গর্ভগৃহে বিগ্রহের এই ছবি ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। নিজস্ব চিত্র
কালীঘাট মন্দিরের গর্ভগৃহের একটি ছবি সম্প্রতি পোস্ট করা হয়েছে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ-সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাতে দেখা যাচ্ছে, কালীপ্রতিমার গায়ে সবুজ ও মেরুন রঙের দু’টি বেনারসি শাড়ি পরানো। আর এই ছবি সামনে আসার পরেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে সেবায়েত কাউন্সিল এবং মন্দির কমিটিতে। ছবিটির সত্যতা বিচারের দাবি জানিয়ে সেবায়েত কাউন্সিলের তরফে কালীঘাট থানা এবং আলিপুর জেলা বিচারকের দফতরে আবেদন করা হয়েছে।
কালীঘাট মন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশে গর্ভগৃহে ছবি তোলা নিষেধ। এবং তা কোনও ভাবেই সর্বসাধারণের সামনে আনা যাবে না। তা ছাড়া, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে গর্ভগৃহে সাধারণের প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আলিপুরের জেলা বিচারকের নির্দেশ অনুযায়ী, শুধুমাত্র ভোগ পরিবেশন, নিত্যপূজা এবং আরতির সময় ছাড়া গর্ভগৃহে কেউ প্রবেশ করতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে কী ভাবে বিগ্রহের মূর্তিতে দু’রঙের বেনারসি চাপানো হল, তা নিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন সেবায়েত কাউন্সিলের সম্পাদক দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়।
মন্দিরের রীতি এবং শরিকানার ভাগ অনুযায়ী, প্রতিদিন ভোগ পরিবেশন থেকে শুরু করে নিত্যপূজা এবং আরতির দায়িত্বে থাকেন এক জন করে নির্দিষ্ট সেবায়েত। পাশাপাশি, পূজারী এবং নির্দিষ্ট কয়েক জন সেবায়েতই মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করার অনুমতি প্রাপ্ত। কোনও দর্শনার্থী গর্ভগৃহে প্রবেশ করে কালীপ্রতিমাকে অতিরিক্ত শাড়ি পরাতে পারেন না।
আরও পড়ুন: সিভিক কর্মীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার
দীপঙ্করবাবু জানান, সাধারণত রোজ বিগ্রহের অঙ্গসজ্জা করা হয়। সেবায়েতরা এবং সেই দিনের দায়িত্বপ্রাপ্ত শরিক প্রতিমাকে শাড়ি পরান। কিন্তু ওই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, কালীপ্রতিমাকে পরানো শাড়ির উপরে সবুজ ও মেরুন রঙের দু’টি বেনারসি ফেলে রাখা হয়েছে। তা দেখে তাঁদের অনুমান, সন্ধ্যার পরে গর্ভগৃহে ঢুকে ওই দু’টি শাড়ি রাখা হয়েছে। সেবায়েত কাউন্সিলের সদস্যেরা জানান, ছবিটি সত্যি না কি ‘সুপার ইম্পোজ’ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখার জন্য পুলিশের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
দীপঙ্করবাবু বলেন, ‘‘এই ছবিটি দু’টি বিতর্ক উস্কে দিয়েছে। প্রথমত, ছবিটি সত্যি হলে আদালতের নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগ উঠবে। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত সেবায়েতরা আদালত অবমাননার দায়ে পড়বেন। আর যদি ছবিটি ‘সুপার ইম্পোজ’ করা হয়ে থাকে, তা হলে কে বা কারা, কী উদ্দেশ্যে এমন করল তা তদন্ত করে দেখার প্রয়োজন আছে।’’
কালীঘাট মন্দিরের প্রশাসনিক ব্যবস্থা আলিপুরের জেলা বিচারকের অধীনে। সেই কারণে ছবিটির বিষয়ে জেলা বিচারকের কাছেও লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। পুলিশ ও জেলা বিচারকের পাশাপাশি ঘটনাটি মন্দির কমিটির গোচরেও আনা হয়েছে। কারণ, গর্ভগৃহের নিরাপত্তা ও দেখভালের দায়িত্ব মন্দির কমিটিরই। কমিটির তরফে কোষাধ্যক্ষ কল্যাণ হালদার বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। বাস্তবে কী ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশও তদন্ত শুরু করেছে।’’