heritage

KMC Election 2021: ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রেখে কি শহরটাকে বাড়ানো যেত না!

মনখারাপ করে চোখের সামনে পাড়ার সব বাংলোগুলোকে একে একে মাটিতে মিশে যেতে দেখে। সেখানে মাথা তুলছে সুউচ্চ আবাসন সংস্কৃতি।

Advertisement

শ্রাবণী সেন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:৩৯
Share:

ফাইল চিত্র।

ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রেখে কি শহরটাকে বাড়ানো যেত না!

Advertisement

সে অনেক দিন আগের কথা। এক ঘোর বর্ষার রাতে মিন্টো পার্কের একটি নার্সিংহোমে আমার জন্ম হয়েছিল। শুনেছি, সেই পথে এমন জল জমেছিল যে, বাবাকে অনেক কষ্টে রিকশা জোগাড় করে নার্সিংহোমে পৌঁছতে হয়েছিল। এর পরে পেরিয়ে গিয়েছে অনেকগুলো বছর। কিন্তু ওই এলাকায় এখনও একই রয়ে গিয়েছে জল জমার সেই সমস্যা। একটু বৃষ্টি হলেই এক হাঁটু জল! ঘর আঁকড়ে থাকা আমাকেও নাড়া দেয় এই ভেবে যে, একটা রাজধানী শহর কিছু অনিয়মিত পরিষেবার জন্য কী ভাবে পিছিয়ে থাকে!

মনে মনে প্রশ্ন করি, এই পরিস্থিতি বদলাতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে তৈরি উন্নত পরিকাঠামো কি সত্যিই জলে গিয়েছে? নইলে গোটা শহরে নিকাশির সমস্যা কেন? এমনিতেই তো রাস্তার অবস্থা বেহাল। তার মধ্যে বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের এই অংশের জমা জল সরতে অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়।

Advertisement

শৈশবে পরিষেবাগত সমস্যা হয়তো ছিল অনেক, তবু জীবনটা রঙিন ছিল। খেলা, গান, নাটক নিয়ে হইচই করেই কেটে যেত স্বপ্নের দিনগুলো। আর পড়াশোনা? সেটা আমার দিদি করত, আমার ভাগেরটাও। মায়ের শাড়ি টাঙিয়ে মঞ্চ বাঁধতাম। তাতে আবাসনের সবাই অংশগ্রহণ করত। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরে চলত সেই যৌথ পরিবারের ঘুগনি খাওয়া। আহা! সেই স্বাদটা আর পাই না।

১৯৭৬ সালে চলে আসি বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের ‘সপ্তপর্ণী’ আবাসনে। তখনও সেখানে সবাই আসেননি। কয়েকটি পরিবার মাত্র। এখন প্রায় ১৭৫টি পরিবার থাকে এখানে। সারা রাস্তা জুড়ে তখন বড় বড় বাংলো বাড়ি। প্রতিটি বাড়ির সামনে সাজানো বাগান। ছবির মতো সবুজ এলাকায় শুরু হয়েছিল আমাদের জীবন। সপ্তপর্ণীতে শুরু হল প্রথম দুর্গাপুজো। নাটক করছি, গান গাইছি, সে কী উন্মাদনা। এখানেই আমার প্রথম মঞ্চে গান গাওয়া। অনুষ্ঠানের থেকেও মহড়ার দিনগুলো আরও মজায় ভরে থাকত। সঙ্গে থাকত নানা ধরনের খেলা। কুমিরডাঙা, ক্রিকেট, হকি― সব। লাঠি দিয়েই হকি স্টিকের কাজ চালাতাম। ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে খেলা হত। কলকাতার পাঠভবনের ছাত্রী। স্কুলে দেখেছি, পড়াশোনার সঙ্গে গান, নাচ, নাটক, সাহিত্যসভা আমাদের ঘিরে থাকত। কিছু অসাধারণ শিক্ষক-শিক্ষিকাকে পেয়েছিলাম। তাঁদের আমার প্রণাম। স্কুলে আসত চন্দ্রপুলি, শনপাপড়িওয়ালা ও আরও কত কী! সেই সময়ে ডাকটিকিট আর দেশলাই বাক্সের উপরের ছবি জমানোটা ছিল আমাদের শখ।

সেই শৈশবে না দেখলেও মায়ের কাছে শুনেছি, হোসপাইপ দিয়ে শহরের রাস্তা-গাছ ধোয়া হত। সুব্রত মুখোপাধ্যায় মেয়র থাকাকালীন সেটা অল্প দিনের জন্য শুরু হয়েছিল। এখন কি আবার শুরু করা যায় না? আমার আরও একটা দাবি, ফিরে আসুক লাল রঙের দোতলা বাস। আবার ওই বাসে চড়ে শহর ঘুরতে চাই। অভিযোগ রয়েছে আবর্জনা নিয়ে। শুনতে পাই, জঞ্জাল সাফাইয়ের পরিষেবা অনেক বেড়েছে, নতুন নতুন যন্ত্র বসছে। কিন্তু শহরের পথেঘাটে চলতে-ফিরতে তা হলে স্তূপীকৃত জঞ্জাল পড়ে থাকতে দেখি কেন? এটাও ঠিক কথা যে, আমাদের অনেকেই এ বিষয়ে অসচেতন। তারই পরিণাম এটি। যদিও আমাদের বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের দিকে মানুষ সচেতন থাকায় এই সমস্যাটা নেই।

খুব মনখারাপ করে চোখের সামনে পাড়ার সব বাংলোগুলোকে একে একে মাটিতে মিশে যেতে দেখে। সেখানে মাথা তুলছে সুউচ্চ আবাসন সংস্কৃতি। বদলে যাচ্ছে রাস্তাঘাটের চেহারা। ধ্বংস হচ্ছে সবুজ। একটা কথা মনে হয়, শহরের ঐতিহ্যশালী এবং বাংলো এলাকা চিহ্নিত করে সেগুলোকে কি প্রোমোটারির থাবার বাইরে রাখা যেত না? তা হলে তো জনবসতি বৃদ্ধির জন্য শহরটার নিজস্ব চরিত্র হারিয়ে যেত না।

আরও একটা বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করব। আমাদের এই আবাসনের বেশির ভাগ বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব। অথচ ছোটখাটো বা নিয়মিত চিকিৎসার জন্য ডাক্তার কাছেপিঠে নেই। এর ফলে এখানে খুব সমস্যা হয়। শহরের অন্যত্রও হয়তো এই সমস্যা থাকতে পারে। এই নিয়ে পুলিশ, পুরসভা যদি গুরুত্ব দিয়ে ভাবে, একটা সমাধানসূত্র বেরোতে পারে।

সঙ্গীতশিল্পী

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement