বাবার পথে হেঁটেই ভাষণের ক্যাসেটের দোকান

ভেজা ক্যাসেট গায়ের পোশাকে মুছে নিয়ে বললেন, ‘‘এতে মমতার বক্তৃতা রয়েছে। দিদি ২১-এর মঞ্চে এত বছর যা বলেছেন, সবই মিলবে এই এক ক্যাসেটেই!’’

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৮ ০০:৫৩
Share:

বৃষ্টিভেজা পথেই সিডির পসরা। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।

মঞ্চে তখন কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র আক্রমণে ব্যস্ত তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ‘বাক্যবোমা’ হাততালি হয়ে ফেটে পড়ছে সামনের জনস্রোতে। মাঝে মধ্যেই উঠছে হাততালির ঢেউ! তার মধ্যেই নেত্রীর গর্জন ছাপিয়ে মাঝে মাঝে কানে আসছে একটি কণ্ঠস্বর! কাকভেজা অবস্থায় এক ব্যক্তি চেঁচিয়ে চলেছেন, ‘‘নরমে-গরমে মমতা! দিদির বাক্য, আপনার ভাগ্য!’’

Advertisement

ভিড় ঠেলে বেরিয়ে আসা কেউ কেউ আটকে যাচ্ছেন তাঁর কাছে পৌঁছে। দেখা গেল, সিডি ক্যাসেট বিক্রি করছেন ওই ব্যক্তি। বৃষ্টিভেজা রাস্তাতেই ক্যাসেটের পসরা সাজিয়ে বসেছেন তিনি। ভেজা ক্যাসেট গায়ের পোশাকে মুছে নিয়ে বললেন, ‘‘এতে মমতার বক্তৃতা রয়েছে। দিদি ২১-এর মঞ্চে এত বছর যা বলেছেন, সবই মিলবে এই এক ক্যাসেটেই!’’ ক্যাসেটের দাম জানিয়ে তাঁর দাবি, ‘‘শুধু কথা নয়, মিউজিক দিয়ে দিদিকে নিয়ে তৈরি গানও রয়েছে এতে। চালিয়ে দিলে মনে হবে, দিদি আপনার ঘরেই রয়েছেন।’’

হঠাৎ বক্তৃতা বিক্রি কেন? মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা রনি দে নামে ওই ব্যক্তি জানালেন, প্রতি বছরই ২১ জুলাই ‘মমতা-ক্যাসেট’ বিক্রি করতে আসেন কলকাতায়। তাঁর কথায়, ‘‘বাবা পান্নালাল দে ছিলেন মমতার ভক্ত। তিনিই এক দিন মমতার বক্তৃতা রেকর্ড করে ক্যাসেট করার পরিকল্পনা করেন। তার পর থেকে ২১ জুলাইয়ের মঞ্চের সামনে প্রতি বার বাবা ক্যাসেট বিক্রি করতে আসতেন। বাবা এখন নেই, তাই আমিই আসি।’’ এ বার রনির সঙ্গে এসেছেন তাঁর বন্ধু প্রলয় চক্রবর্তী। তিনি বললেন, ‘‘জেঠু বেঁচে থাকাকালীন টেপ রেকর্ডার কিনেছিলেন। সভা থাকলেই আমাদের হাতে রেকর্ডার দিয়ে পাঠিয়ে দিতেন। আমরা রেকর্ড করে নিয়ে গেলে খাওয়াতেন। আজ সেরকম কাজ নেই, তাই রনির সঙ্গে চলে এলাম!’’

Advertisement

মধ্যমগ্রামেই ক্যাসেটের দোকান রনিদের। জানালেন, সে ব্যবসা এখন আর চলে না। তবু বাবার করা দোকান রেখে দিয়েছেন। ২১-এর সভায় মমতার বক্তৃতা ভাল বিক্রি হয়। তাই এসেছেন। ক’টা ক্যাসেট বিক্রি হল? রনি জানান, ২০০টা এনেছিলেন। বেলা দেড়টা পর্যন্ত মাত্র ৩০টা বিক্রি হয়েছে। হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘বৃষ্টিতে দোকান পাততেই তো পারলাম না। যে খবরের কাগজ পেতে বসেছিলাম সেটাও ভিজে গিয়েছে।’’

ব্যবসা না জমুক, এ বারও ভাষণ রেকর্ড করে নিয়েছেন রনিরা। ইচ্ছে, সব রেকর্ডিং শোনাবেন নেত্রীকে। বললেন, ‘‘বাবাও তো তাই চাইতেন!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement