R G Kar Medical College

হুইলচেয়ারেই ১৫ ঘণ্টা কাটল এইচআইভি আক্রান্ত প্রৌঢ়ের

কিশোর ছেলের সামনেই সে দিন হাসপাতালে সারা রাত জেগে কাটাতে হয়েছিল প্রৌঢ়কে।

Advertisement

সৌরভ দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২০ ০২:২৭
Share:

প্রতীকী ছবি

ভর্তি করার জন্য লিখে দিয়েছিলেন চিকিৎসক। কিন্তু এইচআইভি পজিটিভ রোগীকে সরকারি হাসপাতাল কি ভর্তি নেবে? আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অস্থি বিভাগের প্রধান রোগীর পরিবারকে অভয় দিয়ে জানিয়েছিলেন, ভর্তি নেওয়া হবে! কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। প্রায় ১৫ ঘণ্টা ধরে হুইলচেয়ারে বসিয়ে রাখা হল সঙ্কটজনক ওই প্রৌঢ়কে। সারা রাতই ওই ভাবে কাটাতে হল তাঁকে। এ ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে গোপনীয়তা বজায় রাখা আবশ্যক। সেই নিয়মও অবশ্য রক্ষা হল না। ওই প্রৌঢ়ের কথায়, ‘‘সরকারি হাসপাতালে গিয়ে এমন ব্যবহার পাব, ভাবিনি।’’

Advertisement

উত্তর কলকাতার বাসিন্দা ওই প্রৌঢ়ের দুই পায়ে পচন ধরেছে। সেই দগদগে ঘা নিয়ে ডায়াবিটিসের ওই রোগীকে গত সোমবার আর জি করের বহির্বিভাগে দেখাতে নিয়ে আসেন তাঁর পরিজনেরা। সম্প্রতি প্রৌঢ়ের রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে এইচআইভি পজিটিভ ধরা পড়েছে। তাই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি নেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন পরিজনেরা। প্রৌঢ়ের এক আত্মীয় জানান, অস্থি বিভাগের প্রধান, চিকিৎসক সন্দীপ রায় তাঁদের এই বলে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, এইচআইভি পজিটিভ বলে রোগী চিকিৎসা পাবেন না, তা নয়। এর পরে বিকেল চারটে নাগাদ ভর্তির টিকিট নিয়ে আর জি কর হাসপাতালের ট্রমা কেয়ারে প্রৌঢ়কে ড্রেসিংয়ের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা জানান, ড্রেসিংয়ের পরে রোগীকে ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। পরিজনেদের এক জনকে হাসপাতালে থাকতে বলে বাকিদের বাড়ি চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন সেখানকার এক চিকিৎসক।

কিন্তু প্রৌঢ়ের রিপোর্টে এইচআইভি পজিটিভ লেখাটি চোখে পড়তেই হাসপাতালের কর্মীদের আচরণ বদলে যায় বলে অভিযোগ। বাড়ি থেকে একটি হুইলচেয়ারে প্রৌঢ়কে আনা হয়েছিল। সেই হুইলচেয়ারেই বিকেল ৪টে থেকে পরের দিন সকাল ৭টা পর্যন্ত তাঁকে বসিয়ে রাখা হয় বলে জানিয়েছেন তাঁর ছেলে। ওই রোগীর কথায়, ‘‘আমাকে বলা হল, সবার শেষে মাইনর ওটি রুমে আমার ড্রেসিং করা হবে। কারণ, আমার পরে আর কারও ড্রেসিং করা যাবে না।’’ সকলের শেষে প্রৌঢ় সুযোগ পান ১৫ ঘণ্টা পরে! সকাল ৭টা নাগাদ ইমার্জেন্সি অবজ়ারভেশন ওয়ার্ডের ট্রলি বেডে রোগীকে স্থানান্তরিত করা হয়। সেই প্রথম হুইলচেয়ার ছেড়ে বিছানায় শোয়ার সুযোগ পান তিনি।

Advertisement

তবে ঘুমোতে পারেননি। কারণ, ট্রলিটি যে জায়গায় রাখা ছিল, সেটি খুবই অপরিচ্ছন্ন। শয্যার পাশে ঝুল, নোংরা দেখিয়ে রোগীর এক পরিজন বলেছিলেন, ‘‘সংক্রামক ব্যাধির রোগীকে তো পরিষ্কার জায়গায় রাখা উচিত। এতে তো পায়ের সংক্রমণ আরও বেড়ে যাবে!’’

কিশোর ছেলের সামনেই সে দিন হাসপাতালে সারা রাত জেগে কাটাতে হয়েছিল প্রৌঢ়কে। বললেন, ‘‘সারা রাত চুপ করে চেয়ারে বসে ছিলাম। ছেলের সামনেই আমার রোগ নিয়ে কথা বলছিলেন হাসপাতালের লোকজন।’’ আরও অভিযোগ, ইমার্জেন্সি অবজ়ারভেশন ওয়ার্ডে যে নার্স ওষুধ দিতে আসতেন, প্রৌঢ় হাত বাড়ানো সত্ত্বেও সেই ওষুধ তিনি বিছানায় ছুড়ে দিতেন। প্রৌঢ় বললেন, ‘‘আমার রোগের তো কোনও গোপনীয়তা রইল না। ছেলেকে সকলে জিজ্ঞাসা করছিল, আমার কী হয়েছে? এ সব দেখে কোন বাবার ভাল লাগে!’’ রোগীর পরিবার সূত্রের খবর, অবশেষে আগামী কাল, রবিবার অস্ত্রোপচারের তারিখ পড়েছে।

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যাল বলেন, ‘‘অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement