গলির রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন এক যুবক। আচমকাই তাঁর সামনে এসে দাঁড়াল একটি গাড়ি। ভিতর থেকে পরিচিত এক ব্যক্তি ওই যুবককে গাড়িতে উঠতে বললেন। যুবক গাড়িতে উঠতেই তাঁর মুখ চেপে ধরল ভিতরে থাকা যুবকেরা। প্রকাশ্য রাস্তা থেকে এ ভাবেই এক যুবককে অপহরণের অভিযোগে চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার তদন্তকারীরা দু’জনকে উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়া থেকে, বাকি দু’জনকে নিউ টাউন থেকে গ্রেফতার করেছেন। তার আগেই অবশ্য পুলিশ অপহৃত যুবককে উত্তর ২৪ পরগনার ধামাখালি থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
এই মামলার সরকারি কৌঁসুলি স্নেহাংশু ঘোষ জানান, বুধবার ধৃত চার জনকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়েছিল। বিচারক ধৃতদের ৫ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। গাড়ির চালক-সহ চার জন গ্রেফতার হলেও ওই অপহরণকারী চক্রের মূল চাঁইকে বুধবার রাত পর্যন্ত ধরা যায়নি বলে দাবি তদন্তকারীদের।
পুলিশ জানিয়েছে, অপহরণের ঘটনাটি ঘটেছিল গত ২৫ জুলাই, আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা এলাকার সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটে। অপহৃত যুবকের নাম রহমত গাজি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের বাসিন্দা ওই যুবক আমহার্স্ট স্ট্রিট এলাকায় এক প্রোমোটারের অধীনে সুপারভাইজ়ারের কাজ করেন। ঘটনার দিন সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়ে তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন ওই প্রোমোটার।
তদন্তকারীরা জানান, ওই অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরেই অপহরণকারীদের ডেরা থেকে প্রোমোটারকে ফোন করে রহমত জানান, তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে। মুক্তিপণ বাবদ দু’লক্ষ টাকা না দিলে তাঁকে আটকে রাখা হবে বলে ফোনে জানান রহমত। সেই সঙ্গে তিনি জানান, দুষ্কৃতীদের মধ্যে এক জন তাঁর পরিচিত। ওই ব্যক্তিই অপহরণের মূল পান্ডা।
লালবাজারের একাংশ জানায়, তদন্তে নেমে মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে জানা যায়, অপহৃতকে আটকে রাখা হয়েছে ধামাখালিতে। তদন্তকারীরা ২৬ জুলাই সকালে সেখানে হানা দেন। পুলিশ তাদের খোঁজ পেয়েছে বুঝতে পেরে ওই এলাকাতেই রহমতকে ফেলে রেখে গা ঢাকা দেয় অপহরণকারীরা। পরে পুলিশ রহমতকে উদ্ধার করে কলকাতায় নিয়ে আসে।
পুলিশ জানায়, মহম্মদ মুরাদ এবং আবদুর রহিম মণ্ডল নামে দুই অভিযুক্তকে মঙ্গলবার রাতে বাদুড়িয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে অন্য দুই অভিযুক্ত আফতাবউদ্দিন এবং নিরুজ্জামান মোল্লা ওরফে অনুপ দাসকে নিউ টাউন থেকে পাকড়াও করা হয়।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানতে পেরেছে, অভিযুক্তদের এক জনের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন নিয়ে গোলমাল ছিল রহমতের। সেই টাকা আদায়ের জন্যই অপহরণ করা হয় বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছে ধৃতরা। তদন্তকারীরা ওই দাবি খতিয়ে দেখছেন বলে জানানো হয়েছে পুলিশের তরফে।