Pond Filling

পুকুর ভরাটে এগিয়ে গার্ডেনরিচ, ওয়ার্ড ১০৮, বলছে যাদবপুরের রিপোর্ট

জলাশয় ভরাটে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে পুরসভার ১০৮ নম্বর ওয়ার্ড। অতীতে ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে মেটিয়াবুরুজের বাসিন্দারা একাধিক বার পুকুর বুজিয়ে ফেলা নিয়ে অভিযোগ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:১৫
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

শহর কলকাতায় পুকুর ভরাটের মতো ঘটনা ঘটছেই। বিষয়টি নিয়ে আগেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তাঁরই নির্দেশে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জলসম্পদ বিভাগ এবং রাজ্য সরকারের বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের যৌথ উদ্যোগে গত এক বছর ধরে শহরে পুকুরের সমীক্ষার কাজ চলছে। পুরসভা সূত্রের খবর, সম্প্রতি ওই দুই বিভাগ পুরসভাকে অন্তর্বর্তিকালীন রিপোর্ট জমা দিয়েছে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে গার্ডেনরিচ এলাকার চারটি ওয়ার্ডে ভরাট করা হয়েছে ২৩০টি পুকুর! আবার, ই এম বাইপাস লাগোয়া শুধুমাত্র ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডেই পুকুর, দিঘি ও ভেড়ি মিলিয়ে বুজিয়ে ফেলা হয়েছে ২১০টি জলাশয়। পাশাপাশি, ওই রিপোর্টে বন্দর এলাকার মেটিয়াবুরুজের রাজাবাগান ও নাদিয়াল থানা এলাকায় যে ভাবে পুকুর ভরাট হয়েছে, তাতেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

Advertisement

ওই রিপোর্টের পরিসংখ্যান বলছে, জলাশয় ভরাটে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে পুরসভার
১০৮ নম্বর ওয়ার্ড। অতীতে ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে মেটিয়াবুরুজের বাসিন্দারা একাধিক বার পুকুর বুজিয়ে ফেলা নিয়ে অভিযোগ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। এমনকি, এক নাগরিক মেয়রকে ফোন করে এমনও বলেছিলেন যে, তিনি সরাসরি অভিযোগ করার কারণে তাঁর উপরে হামলা হতে পারেও আশঙ্কা করছেন তিনি। পুকুর ভরাটের অভিযোগ পেয়ে মাসকয়েক আগে পুরসভার এক সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার নাদিয়াল থানা
এলাকায় ব্যবস্থা নিতে গেলে তাঁকে ঘেরাও করা হয় বলে অভিযোগ। পরে ওই ইঞ্জিনিয়ার পুলিশকে ফোন করে কোনও ক্রমে প্রাণে বাঁচেন। ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে মেয়র বন্দর এলাকার গার্ডেনরিচের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পুকুর ভরাটের অভিযোগ পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘‘গার্ডেনরিচে যে ভাবে পুকুর ভরাট হয়ে চলেছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে ওই এলাকা গ্যাস চেম্বারে পরিণত হবে।’’

গার্ডেনরিচে পুকুর ভরাট নিয়ে মেয়রের অনুমান যে সত্যি, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এই সমীক্ষার অন্তর্বর্তিকালীন রিপোর্টে। ওই রিপোর্ট আরও বলছে, শহরে প্রায় সাড়ে ছ’হাজার জলাশয় রয়েছে। তার মধ্যে বেশির ভাগ পুকুরেরই আয়তন কমে গিয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৪-এর পর থেকে গার্ডেনরিচের ১৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৫০টি, ১৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৬৩টি, ১৪০ নম্বর ওয়ার্ডে ৩২টি ও ১৪১ নম্বর ওয়ার্ডে ৮৫টি পুকুর বুজিয়ে ফেলা হয়েছে। ই এম বাইপাস লাগোয়া ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের বানতলা, চৌবাগা, পঞ্চান্নগ্রাম, গুলশন কলোনি এলাকায় দেদারে জলাজমি, ভেড়ি, পুকুর ভরাট হয়ে সেখানে নির্মাণকাজ হয়েছে। পুর পরিবেশ বিভাগের এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘২০০৪ সালে উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে শহরের যে সমস্ত এলাকায় পুকুর ছিল, তার সঙ্গে চলতি বছরে উপগ্রহ চিত্র মিলিয়ে দেখলে দেখা যাচ্ছে, গার্ডেনরিচ ও বাইপাসের ধারে ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচুর পুকুর ভরাট করা হয়েছে। এটা ভীষণ উদ্বেগের বিষয়। দুই বিভাগের চূড়ান্ত রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছি।’’

Advertisement

কেন এই অবস্থা? গার্ডেনরিচ এলাকায় পুরসভার বরো চেয়ারম্যান রঞ্জিত শীলের সাফাই,
‘‘গার্ডেনরিচ এলাকায় কেউ কারও কথা শোনেন না। বাম আমল থেকে এই পুকুর ভরাট হয়ে আসছে।’’ আর ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি সুশান্ত ঘোষের দাবি, ‘‘আমি দু’বছর হল পুরপ্রতিনিধি হয়েছি। সেই দু’বছরে কোনও জলাশয় ভরাট হয়নি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement