বিতর্ক: দক্ষিণেশ্বর ও বরাহনগর মেট্রো স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে এই নামফলক নিয়েই উঠেছে অভিযোগ। —নিজস্ব চিত্র।
কলকাতা মেট্রোয় নবতম স্টেশন হিসেবে সংযোজনের অপেক্ষায় থাকা বরাহনগর এবং দক্ষিণেশ্বরে কি ভাষা হিসেবে বাংলা ব্রাত্য হতে চলেছে? ওই দুই মেট্রো স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে পা রাখলে আপাতদৃষ্টিতে তেমনটাই মনে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ওই দুই মেট্রো স্টেশনে আপ এবং ডাউন প্ল্যাটফর্মে গন্তব্য হিসেবে যে ভাবে স্টেশনের নাম লেখা হয়েছে, তাতে বাংলাকে অবহেলার প্রবণতাই চোখে পড়ছে বলে অভিযোগ। দু’টি স্টেশন মিলিয়ে মোট আটটি বোর্ডে দেখা যাচ্ছে, হিন্দিতে যতটা বড় হরফে বরাহনগর বা দক্ষিণেশ্বর লেখা হয়েছে তার অর্ধেকেরও কম মাপের হরফে বাংলা এবং ইংরেজিতে নাম রয়েছে। তার উপরে হিন্দি হরফের পশ্চাৎপটে গাঢ় নীল রঙ ব্যবহার করায় সেটি যতটা চোখে পড়ছে, তুলনায় সাদা পশ্চাৎপটে বাংলা বা ইংরেজি হরফের নাম অনেকটাই ম্লান বলে অভিযোগ তুলেছেন এ রাজ্যের রেলপ্রেমীদের একটি বড় অংশ।
তবে প্রবেশপথে একই মাপের হরফে তিন ভাষায় স্টেশনের নাম লেখা হয়েছে দক্ষিণেশ্বরে। ওই কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি বরাহনগরে। দু’টি স্টেশন এবং প্ল্যাটফর্মে অন্যান্য দিক নির্দেশ চিহ্ন পর্যায়ক্রমে বাংলা, হিন্দি এবং ইংরেজীতে মোটামুটি একই মাপের হরফে লেখা হয়েছে। তবে আপত্তি উঠেছে প্ল্যাটফর্মের বোর্ডে হিন্দির আধিপত্য বেশি থাকায়। এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন রেলওয়ে ফ্যান ক্লাবের সদস্য এবং রেলপ্রেমী সংগঠনের সদস্যরা নিজেদের ক্ষোভ গোপন করেননি। একটি রেলপ্রেমী সংগঠনের সদস্য, অর্কোপল সরকার বলেন, ‘‘ভাষা নিয়ে জবরদস্তি মেনে নেওয়া যায় না। স্টেশনের নামকরণে স্থানীয় ভাষার পরে অন্য ভাষা গুরুত্ব পাওয়া উচিত। যে ভাবে নাম লেখা হয়েছে, তাতে হিন্দিটাই বেশি করে চোখে পড়ছে।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, মেট্রোর ডিজিটাল বোর্ডেও প্রায়ই বাংলার আগে হিন্দি এবং ইংরেজি ঠাঁই পায়। পেশায় রেলের সামগ্রী নির্মাণকারী একটি বেসরকারি সংস্থার আধিকারিক কৌস্তুভ চৌধুরী একাধিক রেলওয়ে ফ্যান ক্লাবের সদস্য। তাঁর কথায়, ‘‘নির্মীয়মাণ স্টেশন দেখতে গিয়ে বিষয়টি চোখে পড়েছে। যে ভাবে প্ল্যাটফর্মে হিন্দিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, তা প্রায় জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার শামিল।’’ রেলপ্রেমী একাধিক সংগঠনের সদস্য রুদ্রনীল চৌধুরীর কথায়, ‘‘রেল সারা ভারত জুড়ে নানা ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষকে জুড়ে রেখেছে। আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যকে অস্বীকার করা মানে দেশের সাংস্কৃতিক বহুত্বকে অস্বীকার করা। সামাজিক মাধ্যমেও এ নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু রেল কর্তারা বিষয়টি অনুধাবন করতে চাননি বলে মনে হচ্ছে।’’
নোয়াপাড়া থেকে দক্ষিণেশ্বর মেট্রো পথের ওই দুই স্টেশনে একেবারে অন্তিম পর্বের সাজসজ্জার কাজ চলছে। সব ঠিক থাকলে চলতি মাসের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে ওই পথে পরিষেবা চালু হতে পারে। আগামী সপ্তাহেই ইঞ্জিন ছুটিয়ে ওই পথে পরীক্ষানিরীক্ষা হতে পারে বলে খবর। স্থানীয় বৈশিষ্ট্যের কথা মাথায় রেখে দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে তৈরি হয়েছে সেখানকার স্টেশন। পাশাপাশি, বরাহনগর মেট্রো স্টেশনেও বিপুল সংখ্যক যাত্রীর প্রয়োজনের কথা ভেবে চলাফেরার প্রশস্ত পরিসর তৈরি হয়েছে। লোকশিল্পের বিভিন্ন কাজ দেওয়ালে ব্লকের মতো করে বসানো হয়েছে। কলকাতা মেট্রোর তত্ত্বাবধানেই ওই কাজ হচ্ছে বলে সূত্রের খবর।
নোয়াপাড়া থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত নতুন মেট্রোপথকে গেরুয়া এবং হলুদের মিশেলে তৈরি একটি রঙে রাঙানো হয়েছে। সূত্রের খবর, সম্প্রতি ভারতীয় রেলের কোচ এবং বিভিন্ন ভবনে ওই রং করা শুরু হয়েছে। যদিও কলকাতার অন্যান্য মেট্রোয় এর আগে ছাই রং দেখা গিয়েছে। মেট্রো কর্তারা অবশ্য এ নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে চাননি। এক কর্তা জানান, রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড নির্মাণের কাজ করেছে। ফলে কী ভাবে ওই ঘটনা ঘটেছে তা বলা মুশকিল। তবে, এ সব ক্ষেত্রে রেলের বিধি মেনে আঞ্চলিক ভাষা ছাড়াও উপযুক্ত গুরুত্ব দিয়ে অন্য দুই ভাষায় প্রয়োজনীয় নির্দেশ লেখা হচ্ছে বলে তাঁর দাবি। মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যদি এমন ঘটে থাকে, তা হলে খতিয়ে দেখা হবে। তা ছাড়া, স্টেশনের এখনকার সাজসজ্জাই চূড়ান্ত বলে ধরে নেওয়া ঠিক নয়।’’