প্রতীকী চিত্র।
রাজ্য সরকারের নয়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ১ জুলাই থেকে সরকারি অফিসে ২৫ শতাংশ কর্মী নিয়ে কাজ শুরু করা যাবে। যা শোনার পরে বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা দাবি তুলেছেন, স্কুলেও নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষকের হাজিরার সরকারি নির্দেশিকা জারি করা হোক। তাঁদের বক্তব্য, মিড-ডে মিল বিতরণ-সহ স্কুলের নানা রকম কাজে শিক্ষকদের প্রয়োজন হয়।
করোনা অতিমারির জেরে পড়ুয়াদের স্কুলে যাওয়া এখন বন্ধ। প্রধান শিক্ষকদের অনেকেই জানালেন, পড়ুয়ারা স্কুলে না এলেও মিড-ডে মিলের সামগ্রী থেকে শুরু করে ‘সবুজ সাথী’, ‘কন্যাশ্রী’, ‘ঐক্যশ্রী’, ‘শিক্ষাশ্রী’র মতো সরকারি প্রকল্পের কাজ স্কুলে চলছে। সেই সমস্ত কাজের জন্য স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পাশাপাশি কিছু শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীকেও দরকার হয়। কারণ, ডেটা এন্ট্রি-সহ নানা রকম কাজ থাকে। কিন্তু এ বিষয়ে শিক্ষা দফতরের কোনও নির্দেশিকা না থাকায় শিক্ষকদের অনেকেই স্কুলে আসতে চাইছেন না।
প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’-এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি বললেন, “সরকারি নির্দেশিকা না-থাকায় অনিচ্ছুক শিক্ষকদের স্কুলে আনতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। জরুরি কোনও প্রয়োজনে স্কুলে ডেকে পাঠানো হলে তাঁরা অনেকেই বলছেন, সরকার তো স্কুলে যাওয়ার কোনও নির্দেশ দেয়নি। তা হলে কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে কেন স্কুলে যাব? বহু অনুরোধে কেউ কেউ হয়তো আসতে রাজি হচ্ছেন। সেই কারণে প্রধান শিক্ষকদের উপরে বিপুল পরিমাণ কাজের বোঝা চেপে যাচ্ছে। প্রধান শিক্ষকদের তৈরি করা রস্টার অনুযায়ী শিক্ষকেরা যাতে স্কুলে আসেন, তার জন্য অতি দ্রুত নির্দেশিকা জারি করুক শিক্ষা দফতর।”
প্রধান শিক্ষকদের একাংশের মতে, এত দিন গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় শিক্ষকেরা কী ভাবে স্কুলে আসবেন, সেই প্রশ্নও উঠছিল। কিন্তু পয়লা জুলাই থেকে সরকারি ও বেসরকারি বাস এবং ফেরি চালু হয়ে গেলে সেই অসুবিধা আর থাকবে না। প্রধান শিক্ষকদের অনুরোধ, যাঁরা বাসে করে স্কুলে আসতে পারবেন, তাঁদের যেন আসতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গেই তাঁদের দাবি, জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের জন্য যে সমস্ত বিশেষ ট্রেন চালানো হচ্ছে, তাতে শিক্ষকদেরও ওঠার অনুমতি দেওয়া হোক। তা হলে স্কুলে আসার ক্ষেত্রে তাঁদের কোনও অসুবিধা থাকবে না।
‘পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক নবকুমার কর্মকারের মতে, শুধু ‘কন্যাশ্রী’ বা ‘শিক্ষাশ্রী’র মতো সরকারি প্রকল্পের কাজই নয়, সামনেই রয়েছে একাদশ থেকে দ্বাদশে পড়ুয়াদের ভর্তি প্রক্রিয়ার কাজও। ওই সমস্ত কাজ করার জন্য প্রধান শিক্ষকদের পাশাপাশি নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদেরও স্কুলে আসা প্রয়োজন। নবকুমারবাবু বললেন, “শিক্ষকদের একটি অংশ অবশ্যই প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন। তবে অনেকেই সরকারি নির্দেশিকা না-থাকার অজুহাত দেখিয়ে স্কুলে আসছেন না। তাই যে সমস্ত শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীর পক্ষে স্কুলে আসার সুযোগ রয়েছে, অবিলম্বে তাঁদের রস্টার অনুযায়ী স্কুলে আসতে নির্দেশ দেওয়া হোক শিক্ষা দফতরের তরফে, অথবা ১ জুলাই থেকে সরকারি অফিস যে নিয়মে চলবে, সেই নিয়ম স্কুলগুলির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হোক।”