জমা জলে ভেসে মৃত্যু পথশিশুর

ছ’মাসের ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে অবিরাম বৃষ্টির রাতে ফুটপাথে দোকান লাগোয়া ছাউনির নীচে ঘুমিয়ে ছিলেন পূজা দাস। হঠাত্ ঘুম ভেঙে বুঝতে পারেন, কোলে ছেলে নেই। বৃষ্টির জল তখন রাস্তা ছেড়ে ডুবিয়ে ফেলেছে ফুটপাথকেও। ওই দুর্যোগ মাথায় নিয়ে এ দিক ও দিক তন্নতন্ন করে খুঁজেও সন্ধান মেলেনি শিশুটির।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৫ ০০:৫০
Share:

এখান থেকেই জলে পড়ে যায় ছ’মাসের ভোলা। —নিজস্ব চিত্র।

ছ’মাসের ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে অবিরাম বৃষ্টির রাতে ফুটপাথে দোকান লাগোয়া ছাউনির নীচে ঘুমিয়ে ছিলেন পূজা দাস। হঠাত্ ঘুম ভেঙে বুঝতে পারেন, কোলে ছেলে নেই। বৃষ্টির জল তখন রাস্তা ছেড়ে ডুবিয়ে ফেলেছে ফুটপাথকেও। ওই দুর্যোগ মাথায় নিয়ে এ দিক ও দিক তন্নতন্ন করে খুঁজেও সন্ধান মেলেনি শিশুটির। রাত পেরিয়ে যখন ভোর, হঠাত্ই জানা যায়, মায়ের কোল থেকে পড়ে জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে সে। অচৈতন্য অবস্থায় তাকে পাওয়া গিয়েছে জোড়াসাঁকো থানার বিধান সরণি এবং তারক প্রামাণিক রোডের মোড়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা এবং জোড়াসাঁকো থানার পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

Advertisement

বছর কয়েক আগে এমনই এক বৃষ্টির দিনে ওই দম্পতির প্রথম শিশুটি একই ভাবে জলে ডুবে মারা যায়। পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে প্রচণ্ড বৃষ্টিতে ছেলেমেয়েদের নিয়ে মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের ফুটপাথে শুয়েছিলেন পূজা দাস। হঠাত্ই মাস ছয়েকের ভোলা পড়ে যায় জমা জলে। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, রাতেই শিশুটির বাবা-মা বুঝতে পারেন, ছেলে পাশে নেই। ‘‘কাঁদতে কাঁদতে এসে শিশুটির খোঁজ করেন ওর মা। আমরা ওই বৃষ্টিতেই আশপাশে খুঁজতে যাই। কিন্তু পাইনি,’’ বলেন ওই ব্যক্তি। তিনি আরও জানান, ভোলার বাবা, পেশায় ভ্যানচালক লালা দাসকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ তারই এক বন্ধু এসে খবর দেন, বিধান সরণিতে একটি শিশুকে পাওয়া গিয়েছে। পূজা এবং লালা দু’জনেই গিরিশ পার্ক থানায় ঘটনাটি জানান।

বৃষ্টির কলকাতায় জল জমার জন্য ‘বিখ্যাত’ এই মুক্তারামবাবু স্ট্রিটে শুক্রবার সকাল থেকেই হাঁটুজল পেরিয়ে যেতে যেতে অনেকেই এক বার করে খোঁজ করে নিচ্ছেন ‘‘ওই বাচ্চাটা কোথায় যেন পড়েছিল?’’ যে জায়গা থেকে পড়ে গিয়েছিল শিশুটি, ঠিক তার পাশের গুমটির এক ব্যবসায়ী বললেন, ‘‘প্রায় দশ বছর ধরে ওই শিশুটির মা-বাবা ফুটপাথেই আছেন। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে ওই রাতে এক চিলতে ছাউনিতে মাথা গুঁজে ছিলেন তাঁরা। রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় কখন যে শিশুটি পড়ে যায়, খেয়ালই করেননি। অবহেলার কারণেই এ ভাবে মারা গেল ছেলেটা,’’ মন্তব্য ওই ব্যবসায়ীর। আর এক ফুটপাথবাসী শান্তিদেবী থাকেন উল্টো দিকের তুলনামূলক ভাবে উঁচু একটি গলিতে। তিনি জানান, ক’বছর আগে প্রথম শিশু একই ভাবে মারা যাওয়ার পরেও সতর্ক হননি ওই দম্পতি। অসতর্কতার নিদর্শন অবশ্য পাওয়া যাচ্ছিল তখনই। শান্তিদেবীর সঙ্গে কথা বলতে বলতেই দেখা গেল, মায়ের নজর এড়িয়ে হামাগুড়ি দিতে দিতে প্রায় হাঁটুজলে নেমে গিয়েছে আর একটি শিশু। সেই মুহূর্তে মায়ের নজরে পড়ে যাওয়ায় ভোলার মতো পরিণতি হয়নি ওই শিশুটির।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement