Kolkata East West Metro

ইস্ট-ওয়েস্টের কৃতিত্ব মমতাকে দিয়ে হোর্ডিং সল্টলেক জুড়ে, ফের বিতর্ক

১৩ ফেব্রুয়ারি ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো যাত্রা শুরু করেছে কলকাতায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২২:২৯
Share:

এই সেই হোর্ডিং।—নিজস্ব চিত্র।

উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী ডাক পাননি বলে অভিযোগ। তা নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরে চলছিল জোর রাজনৈতিক চাপান-উতোর। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কৃতিত্ব কার, তা নিয়ে বিজেপি-তৃণমূলের মধ্যে শুরু হয়েছিল তুমুল বাগ্‌যুদ্ধ। কংগ্রেস এবং বামেরাও যোগ দিয়েছিল সে তর্কে। সল্টলেক এবং লেকটাউন জুড়ে ছড়িয়ে পড়া এক হোর্ডিং ফের উস্কে দিল সেই বিতর্ক। নতুন মেট্রো-পথের কৃতিত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেওয়া হয়েছে সে সব হোর্ডিঙে। বিজেপি, কংগ্রেস এবং বামেরা একযোগে কটাক্ষ করেছে মুখ্যমন্ত্রীকে।

Advertisement

সল্টলেক এবং লেকটাউনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এবং জনবহুল জায়গায় এই হোর্ডিংগুলো লাগানো হয়েছে। হোর্ডিঙের এক পাশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। আর এক পাশে সদ্য চালু হওয়া ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর রেকের ছবি। মাঝে লেখা ‘‘মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্প পরিকল্পনা, অনুমোদন ও রাজ্য সরকার জমি দিয়ে সহায়তা করার জন্য।’’ তৃণমূলের নাম করে কিন্তু এই হোর্ডিং ছাপানো হয়নি। তলায় লেখা হয়েছে, ‘‘প্রচারে— বিধাননগর নাগরিকবৃন্দ ও বিধাননগর ক্লাব সমন্বয় কমিটি।’’

১৩ ফেব্রুয়ারি ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো যাত্রা শুরু করেছে কলকাতায়। রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল এবং এ রাজ্যের সাংসদ তথা আর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেছেন কলকাতার এই নতুন মেট্রো-পথের। সল্টলেক সেক্টর ফাইভ থেকে হাওড়া পর্যন্ত চলবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো। তবে পুরো কাজ এখনও শেষ হয়নি। তাই সেক্টর ফাইভ থেকে সল্টলেক স্টেডিয়াম পর্যন্ত পরিষেবার সূচনা করা হয় ওই দিন। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ফুলবাগান স্টেশন পর্যন্ত পরিষেবা চালু হয়ে যাবে বলেও জানানো হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: শোভনের ব্যানার দেখে ‘টেনশন হচ্ছে’ ববির, কটাক্ষ দিলীপ ঘোষের

ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর যাত্রার সূচনা অনুষ্ঠানে তাঁকে ডাকা হয়নি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে একটি রেল প্রকল্পের উদ্বোধন হচ্ছে, অথচ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কার্ডে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নেই কেন— সে প্রশ্নও তৃণমূলের তরফে তোলা হয়।

প্রথমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে মুখ খোলেননি। রাজ্যের কয়েকজন মন্ত্রী তোপ দেগেছিলেন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। মুখ্যমন্ত্রীর নাম কার্ডে না রাখার নিন্দা করে এবং মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে দাবি করে কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপি বিরুদ্ধে তাঁরা ‘অসৌজন্যের’ অভিযোগ তুলেছিলেন। পরে মমতা নিজেই মুখ খোলেন। বিধানসভায় ভাষণ দেওয়ার সময়ে তিনি দাবি করেন যে, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর উদ্বোধনে তাঁকে ডাকা হয়নি। এই প্রকল্প তিনিই আদায় করে এনেছিলেন, প্রকল্পের জন্য টাকা জোগাড় করতে চোখের জল পর্যন্ত ফেলতে হয়েছিল— সে দিন এমনও বলেন মুখ্যমন্ত্রী। এমন একটা প্রকল্পের উদ্বোধনে একবার ডাকলও না! বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন: বৌবাজার-শিয়ালদহের মেট্রো সুড়ঙ্গ ১৪ মাসে শেষ করার উদ্যোগ

বিজেপির তরফে প্রথমেই নস্যাৎ করা হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ। রেলকর্তাদের উদ্ধৃত করে দাবি করা হয়েছিল যে, মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ না জানানোর অভিযোগ মিথ্যা। তার পাশাপাশি ‘অসৌজন্যের’ পাল্টা অভিযোগ তোলা হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও। তিনি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন এ রাজ্যে রেলের অনুষ্ঠানে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে যে ডাকা হয়নি— সে কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল বিজেপির তরফ থেকে।

একই কথা মনে করিয়ে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সে দিন আক্রমণ করেছিল কংগ্রেস এবং সিপিএম-ও। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পটি তিনি আদায় করে এনেছিলেন বলে যে দাবি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছিলেন, তাকেও সে দিন নস্যাৎ করে বাম-কংগ্রেস। বামেদের সমর্থনে এবং কংগ্রেসের নেতৃত্বে যে প্রথম ইউপিএ সরকার গঠিত হয়েছিল, সেই সরকারের আমলেই এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়— মনে করিয়ে দেওয়া হয় বাম-কংগ্রেসের তরফে। দেশের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উপস্থিতিতে শিলান্যাস অনুষ্ঠানের ছবিও সে দিন ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়।

বিতর্ক সেখানেই আর থেমে থাকল না। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের কৃতিত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়ে গোটা সল্টলেক এবং লেকটাউনে হোর্ডিং পড়তেই ফের শুরু হয়ে গেল চাপানউতোর। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এ দিন বলেন, ‘‘রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রকল্পের জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করেছিলেন। কোনও সংগঠন সে কথা মনে রেখে যদি হোর্ডিং লাগায়, তাতে আমরা কী করতে পারি!’’

কিন্তু বিজেপির দাবি, কোনও অরাজনৈতিক সংগঠন ওই সব হোর্ডিং লাগায়নি। বেনামে তৃণমূলই হোর্ডিং লাগিয়েছে। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কৃতিত্বে ভাগ বসাতে না পেরে পুরভোটের মুখে তৃণমূল অসহায় বোধ করছে বলে বিজেপি নেতাদের দাবি। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘কেন্দ্রের প্রকল্পের নাম বদলে দিয়ে রাজ্যের নামে চালানো যাঁদের অভ্যাস, তাঁরা যে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কৃতিত্বেও ভাগ বসাতে চাইবেন, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।’’

আর সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের দাবি— ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলা তো অনেক দূরের কথা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই প্রকল্পের বিরোধিতা করেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘সল্টলেকের মানুষ এটা জানেন যে, মেট্রোর জমি অধিগ্রহণ আটকাতে কারা দত্তাবাদে লোক খেপিয়ে রাস্তায় নামিয়েছিল। এখন ওই হোর্ডিং দিয়েও আর সেই পাপস্খালন হবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement