Tax

KMC: ‘ভূতুড়ে’ করদাতার কারণে রাজস্বের হিসাব গুলিয়ে যাচ্ছে পুরসভার!

বাস্তবে তাঁরা নেই। পুর নথির ভাষায়, তাঁদের অস্তিত্বই নেই (ফিজ়িক্যালি নন-এক্সিসটেন্ট)। অথচ, তাঁরা ভীষণ ভাবে আছেন!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২২ ০৮:০২
Share:

ভূতুড়ে’ এমন করদাতাদের নিয়ে মহা ফাঁপরে পড়েছেন কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ। ফাইল ছবি

বাস্তবে তাঁরা নেই। পুর নথির ভাষায়, তাঁদের অস্তিত্বই নেই (ফিজ়িক্যালি নন-এক্সিসটেন্ট)। অথচ, তাঁরা ভীষণ ভাবে আছেন! আর তাঁদের থাকার কারণে সম্ভাব্য রাজস্ব আদায়ের হিসাব গুলিয়ে যাচ্ছে। গুলিয়ে যাচ্ছে বকেয়া করের হিসাবও। ‘ভূতুড়ে’ এমন করদাতাদের নিয়ে মহা ফাঁপরে পড়েছেন কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ। তাই পুরসভার তথ্যভান্ডার থেকে ‘তেনাদের’-কে অবিলম্বে বাদ দেওয়ার জন্য রাজস্ব দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে সম্ভাব্য রাজস্ব এবং বকেয়া করের হিসাব কোনও ভাবেই গুলিয়ে না যায়।

Advertisement

বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পুরকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, অনেক সময়েই একই করদাতার নামে দু’বার সম্পত্তিকরের ডিমান্ড পাঠানো হচ্ছে। অনিচ্ছাকৃত ভ্রান্তির কারণে এমন ঘটছে। ধরা যাক, অরিন্দম বসু নামে জনৈক নাগরিক আগে কলোনি এলাকায় থাকতেন। পরবর্তী কালে তিনি এমন জায়গায় বসবাস শুরু করলেন যেটি কলোনি এলাকা নয়। এ ক্ষেত্রে তাঁর অ্যাসেসি নম্বর পাল্টে গেল। কিন্তু, পুরসভার তথ্যভান্ডারে সেই নতুন তথ্যের পাশাপাশি থেকে গেল পুরনো তথ্যও। ফলে কলোনি এলাকার অরিন্দম বসুর নামে যেমন সম্পত্তিকরের বিল পাঠাতে লাগল পুরসভা, একই ভাবে নন-কলোনি এলাকার বাসিন্দা ওই একই অরিন্দমের নামেও বিল পাঠানো হল। অর্থাৎ, একই ব্যক্তির নামে পাঠানো হল ‘ডুপ্লিকেট’ বিল। যার মধ্যে একটি বিল রক্তমাংসের অরিন্দমের নামে। আর একটি বিল যে অরিন্দমের নামে, খাতায়-কলমে বাদ দিয়ে তাঁর অস্তিত্ব পুরনো ঠিকানায় নেই। এই ধরনের ভ্রান্তি থেকে যাচ্ছে বস্তি এবং বস্তি নয়, এমন ক্ষেত্রেও।

আবার অনেক সময়ে এমনও হচ্ছে, আগে কোনও জমি বা বাড়িকে একক (সিঙ্গল) ইউনিট ধরে সম্পত্তিকরের বিল পাঠানো হত। ধরা যাক, সেই জমি পরবর্তী কালে একাধিক ব্যক্তির নামে ভাগাভাগি হল বা সেখানে দশটি ফ্ল্যাটের আবাসন তৈরি হল। অর্থাৎ, ‘সিঙ্গল ইউনিট-এর পরিবর্তে ‘মাল্টিপল অ্যাসেসি’ হল। ফলে সংশ্লিষ্ট ফ্ল্যাটের মালিকদের নামে পৃথক ভাবে বিল পাঠানো শুরু হল। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও পুরসভার তথ্যভান্ডারে নতুন তথ্যের পাশাপাশি পুরনো তথ্যও (সিঙ্গল ইউনিট) থাকায় আগের মতোই ‘মাদার অ্যাসেসি’র নামে বিল পাঠানো চলতে থাকল। অথচ ‘সিঙ্গল ইউনিট’ হিসেবে সেই ‘মাদার অ্যাসেসি’র কোনও অস্তিত্বই নেই। এ ক্ষেত্রেও সেই অস্তিত্বহীন করদাতার উপস্থিতি পুর খাতায়।

Advertisement

আর এই ‘কায়াহীন’ উপস্থিতিই রাজস্বের হিসাব গুলিয়ে দিচ্ছে বলে জানাচ্ছেন পুরকর্তাদের একাংশ। কারণ, সম্ভাব্য রাজস্বের হিসাবের মধ্যে একই ব্যক্তির নামে ‘ডুপ্লিকেট’ পাঠানো বিল ধরা হচ্ছে। অথচ, একটি থেকে সম্পত্তিকর আদায় হলেও অন্যটি থেকে হচ্ছে না। এর ফলে পুরসভার হিসাবে তা বকেয়া করের হিসাবের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে।

সেই কারণে পুর কর্তৃপক্ষ ‘ভূতুড়ে’ করদাতার সংখ্যা ছেঁটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পাশাপাশি, পুর নথিতে ‘ডুপ্লিকেট’ করদাতার উল্লেখের কারণ ব্যাখ্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের। একই সঙ্গে ঠিক অ্যাসেসি নম্বর এবং সংশ্লিষ্ট করদাতার সম্পত্তিকরের বিলের বর্তমান অবস্থা কী, সেই তথ্য আপডেট করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক পদস্থ পুর কর্তার কথায়, ‘‘এ রকম প্রতিটি ঘটনা বিচার করে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিশেষ পুর কমিশনার (রাজস্ব)-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী ‘ডুপ্লিকেট’ করদাতাদের চিহ্নিত করে তথ্যভান্ডার থেকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’’

এখন ‘তেনারা’ বাদ পড়বেন কি না বা সেই প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হবে কি না, তা সময়ই বলবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement