গঙ্গাসাগর মেলা উদ্বোধনের পর থেকে তীর্থযাত্রীর নজিরবিহীন ভিড় সামাল দিতে প্রায় দেড় হাজার ট্রিপ দিয়েছে পরিবহণ নিগমগুলি। ফাইল চিত্র।
২০০১ সালে লিটার প্রতি ডিজ়েলের দাম ছিল ১৭ টাকা প্রায়। তখন এসপ্লানেড থেকে লট এইট পর্যন্ত যাত্রী পিছু ৬০ টাকা ভাড়া ঠিক হয়েছিল। দু’দশকের বেশি সময় পেরিয়েছে। লিটার প্রতি ডিজ়েলের দাম এখন ৯২ টাকার বেশি। অর্থাৎ, লিটারে প্রায় ৭৫ টাকা বেড়েছে ডিজ়েলের দাম। কিন্তু এসপ্লানেড থেকে লট এইট পর্যন্ত গঙ্গাসাগরের যাত্রী পিছু ভাড়া সেই একই, ৬০ টাকা। সময়ের চাকা যেন থমকে রয়েছে বাসভাড়ায়।
এর খেসারত দিচ্ছে সরকারি পরিবহণ নিগমগুলি। অথচ, ওই ভাড়া নিয়েই গঙ্গাসাগর মেলা উদ্বোধনের পর থেকে তীর্থযাত্রীর নজিরবিহীন ভিড় সামাল দিতে প্রায় দেড় হাজার ট্রিপ দিয়েছে পরিবহণ নিগমগুলি। আগামী কাল, মঙ্গলবারের মধ্যে ওই সংখ্যা কয়েকশো বাড়তে পারে। কলকাতা এবং দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীদের চাহিদা মিটিয়েই ওই কাজ করতে হচ্ছে রাজ্য পরিবহণ নিগম, দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ নিগম, কলকাতা ট্রাম কোম্পানি এবং ভূতল পরিবহণ নিগমকে। ডিজ়েল কেনার ক্ষেত্রে আর্থিক সঙ্কট সত্ত্বেও বিপুল সংখ্যক বাসের ট্রিপ দিচ্ছে সরকারি পরিবহণ নিগম। পরিবহণ দফতরের অন্দরে আশঙ্কা, এর প্রভাব পরিষেবায় পড়তে পারে।
অতিমারি পরিস্থিতিতে বিধিনিষেধের কারণে গঙ্গাসাগর মেলায় সেই ভাবে তীর্থযাত্রীর ভিড় হয়নি। এ বার তুলনায় কয়েক গুণ বেশি ভিড় হয়েছে। তাঁদের গঙ্গাসাগরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের লোকাল ট্রেনের সংখ্যা এ বছর অন্যান্য বারের মতোই থেকেছে। কিন্তু তুলনায় মেলার ভিড় অনেক বেশি হওয়ায় সরকারি বাসের উপরে চাপ অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে।
গঙ্গাসাগর যাওয়ার পথে পড়ে লট এইট। সেই পর্যন্ত যেতে এসপ্লানেড থেকে সরকারি বাসের ভাড়া ধার্য করা রয়েছে ৬০ টাকা। হাওড়া থেকে ভাড়া ৬৫ টাকা। এসপ্লানেড থেকে লট এইট হয়ে লঞ্চে গঙ্গাসাগর যাতায়াতে অনেকে ২০০ টাকার সম্মিলিত টিকিট কাটেন। যার থেকে ৮০ টাকা লঞ্চের ভাড়া হিসাবে কেটে নেওয়া হয়। বাকি ১২০ টাকা এসপ্লানেড থেকে লট এইট যাওয়া-আসার ভাড়া। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, এখন এমনি সময়ে সরকারি বাসে কাকদ্বীপ যাওয়ার ভাড়াই ৮৭ টাকা। সেখানে গঙ্গাসাগরের যাত্রীদের থেকে ৬০ অথবা ৬৫ টাকা নেওয়া হচ্ছে। যাত্রী পিছু প্রায় ২৭ টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এ ছাড়াও দুই প্রান্তে সমান ভাবে যাত্রী মেলে না। মেলা শুরুর সময়ে যাত্রীরা গঙ্গাসাগরমুখী। সংক্রান্তির পরে ভিড় থাকে কলকাতামুখী। ফলে ডিজ়েল খাতে খরচও বেশি হয়।
মেলায় বাড়তি বাস চালানোর আঁচ শহরের নিয়মিত পরিষেবায় পড়ার আশঙ্কা করছেন পরিবহণ দফতরের আধিকারিকদের একাংশ। এক পরিবহণ অধিকারিকের কথায়, ‘‘আবার বইমেলায় বাস চালাতে হবে। ওই সময়ে বাড়তি বাস চালানোর তেলের টাকা কী ভাবে মিলবে ভেবেই আশঙ্কা হচ্ছে।’’
চলতি সপ্তাহের বুধবার থেকে নিয়মিত পরিষেবা দিতে বাসের সংখ্যা ঠিক রাখা নিয়েও সংশয়ে দফতর।