প্রতীকী ছবি।
কলকাতার বেহালা থেকে হেলিকপ্টারে দিঘা! একটি ওয়েবসাইট দেখে এমন ভ্রমণের জন্য হেলিকপ্টারের টিকিট কেটে প্রতারিত হলেন এ শহরেরই এক বাসিন্দা। পুলিশের দ্বারস্থ হয়ে তিনি জানতে পারেন, রাজ্য সরকারের উদ্যোগে এক সময়ে শুরু হওয়া ওই হেলিকপ্টার-যাত্রা বন্ধ বহু দিন। তবু এমন ভ্রমণের টোপ দিয়েই চলছে অনলাইনে প্রতারণা-চক্র। স্থানীয় থানার পাশাপাশি লালবাজারেও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি।
পুলিশ সূত্রের খবর, পাটুলির বৃজি এলাকার বাসিন্দা শাশ্বতী দে তাঁর বৃদ্ধা মা, দিদি এবং এক মাসিকে নিয়ে দিঘা ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন গত মাসের শেষে। ইচ্ছে ছিল, হেলিকপ্টারে কলকাতা থেকে দিঘা যাওয়ার। শাশ্বতী বলেন, ‘‘বেহালা ফ্লাইং ক্লাব থেকে এমন একটি হেলিকপ্টার পরিষেবা রাজ্য সরকারের উদ্যোগে চলছে বলে শুনেছিলাম। আমার মা সত্তরোর্ধ্বা। হেলিকপ্টারে তাঁর সুবিধা আর নতুন অভিজ্ঞতার কথা ভেবেই বুকিং করতে গিয়েছিলাম।’’ শাশ্বতী জানান, অনলাইনে খোঁজ করতেই ‘ড্রিম সফর ডট কম’ নামে একটি ওয়েবসাইট সামনে আসে। দিঘা ছাড়াও কলকাতা থেকে বালুরঘাট, মালদহ এবং গঙ্গাসাগরেও হেলিকপ্টারে যাওয়ার সুযোগ তারা দিচ্ছে বলে লেখা ছিল।
ওয়েবসাইটে দেওয়া একটি নম্বরে ফোন করতে জানানো হয়, প্রতিটি টিকিটের দাম ২২৮০ টাকা। চার জনের টিকিটের জন্য একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত দিয়ে মোট ৯১২০ টাকা পাঠাতে বলা হয়। পুরোটাই সরকারি ভাবে হচ্ছে জানিয়ে যাত্রীদের প্রত্যেকের আধার নম্বরও নিয়ে নেওয়া হয়। অভিযোগকারিণীর দাবি, ওই টাকা পাঠিয়ে দেওয়ার পরেও তাঁদের টিকিট দেওয়া হয়নি। উল্টে এই যাত্রার জন্য ৭৯০০ টাকার বিমা করতে বলা হয়। শাশ্বতীর অভিযোগ, ‘‘প্রথমে এই বিমা সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। চেপে ধরতে জানানো হয়, বিমার টাকা জমা করার দু’মিনিটেই গ্রাহককে টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়। সন্দেহ হওয়ায় জানিয়ে দিই, বিমার টাকা দেব না। আপনারা টিকিট দিন। সংস্থাটি জানায়, টিকিট এ ভাবে পাওয়া যাবে না। শেষে টাকা ফিরিয়ে দিতে বলায় জানানো হয়, আগামী সাত দিনের আগে কিছুই করা সম্ভব নয়।’’
তখন তাঁরা বেহালা থানায় ফোন করেন। সেখান থেকেই জানানো হয়, এমন হেলিকপ্টার পরিষেবা বহু দিন ধরে বন্ধ। এর পরেই শাশ্বতীরা স্থানীয় পাটুলি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ জানানো হয় যুগ্ম কমিশনারের (অপরাধ দমন) দফতরেও। ঘটনার ১০ দিন পরেও তাঁরা টাকা ফেরত পাননি বলে অভিযোগকারিণীর দাবি।
লালবাজার সূত্রের খবর, ঘটনার তদন্তভার নিয়েছে সাইবার অপরাধ দমন শাখা। সেখানকার এক পুলিশকর্তা জানাচ্ছেন, অনলাইনে একাধিক সংস্থা ভুয়ো পরিচয়ে ব্যবসা ফেঁদে বসেছে। এ নিয়ে প্রায়ই অভিযোগ আসছে। এরা ‘প্রক্সি সার্ভার’ ব্যবহার করায় চিহ্নিত করাও শক্ত হচ্ছে। আপাতত এমন সংস্থাগুলিকে তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ধরে চিহ্নিত করার কাজ চলছে। পাশাপাশি, লালবাজারের কর্তাদের পরামর্শ, যে কোনও সংস্থার সঙ্গে অনলাইনে
আর্থিক লেনদেনে যাওয়ার আগে সতর্ক হোন। সন্দেহ হলেই থানায় জানান।