ক্ষতবিক্ষত হকির মাঠ যেন ভাগের মা

মঙ্গলবার ডুমুরজলার ওই মাঠে গিয়ে দেখা গেল সবুজ ঘাস উধাও। মাঠ ভর্তি কাদা। গর্ত ভরে রয়েছে জমা জলে। চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে বাজির প্যাকেটের প্লাস্টিক, ছোট-বড় পেরেক এবং আর্বজনা।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:১৬
Share:

ভয়াবহ: বাজির বাজার উঠে যাওয়ার পরে হকি খেলার মাঠের করুণ অবস্থা। মঙ্গলবার, হাওড়ার ডুমুরজলায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

হকি খেলার মাঠের বিভিন্ন জায়গায় জেসিবি চালিয়ে খোঁড়া হয়েছিল এক থেকে দেড় ফুটের গর্ত। সেই সব গর্তে বাঁশ পুঁতে তৈরি করা হয়েছিল বাজি বিক্রির স্টল। বাজির বাজার উঠে যাওয়ার পরে হাওড়ার ডুমুরজলার ওই মাঠের ভয়াবহ চেহারা সামনে এসেছে। ঘটনায় ক্ষুব্ধ হাওড়ার হকি খেলোয়াড়েরা। তাঁদের দাবি, মাঠের যা অবস্থা হয়েছে, তাতে অবিলম্বে মাঠ সারাই না করলে খেলা কিংবা অনুশীলন সেখানে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। যদিও বাজি বাজারের পরে হকির মাঠ সারাইয়ের দায় নিতে নারাজ সকলেই।

Advertisement

মঙ্গলবার ডুমুরজলার ওই মাঠে গিয়ে দেখা গেল সবুজ ঘাস উধাও। মাঠ ভর্তি কাদা। গর্ত ভরে রয়েছে জমা জলে। চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে বাজির প্যাকেটের প্লাস্টিক, ছোট-বড় পেরেক এবং আর্বজনা। গোটা মাঠ জুড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বাঁশ-টিনের শ’দুয়েক ফাঁকা স্টল।

হাওড়ার ডুমুরজলা মাঠে বাজি বাজার সোমবার শেষ হয়েছে। গত বছরেও ওই মাঠে বাজি বাজার বসেছিল। তবে তা এ বারের মতো এত বড় কলেবরে হয়নি। ফলে গতবার বাজি বাজারের

Advertisement

প্রভাব ডুমুরজলার ওই মাঠে তেমন ভাবে পড়েনি।

ক্ষুব্ধ হকি খেলোয়াড়েরা এ দিন জানান, গত ২০ বছর ধরে ওই মাঠে হকির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রতি বছর চার থেকে পাঁচ জন খেলোয়াড় রাজ্যস্তরের খেলতেও যান।

ধ্যানচাঁদ হকি ট্রেনিং সেন্টার ওই মাঠে বহু বছর ধরে হকির প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। তাদের বক্তব্য, মাঠ ঠিক করতে লক্ষাধিক টাকার প্রয়োজন। ক্লাবের সেই টাকা নেই। অথচ মাঠের যা অবস্থা তাতে আগামী কয়েক মাস খেলা বন্ধ রাখতে হবে। ক্লাবের সম্পাদক জয়মাসি এক্কা বলেন, ‘‘আজ সকালে মাঠের অবস্থা দেখে কেঁদে ফেলেছি। জানি না কত দিনে খেলা শুরু করা সম্ভব হবে। এই মাঠে মেলা হয়। কয়েক দিনের মধ্যেই সব পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু এ বার কী হবে বুঝতে পারছি না।’’

অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু হতেই প্রশাসনিক সংস্থারা দায় ঝেড়ে ফেলতে চাইছে। মাঠের পূর্বাবস্থা ফেরানোর দায় একে অন্যের উপরে চাপানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে। হকি খেলোয়াড়দের প্রশ্ন, প্রশাসন কমিটি তৈরি করে বাজি বাজার বসানোর অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু ওই মাঠের আগের অবস্থা ফেরাবে কে?

এমন প্রশ্ন উঠতেই প্রশাসনিক স্তরে শুরু হয়েছে চাপান-উতোর। হাওড়া জেলা প্রশাসনের দাবি, মাঠের পূর্বাবস্থা ফেরানোর দায়িত্ব হাওড়া পুরসভার। কারণ তারাই এই অনুমতি দিয়েছিল।

হাওড়ার জেলাশাসক মুক্তা আর্য বলেন, ‘‘বাজি মেলার অনুমতি আমরা দিইনি। পুরসভা দিয়েছে। ওরাই মাঠ ঠিক করে দেবে।’’ যদিও পুরসভা জেলাপ্রশাসনের বক্তব্য খারিজ করে দিয়েছে। হাওড়ার পুর কমিশনার বিজিন কৃষ্ণ বলেন, ‘‘পুরসভা এ ব্যাপারে কিছু জানে না। মাঠ সারানোর দায়িত্ব

আমাদের নয়।’’

হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘মাঠে বাজিমেলা করার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এখন মাঠের যা ক্ষতি হয়েছে তা মেলা কমিটি ঠিক করবে।’’

আবার মাঠের মেরামতির খরচ তাঁদের একার পক্ষেও বহন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ডুমুরজলা বাজি মেলার সম্পাদক সৌমিত্র মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘এমনিতেই বৃষ্টিতে আমাদের বাজি বাজারের ক্ষতি হয়েছে। তার উপরে মাঠ সারানোর খরচ রয়েছে। আমরা আলোচনা করব।

প্রশাসনকেও সাহায্য করতে হবে। না হলে আমাদের একার পক্ষে সবটা সম্ভব নয়।’’

সবুজ মাঠ যেন ভাগের মা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement