ফাইল চিত্র।
তিন বছর ধরে নিখোঁজ ভাই। বিস্তর খোঁজাখুঁজির পরেও যখন হদিস মেলেনি, সকলেই ভেবেছিলেন আর কখনও খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু বৃহস্পতিবার দাদা মহাদেব সাকেতের হাত ধরে নৈহাটি থেকে মধ্যপ্রদেশের রিবা জেলার নয়াগড়ি গ্রামে বাড়ি ফিরলেন বছর চল্লিশের হরিলাল সাকেত। শুধু হরিলালই নয়, ওই দিন পঞ্জাবের সঙ্গরুর জেলার ভবানীগড় গ্রামের মিনু সিংহও তাঁর সদ্যোজাত সন্তান কর্ণবীরকে নিয়ে নিজের গ্রামের পথে রওনা হয়েছেন ডায়মন্ড হারবার হাসপাতাল থেকে।
দু’জনকে ঘরে ফেরানোর পিছনে মুখ্য ভূমিকা ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের হ্যাম সদস্যদের। দেশের সব রাজ্যের হ্যাম অপারেটরদের কাছে পাঠানো হয়েছিল দু’জনের ছবি এবং হরিলাল আর মিনুর কথার কিছু ভয়েস রেকর্ডিং। সেই সূত্র ধরেই জেলা ধরে ধরে খোঁজ চলে। দিন পনেরোর মধ্যেই খোঁজ মেলে তাঁদের পরিবারের।
ভাইকে নিতে এসে মহাদেব বলেন, ‘‘ওকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। বাড়িতে গিয়ে কেউ খোঁজ দেবে, ভাবিনি।’’ দোগাছিয়ার বাসিন্দা সুকুমার রায়চৌধুরী গত ১৩ দিন ধরে নিজের কাছেই রেখেছিলেন অসুস্থ হরিলালকে। তিনি বলেন, ‘‘ওঁকে রাস্তায় পেয়েছিলাম নগ্ন অবস্থায়। ধুলো, কাদা মেখে চিৎকার করছিলেন। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যের সহযোগিতায় বাড়ি এনে হ্যাম রেডিয়োর এক অপারেটরকে জানাই। তার পরেই খুব দ্রুত ওঁর বাড়ির হদিস মিলল।’’ স্থানীয়েরা জানান, পাগলের মতো চিৎকার করে যাঁকে ঘুরতে দেখা যেত এত দিন, দাদাকে দেখে তিনিই ছুটে এসে জড়িয়ে ধরেছেন।
অন্য দিকে, দিদির খোঁজে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন দীপ। খোঁজ মেলেনি, লকডাউনে নিখোঁজ জামাইবাবুও। শেষ পর্যন্ত লুধিয়ানার সতনম সিংহ বৃদি নামে এক হ্যাম অপারেটর মিনু ও তাঁর সদ্যোজাতের ছবি নিয়ে হাজির হন দীপদের গ্রামে। পরে হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের সদস্যরাই ট্রেনের টিকিট কেটে কলকাতায় পাঠান দীপ ও তাঁর এক সঙ্গীকে। কিন্তু ভাগ্নেকে দেখে খুশি হলেও তার দেখাশোনা কী করে হবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছিলেন। অবশেষে নিজের রাজ্যের সরকারের সহায়তার আশ্বাস মিলেছে বলে জানান দীপ। এ দিন দিদি ও ভাগ্নেকে নিয়ে ফিরেছেন তাঁরাও।
ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ওঁদের যে ঘরে ফেরাতে পেরেছি, এটাই আমাদের সাফল্য।’’