Maoist Attack

হালিশহরের ব্যবসায়ী খুনে দোষী সাব্যস্ত চার মাওবাদী

২০১০ সালে হালিশহরের বাসিন্দা, ব্যবসায়ী গোপাল সাহাকে তাঁর বাড়িতে ঢুকে গুলি করে খুন করে মাওবাদীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হালিশহর শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৪১
Share:

গোপাল সাহা ফাইল চিত্র।

জঙ্গলমহলেই শুধু নয়। কলকাতার শহরতলিতেও মাওবাদীদের নিশানা হয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। লুটের টাকায় তহবিল তৈরি করতে চেয়ে মাওবাদীরা খুন করেছিল হালিশহরের চক্রবর্তী পাড়ার এক ব্যবসায়ীকে। সেই খুনের ঘটনায় মঙ্গলবার ব্যারাকপুরের অতিরিক্ত দায়রা ফাস্ট ট্র্যাক (চতুর্থ) আদালত দোষী সাব্যস্ত করল চার মাওবাদীকে। আজ, বুধবার তাদের সাজা ঘোষণা হওয়ার কথা।

Advertisement

২০১০ সালে হালিশহরের বাসিন্দা, ব্যবসায়ী গোপাল সাহাকে তাঁর বাড়িতে ঢুকে গুলি করে খুন করে মাওবাদীরা। ওই মামলার বিশেষ সরকারি আইনজীবী অসীমকুমার দত্ত জানান, বীজপুরের একটি বাড়িতে বসে গোপালবাবুর বাড়িতে ডাকাতি করার ছক কষেছিল মাওবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত চার জন। তাদের মধ্যে বরুণ শূর নামে এক জন ছিল মাওবাদীদের রাজ্য কমিটির নেতা। ডাকাতির উদ্দেশ্য ছিল সংগঠন চালানোর জন্য অর্থ সংগ্রহ করা। প্রথমে বীজপুর থানার পুলিশ এবং পরে সিআইডির স্পেশ্যাল ক্রাইম ইউনিট ঘটনার তদন্ত করে। সুশান্ত শীল, বরুণ শূর (বিদ্যুৎ), অজয় দাস ও ইদ্রিশ শেখ (কানা রাজু) নামে চার মাওবাদী নেতাকে গোপালবাবুর খুনের মামলায় এ দিন বিচারক তাপসকুমার মিত্র দোষী সাব্যস্ত করেন।

গোপালবাবুর আত্মীয়েরা জানান, ২০১০ সালের ৩১ অক্টোবর রাতে দু’টি মোটরবাইকে চেপে ছ’জন তাঁদের বাড়িতে হানা দেয়। তাদের হাতে কার্বাইন, আগ্নেয়াস্ত্র, কাটারি, শাবল-সহ অস্ত্রশস্ত্র ছিল। বাড়িতে ঢুকে প্রথমেই তারা গোপালবাবুর তুতো ভাই সঞ্জীব সাহার কাছে আলমারির চাবি চায়। সঞ্জীববাবু চাবির কথা জানেন না বলতেই তাঁর কাঁধে কোপ মারে দুষ্কৃতীরা। ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে ছুটে আসেন গোপালবাবুর মা ভানুমতীদেবী। তাঁকে মাটিতে ফেলে তাঁর বুকের উপরে পা তুলে দিয়ে চাবির জন্য শাসাতে থাকে ডাকাতেরা।

Advertisement

গোপালবাবুর স্ত্রী মাধবী মঙ্গলবার জানান, ওই রাতে মাকে ওই অবস্থায় দেখে গোপালবাবু যে ঘরে আলমারি রয়েছে, সেই ঘরের দিকে ছুটে যেতে চান। কিন্তু ঘরের ভিতরে ঢোকার আগেই তাঁকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়। মাধবী এ দিন বলেন, ‘‘আমার মেয়েকে চুলের মুঠি ধরে মেরেছিল। চোখের সামনে আমি স্বামীর মৃত্যু দেখেছি। আমার মেয়ে তার বাবার মৃত্যু দেখেছে। আজ দোষী সাব্যস্ত হয়েছে ওরা। ওদের যেন ফাঁসি হয়।’’ ডাকাতেরা চলে গেলে গোপালবাবু ও সঞ্জীববাবুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গোপালবাবুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।

তদন্তকারীরা জানান, শেষ পর্যন্ত ওই পরিবারের থেকে চাবি নিয়ে ভানুমতীদেবীর ঘরে ঢুকে আলমারি ভেঙে সোনা-রুপোর গয়না, টাকাপয়সা, রুপোর মুদ্রা লুট করে পালায় দুষ্কৃতীরা। কিন্তু রাস্তা চিনতে না পেরে মোটরবাইকে চেপে একটি দল গঙ্গার দিকে চলে যায়। সেখানেই স্থানীয়দের হাতে অস্ত্রশস্ত্র-সহ ধরা পড়ে অজয় দাস।

সরকারি আইনজীবী অসীমবাবু জানান, বীজপুর থানা অজয়কে গ্রেফতার করলে পুলিশের কাছে সে বাকিদের নাম বলে দিয়েছিল। সূত্রের খবর, অজয়কে জেরা করে পুলিশ ও সিআইডি জানতে পারে, পূর্বস্থলীর নাদনঘাটে অজয়ের বাড়ি রয়েছে। সেখানে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হয় মাওবাদী পুস্তিকা। অন্য একটি মামলায় মুর্শিদাবাদ জেলে বন্দি থাকা অবস্থায় ইদ্রিশের কথা জানতে পারেন তদন্তকারীরা। বরুণকেও ময়দান থানা গ্রেফতার করেছিল অন্য একটি ঘটনায়। সূত্রের সঙ্গে সূত্র জুড়ে ইদ্রিশ ও বরুণ ধরা পড়ার পরে সুশান্তকেও গ্রেফতার করে সিআইডি। তদন্তকারীরা জানান, সুশান্ত গোপালবাবুর প্রতিবেশী ছিল। তার শ্বশুরবাড়িতে বসেই ডাকাতির ছক কষা হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement