কুয়াশা এতটাই ছিল যে, কলকাতায় নামতে আসা আটটি বিমানকে অন্যত্র উড়ে যেতে হয়। ফাইল চিত্র।
হাত চারেক দূরের জিনিসও ঠাহর করা যাচ্ছিল না। সোমবার সকালে এমনই ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায় কলকাতা। কুয়াশা এতটাই ছিল যে, কলকাতায় নামতে আসা আটটি বিমানকে অন্যত্র উড়ে যেতে হয়। একটি বিমান শহরের আকাশে প্রায় দেড় ঘণ্টা চক্কর কাটার পরেও নামতে পারেনি।
কুয়াশার জেরে ব্যাহত হয় শহরতলির ট্রেন চলাচলও। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের প্রায় সব ট্রেন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে এক-দেড় ঘণ্টা দেরিতে চলেছে। ভোর ৫টার আগেই হাওড়া থেকে অধিকাংশ ট্রেন নির্ধারিত সময়ের ১৫ থেকে ২০ মিনিট দেরিতে ছাড়ে। সিগন্যাল দেখতে না পাওয়ার সমস্যার কারণে ধীর গতিতে চলেছে ট্রেন। সকালে ব্ল্যাক ডায়মন্ড, শতাব্দী, অগ্নিবীণা, কোলফিল্ড এক্সপ্রেসের মতো কিছু ট্রেন দেরিতে পৌঁছয়। শিয়ালদহ উত্তর, মেন ও দক্ষিণ শাখাতেও শহরতলির ট্রেন দেরিতে চলেছে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর-শালিমার, পাঁশকুড়া-হলদিয়া, খড়্গপুর-ভদ্রক ও রৌরকেলা শাখাতেও ভোর সাড়ে ৫টা থেকে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। লোকাল ট্রেন পরিষেবা সকাল ১০টার পরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এ দিন ভোর ৪টের পর থেকে কুয়াশায় ঢাকতে শুরু করে রানওয়ে। কুয়াশার মধ্যেও যন্ত্রের সাহায্য নিয়ে নির্বিঘ্নে নামার জন্য ইনস্ট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস) রয়েছে শহরে। দৃশ্যমানতা কমে ৫০ মিটার হলেও সেই ব্যবস্থায় বিমান নামতে পারে। তবে তার জন্য সংশ্লিষ্ট পাইলটের প্রশিক্ষণ থাকতে হয়। বিমানেও সেই সংক্রান্ত যন্ত্র থাকতে হয়। সূত্রের খবর, ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ দৃশ্যমানতা ছিল ৫০০ মিটারের কাছাকাছি। তখন দিল্লি থেকে আসা ইন্ডিগোর একটি উড়ান নামতে না পেরে ভুবনেশ্বরে চলে যায়। তবে ৫টা বাজার তিন মিনিট আগে একটি বেসরকারি সংস্থার বিমান কলকাতা থেকে উড়তে পারে। আবার ৫টা ৩ মিনিটে এমনই এক বেসরকারি সংস্থার নিজস্ব বিমান মুম্বই থেকে এসে শহরে নামে। কিন্তু তার পরে আরও ঘন হয় কুয়াশা। আমদাবাদগামী ইন্ডিগোর উড়ান খানিকটা গড়িয়ে যাওয়ার পরেও আবার ফিরে আসে সাড়ে ৫টায়। গো এয়ারের একটি মুম্বইগামী উড়ানও একই ভাবে রওনা দিয়ে ফিরে আসে। সকাল ৬টার পর থেকে দৃশ্যমানতা ২৫ মিটারের কাছাকাছি নেমে যায় বলে বিমানবন্দরের একটি সূত্র জানিয়েছে। পুণে থেকে গো এয়ারের উড়ান কুয়াশায় কিছুই দেখতে না পাওয়ায় চলে যায় রাঁচীতে। সকাল ৭টায় একই ভাবে এয়ার এশিয়া ইন্ডিয়ার উড়ান দিল্লি থেকে এসে রাঁচী চলে যায়।
সকাল ৬টা নাগাদ বেঙ্গালুরু থেকে ইন্ডিগোর একটি উড়ান শহরের মাথায় চক্কর কাটতে শুরু করে। এটিসি-কে পাইলট জানান, আকাশ পরিষ্কার হওয়া পর্যন্ত তিনি চক্কর কাটবেন। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, প্রায় এক ঘণ্টা ৩৫ মিনিট চক্কর কাটার পরেও আকাশ পরিষ্কার না হওয়ায় জ্বালানির অভাবে সেটি রাঁচী চলে যায়। সমস্যা মেটেনি সকাল ৮টার পরেও। ইন্ডিগোর দিল্লি-কলকাতা, গো এয়ারের হায়দরাবাদ-কলকাতা এবং এয়ার ইন্ডিয়ার মুম্বই-কলকাতা উড়ান গুয়াহাটি ও ভুবনেশ্বরে উড়ে যায়। সাড়ে ৮টার পর থেকে পরিষ্কার হতে শুরু করে আকাশ। ৮টা ৩৭ মিনিটে হায়দরাবাদ থেকে ইন্ডিগোর উড়ান প্রথম নেমে আসে শহরে।