প্রতীকী ছবি।
ক্যানসার থেকে সুস্থ হয়ে উঠলেও পরিশ্রমসাধ্য কাজ করতে পারতেন না বছর আটত্রিশের সুরজিৎ মৃধা। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও কাজ জোটাতে না পেরে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন পেশায় ঠিকা শ্রমিক সুরজিৎ। চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল সঞ্চিত টাকাও। স্ত্রী একটি বেসরকারি হাসপাতালে সাফাইকর্মীর কাজ করলেও সংসারে অনটন লেগেই ছিল। অবশেষে ওই যুবককে সাফাইকর্মীর কাজ দিয়ে তাঁর পাশে দাঁড়াল বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতাল।
শুধু সুরজিৎই নন, ক্যানসার থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা বিমল সাহা, রিমা রায়কে নিজেদের নির্মীয়মাণ ক্যানসার হাসপাতালের কাজে নিয়োগ করেছে মেডিকা হাসপাতাল। আজ, ৪ ফেব্রুয়ারি ‘বিশ্ব ক্যানসার দিবস’। তার আগের দিন, বৃহস্পতিবার ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানালেন, নতুন হাসপাতালে যত কর্মী প্রয়োজন, তার ৪০-৫০ শতাংশ তাঁরা নিয়োগ করবেন ক্যানসারজয়ীদের মধ্যে থেকে। তিন জনকে নিয়োগ তারই প্রাথমিক ধাপ।
ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী যেমন শারীরিক কষ্ট পান, তেমনই উদ্বেগে থাকেন পরিজনেরাও। দীর্ঘ রোগভোগের কারণে অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়েন। তাই রোগী ও তাঁদের পরিবারের আর্থিক সংস্থানের ব্যবস্থা করতেই এমন পদক্ষেপ বলে জানাচ্ছেন ওই ক্যানসার হাসপাতালের অধিকর্তা, চিকিৎসক সৌরভ দত্ত। তিনি বলেন, “যিনি ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করেছেন, তিনিই অন্য রোগী ও তাঁর পরিজনের মনের অবস্থা ভাল বুঝবেন। ওঁদের দেখে মানসিক শক্তি পাবেন রোগীরাও।’’ সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পরিষেবা মিললেও ক্যানসারের চিকিৎসায় রোগীদের প্রায় দু’-আড়াই লক্ষ টাকা খরচ হয় বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হওয়া, ভ্যান নিয়ে ঘুরে জিনিস বিক্রি করে সংসার চালানো বিমল সাহার কথায়, “প্রায় দু’লক্ষ টাকা খরচ হয়। হাসপাতালে কেউ খারাপ ব্যবহার করলে কষ্ট হত। এই রোগকে হারাতে মনের জোরই আসল।’’ মেডিকা হাসপাতাল গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান অলোক রায় বলেন, “উন্নত চিকিৎসা দিয়ে রোগীর শারীরিক অবস্থা ঠিক করা যায়। কিন্তু মানবিক দিক থেকে রোগীকে পুনরায় মূল স্রোতে ফিরিয়ে এনে মানসিক স্বস্তি দেওয়াও প্রয়োজন।’’ তাই রোগীদের কোঅর্ডিনেটরের চাকরি পাওয়া রিমা বলছেন, “আমাদের দেখে রোগীরা বুঝবেন, ক্যানসার হওয়া মানে সব কিছু শেষ হয়ে যাওয়া নয়।’’