Hookah Bar

Hookah Bar: মাদক-যোগ শঙ্কাতেই পুলিশি নজরে হুকাবার

পরিস্থিতি এমন নয় যে সব হুকাবারেই খোলাখুলি প্রকাশ্যে ভুরভুর করছে নিষিদ্ধ বস্তুর সুরভি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২১ ০৫:৪১
Share:

প্রতীকী ছবি।

ঠিক যেন রতনে রতন চেনা। সাধক কবিরা বলেন, জীবনে যে যা খুঁজে বেড়াচ্ছে, অভীষ্ট বস্তুটিও তাকে ভিড়ের মধ্যেও খুঁজে নেয়। কলকাতার মাদকসন্ধানী নেশাড়ুদের জন্যও এই তত্ত্ব সত্যি বলে মানেন লালবাজারের গোয়েন্দারা।

কুখ্যাত মহল্লা নয়। কোনও কোনও ঝকঝকে পাঁচতারা, চড়া দরের লাউঞ্জ বা পানশালার তল্লাটেও মিলতে পারে মাদকচক্রের ঠেক। কলকাতার নেশাজীবনের এই ‘অনুচ্চারিত সত্য’ বা ‘ওপেন সিক্রেট’টুকু কার্যত স্বীকার করে নিচ্ছেন পুলিশকর্তারা। অতিমারির কড়াকড়ি বজায় রাখার অভিযানের জেরেই এ যাত্রা খানিক বাধ্য হয়ে ‘রইস নেশাড়ুদের’ও নজরবন্দি করেছে পুলিশ। এবং তাদের নজর এখন হুকাবারগুলির দিকে।

Advertisement

পরিস্থিতি এমন নয় যে সব হুকাবারেই খোলাখুলি প্রকাশ্যে ভুরভুর করছে নিষিদ্ধ বস্তুর সুরভি। বেশ কয়েকটি পানশালা, লাউঞ্জে হুকা মিললেও তারা সরকারি বিধিনিষেধ মানতে মনোযোগী। তবে কিছু ব্যতিক্রম বরাবরই বহাল। এবং এ সব ঠেকে খাঁটি রসিক তাঁর ‘মনের মানুষ’টিকেও খুঁজে পাবেন! মানে নেশাড়ুদের মুশকিল আসানদের দেখা মিলবে। জুতসই দাম পেলে শহরের একটি-দু’টি পাঁচতারা হোটেলের নিশিঠেকেও তারা অনায়াসে হাজির করতে পারত মহার্ঘতম মাদক। গাঁজা, আফিম তো নস্যি! ওই সব তল্লাটে কোক মানে কোকেন। ট্যাক্সি, অ্যাসিড বা স্ট্যাম্প মানে এলএসডি। আইস বা গ্লাস হল ‘ক্রিস্টাল মেথ’ বা মেথামফিট্যামাইন! কোনওটা জিভের তলায় রাখতে হবে, কোনওটা বা তরল! রেস্তদার নেশাড়ু, যাদের সামান্য মদ বা গঞ্জিকায় মন ভরে না তারা কিছু মার্কামারা নাইট ক্লাব বা হুকাবারের ঠেক থেকেও এই প্রাণঘাতী ‘রসদ’ সংগ্রহ করত। করোনাকালে পরিস্থিতিটা কী?

করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের হুমকির আবহে শহরের হোটেল, রেস্তরাঁগুলোকে কড়া নজরে রাখার পদক্ষেপ হিসেবেই হুকাবারগুলোর প্রতি মনোযোগী কলকাতা পুলিশ। বড়সড় মাদকচক্র ফের সক্রিয় হওয়ার আশঙ্কা ছাড়াও হুকাবার পরিচয়ের আড়ালে কোথায় কী চলছে, তা জরিপ করা চলছে। ভবানীপুর এবং প্রগতি ময়দান থানা এলাকায় কয়েকটি হুকাবারে অভিযান চালিয়ে ধরপাকড়ের পরে কয়েক জনের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ মাদকগোছের বস্তু রাখার অভিযোগেই মামলা সাজিয়েছে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া হুকার সামগ্রী ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানোও হয়েছে। তবে এখনও কোনও নিষিদ্ধ বস্তু ব্যবহার করা হচ্ছিল বলে প্রমাণ মেলেনি।

Advertisement

শহরের এক পুলিশকর্তার অবশ্য ব্যাখ্যা, “যে সব হুকাবারে ধরপাকড় হয়েছে, তারা নিয়ম ভেঙে রাত ৮টার সময়সীমার অনেক পরেও (রাত ১১টা) মেহফিল বসিয়েছিল। নাবালকদের হুকা সেবনের অনুমতি দিচ্ছিল। পুরসভার ছাড়পত্রের কাগজে গোলমাল ছিল। বেআইনি ভাবে তামাকগোছের পদার্থ বদ্ধ রেস্তরাঁয় ব্যবহার করা হচ্ছিল।”

জুলাইয়ে পার্ক স্ট্রিটের পাঁচতারায় বিধি ভেঙে উদ্দাম পার্টির জন্য নজিরবিহীন ভাবে ধরপাকড় চালিয়েছে পুলিশ। তবে অভিজ্ঞ মহল জানে, এমন শহরে আগেও ঘটেছে। বছর দুই আগে পার্ক স্ট্রিটে টালিগঞ্জের এক গ্ল্যামারকন্যার আত্মীয়ার মাদকযোগেরও খবর মেলে। তবে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয় বলে পুলিশ সূত্রের খবর। কলকাতায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা হুকাবারেও আগে খদ্দের এবং কর্তৃপক্ষের যৌথ ইন্ধনেই গাঁজা, ভাঙ জাতীয় বস্তুর ধোঁয়াও আস্বাদ করা চলত। তবে প্রকাশ্যে অনেক হুকাবারই এই ধরনের নেশায় মদত দিতে সাহস করে না। ই এম বাইপাস লাগোয়া একটি পানশালার কর্তার কথায়, “ধূমপান সংক্রান্ত আইনে বদ্ধ জায়গায় টেবিলে টেবিলে হুকাসেবন চলতে পারে না। চললে সেখানে তাজা বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে। সেখানে খাবার পরিবেশনেরও নিয়ম নেই। কিন্তু তরুণ প্রজন্মের কাছে হুকার যা জনপ্রিয়তা, তাতে অনেক জায়গাই কিছু ছাড় দেয়।’’ এমনিতে হুকার মশলা তামাকবিহীন হওয়ার কথা। সামান্য নিকোটিন থাকতে পারে। পুলিশ সূত্রের খবর, এ সব নিয়মেরও অনেকেই তোয়াক্কা করেন না। লালবাজারের এক পুলিশকর্তার কথায়, “আগে অনেক কিছুই হাল্কা দুষ্টুমি ভেবে দেখেও দেখতাম না। অতিমারির সময়ে আলাদা পরিস্থিতি। মাদকের পার্টি তো বটেই, সামান্য নিয়মে নড়চড় হলেও এখন সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। ফের কোভিড সংক্রমণ বাড়লে এই সব ঘটনার দিকেই আঙুল উঠবে। আমরা তাই বেশি সতর্ক।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement