গত বছর কলকাতার হাজারখানেক স্কুলের বেহাল রিপোর্ট প্রকাশ হতেই মুখ পুড়েছিল সর্বশিক্ষা মিশনের আধিকারিকদের। এ বার তার পুনরাবৃত্তি হতে দিতে চায় না সর্বশিক্ষা দফতর। বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে কলকাতার স্কুলগুলিতে শৌচালয়, জল-সহ বিভিন্ন পরিকাঠামো তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
সর্বশিক্ষা মিশন সূত্রের খবর, গত বছর শহরের ১৫১০টি প্রাথমিক, ৬২৯টি উচ্চ প্রাথমিক এবং ২১৩৯টি মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলকে
নিয়ে সমীক্ষা করেছিল দফতর। ওই রিপোর্টে প্রকাশ হয়েছিল ৫৫৪টি প্রাথমিক স্কুলের শৌচাগারে জলের পরিষেবা নেই। ফলে সংক্রমণের আশঙ্কা করেছিলেন চিকিৎসকেরা। শিক্ষার অধিকার আইনে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পড়ুয়াদেরও পৃথক শৌচাগার থাকার কথা। সে ক্ষেত্রেও ১৫১০টি প্রাথমিক স্কুলের মধ্যে ১৪১৭ স্কুলে সেই ব্যবস্থা ছিল না। পাঠ্যবইতেই হাত ধুয়ে খাওয়ার অভ্যাসের কথা লেখা থাকলেও স্কুলে হাত ধোয়ার জন্য কোনও ব্যবস্থাই নেই। ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন অভিভাবকেরাও। এই রিপোর্ট হাতে পেয়েই নড়েচড়ে বসে দফতর। এ বার সমস্ত স্কুলে সেই পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া শুরু হয়েছে।
দফতর সূত্রের খবর, প্রথমেই প্রতিটি স্কুলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, স্কুল চত্বর পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। স্কুলে জল সরবরাহও নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে দফতর সরাসরি কলকাতা পুরসভার সঙ্গে কথা বলেছে। স্কুলগুলিকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রথমে জল স্কুলেরই কোনও জায়গায় ধরে রাখতে হবে। সেখান থেকে শৌচাগারে তা পৌঁছে দিতে হবে।
এ ছাড়া হাত ধোয়ার জন্য ন্যূনতম সাবানও ছিল না বহু স্কুলে। এই রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পরেই হাত ধোয়ার সাবানের জন্য টাকা বরাদ্দ করে স্কুলে পাঠিয়ে দেয় সর্বশিক্ষা মিশন দফতর। তবে সমস্যা যে পুরোপুরি মিটে গিয়েছে, এমনটা একদমই নয়। এক কর্তা বলেন, ‘‘যে সমস্ত
স্কুল ভাড়ার বাড়িতে রয়ে গিয়েছে, সেখানে কোনও রকমের নির্মাণের কাজ করা যাচ্ছে না। তবে চেষ্টা করা হচ্ছে সেই সমস্যাও মিটিয়ে ফেলতে।’’ বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘অভিভাবকেরা যেন এই স্কুলগুলির থেকে মুখ ফিরিয়ে না নেন, তার জন্য পরিকাঠামোর উন্নয়ন প্রয়োজন। সরকারের এই উদ্যোগ ভাল। তবে ঠিক ভাবে রক্ষণাবেক্ষণেরও প্রয়োজন রয়েছে।’’ শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ অর্ণব হালদার বলেন, ‘‘সংক্রমণ রুখতে এই উদ্যোগ খুবই প্রয়োজনীয়। তবে শিশুরা শৌচাগার ঠিক ভাবে ব্যবহার করছে কিনা, সে দিকেও লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।’’