর্কের অবসান ঘটে যেত। রঞ্জিতবাবুর কথায়, ‘‘ওই হাসপাতালে প্রতি পদে সরকারি নির্দেশিকা লঙ্ঘন হচ্ছে। রোগীদের মানবাধিকার স্বার্থ রক্ষা করা হচ্ছে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement