প্রতীকী ছবি
রং নয়। তার বদলে গোলাপের পাপড়ি। কিংবা ঝলমলে কাগজের বিস্ফোরণ। হোলির বিকেলে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে অনেকটা এ ভাবেই রঙিন হলেন শহরের বাসিন্দাদের একাংশ। এ দেশে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রীতি ও ঐক্যের সুর অটুট রাখতে এটাই রাস্তা বলে মনে করছেন তাঁরা।
সোমবার বিকেল। স্থান: লেক মসজিদের প্রাঙ্গণ। গত বছর রমজানি ইদের প্রাক্কালে এই মসজিদ চত্বরে স্থানীয় হিন্দু, মুসলিম-সহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষজন জড়ো হয়েছিলেন নিরামিষ এক ইফতারের আসরে। এ বার ঠিক সেখানেই হোলির আসর। এ শহরে আন্তঃধর্ম সম্প্রীতির প্রচারে সক্রিয় একটি মঞ্চ ‘ইন্ডিয়ান প্লুরালিজ়ম ফাউন্ডেশন’ এই আয়োজনের ডাক দিয়েছিল। দেশে বহুত্বের আদর্শ মেলে ধরতেই বছরভর বিভিন্ন ধর্মের মানুষজনকে নিয়ে নানা উদ্যোগে শামিল হয় তারা। সেই উদ্যোগের নাম ‘আমন-শান্তি কি হোলি’।
১৪ বছর ধরে লেক মসজিদের ইমাম মহম্মদ নৌশাদ বলছিলেন, ‘‘ইদের মতো হোলিতেও এ বার বিভিন্ন ভিন্ধর্মী বন্ধুরা মসজিদে আসতে চাওয়ায় আমরা খোলা মনে সাড়া দিয়েছিলাম। গোটা বছরই মসজিদে অনেক অ-মুসলিম আসেন। তাঁরা তাঁদের মতো করে শান্তি খোঁজেন। সন্ধ্যাটা খুব আনন্দে কেটেছে।’’ সেন্ট জ়েভিয়ার্স স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত অঙ্কের শিক্ষক তথা দেশপ্রিয় পার্কের মাতৃমন্দিরের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর বসু এগিয়ে এসেছিলেন এই আসরে। তিনি বললেন, ‘‘আগের বার ইফতারে ওঁরা আমাদের ডেকেছিলেন। হোলিতে আমরাই ফুলের পাপড়ি, মিষ্টি নিয়ে মসজিদে গিয়েছি।’’ এ দেশের মুসলিমদের অনেকেই দোল বা হোলি খেলতে ভালবাসেন। আবার কারও কারও রং মাখায় আপত্তি আছে। সকলের কথা ভেবে তাই ফুলের পাপড়ি দিয়েই দোল খেলার বিষয়টি ঠিক হয়। হাজির হয়েছিলেন এক ঝাঁক কলেজপড়ুয়া ছেলেমেয়ে, বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষও।
বহুত্বের প্রচারের এই উদ্যোগের আহ্বায়ক ওয়াইজ আসলামের কথায়, ‘‘এ দেশে ক্রমশ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশ্বাসের জমি নষ্ট করার চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন ধর্মের মিলন উৎসবটি তার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ।’’ দীপঙ্করবাবুও বলছেন, ‘‘হিন্দুত্বের নামে হিংসা, বিভেদের বিরুদ্ধে সরব হতেই আমাদের শান্তির হোলির চেষ্টা।’’