ডেঙ্গিতে মৃত সল্টলেকের বৈশাখী আবাসনের বাসিন্দা, পাঁচ বছরের রণদীপ জানার বাড়ির সামনের এলাকা ভরেছে আগাছায়। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
পুজোর মুখেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে সল্টলেকে মৃত্যু হয়েছে এক শিশুর। ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে সেখানকার আবর্জনা সাফাই ব্যবস্থা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তার খোলা ভ্যাটে আবর্জনা ডাঁই হয়ে পড়ে থাকছে। বৃষ্টি ও শিশিরের মরসুমে সেই আবর্জনায় থাকা নানা ধরনের বস্তু হয়ে উঠছে ডেঙ্গির মশার লার্ভা জন্মানোর আধার।
গত সোমবার বি সি রায় শিশু হাসপাতালে মারা যায় সল্টলেকের বৈশাখী আবাসনের বাসিন্দা রণদীপ জানা নামে পাঁচ বছরের ওই শিশু। তার পরিবার ও প্রতিবেশীদের অভিযোগ, আবাসিক এলাকায় জঙ্গল ও আবর্জনা ভরে রয়েছে। পাশেই কেষ্টপুর খালের জল সরে না। এলাকায় প্রচণ্ড মশার উপদ্রব। বৈশাখী আবাসনে এ দিন রণদীপের বাড়িতে গেলে একই কথা জানিয়েছেন অনেকে। পরিবারের ছোট ছেলের এমন আকস্মিক মৃত্যুতে কথা বলার অবস্থায় নেই পরিজনেরা। বাবা নিতাই জানা শুধু বললেন, ‘‘এমন জ্বর যে, চিকিৎসার সময়টুকুও দিল না।’’
স্থানীয় ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা বিধাননগরের ডেপুটি মেয়র অনিতা মণ্ডল জানান, পুরসভার তরফে ডেঙ্গির মোকাবিলায় নিয়মিত মশার তেল ছড়ানো হচ্ছে। তবে তাঁর ওয়ার্ড-সহ অনেক ওয়ার্ডেই যে জঞ্জাল জমে রয়েছে, তা মেনে নিয়েছেন অনিতা। তিনি জানান, ধাপায় দু’বারের বেশি আবর্জনা ফেলা যাচ্ছে না। যার জন্য ভ্যাটে আবর্জনা পড়ে থাকছে।
উল্লেখ্য, আগে বিধাননগরে দিনে ছ’বার আবর্জনা ফেলা হত। তা নিয়ে যাওয়া হত বাইপাসের ধারে মোল্লার ভেড়িতে। কিন্তু বিধাননগর পুরসভা জানাচ্ছে, বায়ো-মাইনিংয়ের কারণে দু’বছর ধরে মোল্লার ভেড়িতে আবর্জনা ফেলা বন্ধ। ফলে এখন বিধাননগরের আবর্জনা কলকাতা পুরসভার সঙ্গে ধাপাতেই ফেলতে হয়।
মঙ্গলবারও বৈশাখী আবাসনের আশপাশের এলাকা এবং সল্টলেকের অনেক জায়গায় জঞ্জাল পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবরাজ চক্রবর্তী জানান, তাঁরা কলকাতা পুরসভাকে চিঠি দিয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত যাতে ধাপায় আবর্জনা ফেলার অনুমতি দেওয়া হয়, সেই আবেদন জানিয়েছেন। দেবরাজের কথায়, ‘‘মোল্লার ভেড়ির তুলনায় বিধাননগর থেকে ধাপা অনেক দূরে। ফলে, কলকাতা পুরসভার মনোনীত সময় অনুযায়ী চলতে গিয়ে দুপুর দেড়টার পরে আর সেখানে আবর্জনা ফেলা যাচ্ছে না। তাই ওদের অনুরোধ করা হয়েছে সময় বাড়ানোর জন্য।’’
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত সপ্তাহেই বিধাননগরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে আটশো পার করেছে। পুর কর্তৃপক্ষ জানান, পুজোয় বিভিন্ন কারণে আবর্জনার পরিমাণ বাড়বে। সে কথা মাথায় রেখে আবর্জনা সংগ্রহের গাড়ির সংখ্যা বাড়ানো হবে।