Book

Book: বইয়ের ভবিষ্যতেই অটুট আস্থা গায়ত্রীর

বইয়ের দামের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে অনুযোগ করছিলেন জনৈক ছাত্রী।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২২ ০৬:১৭
Share:

প্রত্যয়ী: বইমেলায় কলকাতা সাহিত্য উৎসবে গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক। শুক্রবার। ছবি: সুমন বল্লভ

বইয়ের দামের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে অনুযোগ করছিলেন জনৈক ছাত্রী। শুনে তাঁকে মৃদু বকুনিই দিলেন গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক— “শোনো, গয়না না-কিনে বই কেনার চেষ্টা করো, বুঝলে! এটা বোঝ, তোমার থেকে খারাপ অবস্থায় অনেকে আছেন।”

Advertisement

বহু দিন বাদে বইমেলার মাঠে এক বিশ্ববিশ্রুত অতিথি, দুনিয়া চষে বেড়ানো সাহিত্য তত্ত্ববিদ তথা ক্ষুরধার নারীবাদী সমালোচক অকপট, “আমরা নিজেদের দশা নিয়ে ঘ্যানঘ্যান করতেই অভ্যস্ত! আমি বলব, সবার একটু নীচের দিকে তাকানোও দরকার।”

ঝটিকা সফরে নিউ ইয়র্ক থেকে কলকাতায় এসেছেন গায়ত্রী। আজ, শনিবার সাতসকালে বীরভূমের প্রান্তিক জনপদে নিজের ইস্কুলে যাওয়ার কথা তাঁর। এই ব্যস্ত নির্ঘণ্টে কী ভাবে বইমেলাও তাঁর সফরসূচিতে ঢুকে পড়েছে!

Advertisement

গত এক যুগে এমন আন্তর্জাতিক সুরভি মাখা অতিথি কই কলকাতা বইমেলায়? পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের কর্তা ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মনে পড়ল, একুশ শতকের গোড়ায় গুন্টার গ্রাস এসেছিলেন। বইমেলার ঠিক আগে প্রকাশিত গায়ত্রীর প্রথম বাংলা বই ‘অপর’-এর প্রকাশক অনিল আচার্যও বলছিলেন, ১৯৯০-এর দশকে জাক দেরিদা বা রিচার্ড ডকিন্সের আসার কথা। দেরিদার ‘দ্য লা গ্রামাটোলজি’র ইন্ট্রোডাকশনের লেখিকা গায়ত্রী আবার দেরিদা ও বইমেলার একটি পুরনো যোগসূত্র মনে করিয়ে দিলেন। শুক্রবার বইমেলার কলকাতা সাহিত্য উৎসবের মুখবন্ধ হিসেবে ‘ভাবনা, ভাষা ও বই’ নিয়ে বলতে উঠে যিনি বলবেন, “আমার স্নেহময় অগ্রজপ্রতিম জাক দেরিদা বইমেলায় ‘কিনোট অ্যাড্রেস’টি দেওয়ার বছরে কী ঘটেছিল, মনে আছে তো! না, আমায় মুখবন্ধ ভাষণ দিতে বলা হলেও আমি মোটেই মুখবন্ধ-টন্ধ দিচ্ছি না! কেলেঙ্কারি হবে, বইমেলা যদি আবার পুড়ে যায়!”

কোভিডে থমকে যাওয়ার পরে এ বারের বইমেলায় বই বিক্রি বা ভিড় নিয়ে খুশি বিক্রেতারা। কিন্তু ভিন্ রাজ্যের বা আন্তর্জাতিক প্রকাশক কম। সাহিত্য উৎসবেও বিদেশি লেখক কার্যত নেই। ভিন্ রাজ্যের অতিথিও কম। কিন্তু গায়ত্রীর ঘণ্টা দেড়েকের উপস্থিতি বইমেলার মাঠে একসঙ্গে এ দুনিয়ার ভিতরের অনেকগুলো ভুবন এবং কালখণ্ডকে মিলিয়ে দিল।

পায়ের ব্যথার জন্য বইমেলার মাঠে হুইলচেয়ারে ঘুরলেন। গায়ত্রীর মনে পড়ল, রুদ্রদার (রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত) সঙ্গে মেলায় ঘুরে বেড়ানোর স্মৃতি। তখন তিনি কবিতাপ্রেমী, রাজনীতি সচেতন, তুখোড়, আবার একটু ছ্যাবলা তরুণী। তবে গায়ত্রী জানালেন, নিজের বইয়ে দেদার সই দিলেও বইয়ে লেখকের সই নেওয়ার অভ্যেস তাঁদের ছিল না। এ বার হুইলচেয়ারে নিরাপত্তারক্ষীদের হুইসল সহযোগে ‘সাইড দিন, সাইড দিন’ ধ্বনির মাঝে নিজেকে বেশ রাজনৈতিক নেতা-নেতা মনে হচ্ছিল গায়ত্রীর।

—অনেক দিন বাদে বইমেলায় এলেন!

—কোথায় অনেক দিন! আপনারাই আমায় খোঁজেননি!

গিল্ড-কর্তাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে নানা রসিকতা করলেন। বইমেলার ‘ভদ্রলোকি কালচারের’ (গায়ত্রীর ভাষায়) মধ্যে বসেও গায়ত্রী এ দিন অনায়াসে ঘুরে বেড়িয়েছেন বীরভূমের গ্রামে, তাঁর ইস্কুলের পড়ুয়াদের জগতেও। তাঁর কথায়, “এ পৃথিবীতে বই শব্দটার মানে সব সময়ে এক নয়। আমার ইস্কুলের বইবিহীন জগতে বই শুনলেই ছোটদের চোখেমুখে একটা অদ্ভুত ছবি ফুটে ওঠে!” মুখে কিছু না-বলে আহ্লাদে জড়িয়ে ধরার ভঙ্গিতে বোঝালেন গায়ত্রী। আজকের দুনিয়ার নানা বিভাজন ও সংখ্যাগুরুবাদের বাস্তবতা নিয়ে বলতে গিয়ে বার বার খেই হারিয়ে তাঁর ইস্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলার ভাষা হাতড়াচ্ছিলেন গায়ত্রী। যদিও ওই ছোটদের মধ্যে তাঁর কাজ নিয়ে গায়ত্রীর নিজের মূল্যায়ন, “বিশেষ কিছুই পারিনি। ১০০০ বছরের সামাজিক অপরাধ কি ৩০ বছরে কমানো সম্ভব!” তবু বইয়ের ভবিষ্যতে আস্থা অটুট বিশ্বনাগরিক বাঙালিনীর। একান্ত আলাপচারিতায় যিনি বলে গেলেন, “ডিজিটাল জগৎ তো পর্নোগ্রাফি, লটারি নিয়েই মত্ত। বই থাকবে! বইয়ের বিকল্প নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement