প্রতীকী চিত্র।
আমরা সকলেই কাছাকাছি থাকি। কিন্তু গত তিন দিন ধরে অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ নেই। চার দিকে জল। বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো যে যার বাড়িতে বন্দি। একতলার মিটার বক্স জলের নীচে। বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। তাই মোবাইলও চার্জ দেওয়া যাচ্ছে না। প্রতিবেশীদের সঙ্গেও কথা হচ্ছে না। যাঁরা পারছেন, ফোনে খবর দিচ্ছেন নিজের এবং এলাকার।
ভারী বৃষ্টিতে প্রতি বছরই বাড়িতে জল ঢুকে যায় বাগুইআটির জর্দাবাগান, জ্যাংড়া, স্বামীজিপল্লি, বিদ্যাসাগরপল্লি, জ্ঞানেন্দ্রপল্লি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায়। তবে এ বারের মতো করুণ পরিস্থিতি দেখিনি। আমরা এখানে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আছি। এ বার বৃষ্টি বেশি হয়েছে জানি। কিন্তু সদিচ্ছা ও পরিকল্পনা থাকলে দুর্যোগের মোকাবিলা করা সম্ভব।
বৃষ্টি থামার পরে ৩৬ ঘণ্টারও বেশি কেটে গিয়েছে। কিন্তু রাজারহাট-গোপালপুর বিধানসভা কেন্দ্র তথা বিধাননগর পুরসভার ১৬ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড জলে ডুবে রয়েছে। মিটারঘর ডুবে থাকায় বহু বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। ফোনেও চার্জ দিতে পারছেন না অনেকে। আমি অনেকগুলি ক্লাবের সঙ্গে জড়িত। তাই দুর্ভোগে পড়া এক জন ফোন করে সাহায্য চাইছেন। ভিআইপি রোডের ও-পারে সাহাপাড়া, প্রতিবেশী পাড়ার মতো এলাকাগুলিও জলবন্দি। আমার বাড়ির মিটার বক্স উঁচুতে থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হয়নি। কিন্তু একতলায় তিন দিন ধরে জল জমে রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় অনেক বাড়িতেই পাম্প চলছে না। শুরু হয়েছে পানীয় জলের হাহাকার। পুরসভার ট্যাঙ্কারও অমিল। চড়া দামে জলের জার কিনতে হচ্ছে।
কিন্তু কেন এই অবস্থা, তা জানা দরকার। এলাকায় বিবি-১ খালের পাড়ে বহু বছর ধরেই বেআইনি ভাবে বসতি তৈরি হয়েছে। দীর্ঘ কয়েক বছর ওই খালের কোনও সংস্কার হয়নি। খালটি যেখানে গিয়ে নিম্ন বাগজোলা খালে মিশেছে, সেই জায়গা এতটাই সঙ্কীর্ণ যে, কেউ চাইলে হেঁটেই পেরোতে পারবেন। বর্ষার আগেই স্থানীয় বিভিন্ন ক্লাবের সমন্বয় কমিটির লোকজন মিলে বিধাননগর পুরসভার কাছে দরবার করেছিলাম, যাতে বর্ষায় দুর্ভোগ কমে। কিন্তু কিছুই যে হয়নি, বোঝা গেল ভারী বৃষ্টির পরে।
বিবি খাল জলে টইটম্বুর। ইঞ্চি ছয়েকের বেশি জল নামেনি। কোথাও কোথাও দু’ফুট জল। তার উপরে রবিবার থেকে ফের বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এখনই যা জল রয়েছে, সেটাই তিন দিনের আগে নামবে বলে মনে হয় না। এর পরে বৃষ্টি হলে কী হবে, ভাবলেই ভয় করছে।
জল জমা থেকে মুক্তি পেতে পুরসভা রাস্তা উঁচু করেছে। তাতে সমস্যা উল্টে বেড়েছে। বৃষ্টি হলেই রাস্তার জল বাড়ির একতলায় ঢুকে পড়ায় বাড়ির ক্ষতি হচ্ছে। অনেকে বাড়ি বিক্রি করে চলেও গিয়েছেন।
সমস্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে রাস্তার ধারে স্তূপীকৃত নির্মাণ সামগ্রী। বহু বার বলা সত্ত্বেও এলাকার জনপ্রতিনিধিরা সেগুলি সরাতে উদ্যোগী হননি। ওই সব নির্মাণ সামগ্রী এখন গিয়ে পড়ছে নর্দমায়। তাতে নর্দমা যাচ্ছে আটকে। এমন হলে মানুষের দুর্ভোগ কী করে কমবে? ভেবে সত্যিই কোনও কূল পাচ্ছি না আমরা।
(প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার, বাগুইআটির বাসিন্দা)