ফাইল চিত্র।
পুজোর সময়ে কলকাতায় ফিরতে বিমানে যাতায়াতের জন্য যে ভিড় অন্যান্য বছরে থাকে, এ বছর করোনা আবহে তা খানিকটা কম। পুজোয় বেড়াতে যাওয়ার হিড়িকটাও এ বছরে প্রায় নেই। সেই সঙ্গে লকডাউনের পরে কাজের খোঁজে ফের ভিন্ রাজ্যে যেতে চেয়ে যে ভাবে বিমানে ভিড় জমিয়েছিলেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা, তাঁদের সংখ্যাও বর্তমানে কমতে শুরু করেছে। ফলে কলকাতা থেকে বিমানযাত্রীর সংখ্যাও ক্রমশ কমছে। যাত্রী টানতে এ সময়ে টিকিটের দাম বেশ কিছুটা কমিয়ে দিলেও পুজোর দিনে ব্যবসা মন্দাই গিয়েছে উড়ান সংস্থাগুলির।
লকডাউনের শেষে মে মাসে ফের অন্তর্দেশীয় উড়ান চালু হওয়ার পরে কলকাতা থেকে যাত্রী সংখ্যা বেড়েছিল। তবে তা বেড়েছিল পরিযায়ী শ্রমিকদের কারণেই। আস্তে আস্তে সেই সংখ্যা কমেছে। সেই সঙ্গে অনেকেই এখন খুব প্রয়োজন ছাড়া বিমানে উঠতে চাইছেন না। ফলে পুজোর দিনেও ফাঁকা রয়ে গিয়েছে বিমানের বহু আসন।
কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা কৌশিক ভট্টাচার্য মঙ্গলবার জানিয়েছেন, এ বার সপ্তমীতে শহর থেকে বিমানে যাতায়াত করেছেন প্রায় ৩১ হাজার যাত্রী। দশমীতে সেই সংখ্যাটা ছিল ২৭ হাজারের কিছু বেশি। কিন্তু অষ্টমী এবং নবমীতে শহর থেকে যাতায়াত করেছেন যথাক্রমে মাত্র ১৭ হাজার এবং ২০ হাজার যাত্রী। অন্যান্য বার উৎসবের মরসুমে ভিড়ের তুলনায় যে সংখ্যাটা খুবই কম। প্রসঙ্গত, গত বছরের অষ্টমী এবং নবমীতে যাতায়াত করেছিলেন যথাক্রমে ৬২ হাজার এবং ৫৭ হাজার যাত্রী।
এখন দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, পুণে, আমদাবাদ এবং নাগপুর থেকে সপ্তাহে চার দিন কলকাতায় সরাসরি উড়ান আসার উপরে রাজ্যের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সোম, বুধ ও শুক্রবার— শুধু এই তিন দিনই ওই শহরগুলি থেকে সরাসরি উড়ান কলকাতায় আসছে। সেই কারণে এ বার অষ্টমী-নবমীর (শনি-রবিবার) থেকে সপ্তমী (শুক্রবার) ও দশমীতে (সোমবার) বিমানযাত্রীদের সংখ্যা কিছুটা বেশি ছিল। অষ্টমী ও নবমীতে যেখানে যথাক্রমে ১৭৯ এবং ১৮৪টি উড়ান যাতায়াত করেছে, সেখানে সপ্তমী ও দশমীতে যাতায়াত করেছে যথাক্রমে ২৫৭ এবং ২৫৮টি উড়ান। ফলে ওই দু’দিন যাত্রী সংখ্যাও কিছুটা বেশি হয়েছে। তবে পুজোর আগে সোম, বুধ ও শুক্রবারে তা-ও তুলনায় একটু বেশিই যাত্রী হচ্ছিল। সপ্তমীর আগের শুক্রবার শহর থেকে যাতায়াত করেছেন ৩৫ হাজারেরও বেশি যাত্রী, যা সপ্তমীর থেকে চার হাজার বেশি। দশমীর আগের সোমবার যাতায়াত করেছেন প্রায় ৩৪ হাজার যাত্রী, যা দশমীর দিনে যাত্রী সংখ্যার তুলনায় সাত হাজার বেশি।
ট্র্যাভেল এজেন্ট ফেডারেশনের পূর্ব ভারতের চেয়ারম্যান অনিল পাঞ্জাবি বলেন, ‘‘দেশের মধ্যে যতটা আশা করেছিলাম, তত যাত্রী হয়নি। মানুষ বিমানে চেপে বেড়াতে যাওয়ার চেয়ে গাড়ি নিয়ে কাছাকাছি কোথাও যাওয়াটা বেশি নিরাপদ মনে করেছেন। শীতকালে আবার একটা সুযোগ থাকবে। এখন তো বাড়ি থেকেই অনলাইনে স্কুলের ক্লাস হচ্ছে। ফলে স্কুল ছুটির বিষয় নেই। অনেক সংস্থার কর্মীরা বাড়ি থেকে কাজ করছেন। ফলে সেই সময়ে ল্যাপটপ নিয়ে
কেউ যদি সপরিবার বেড়াতে যান, তাহলে ভাল।’’ ট্র্যাভেল এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পূর্ব ভারতের চেয়ারম্যান মানব সোনির আবার বক্তব্য, যে হেতু দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলি করোনার কারণে আপাতত বন্ধ রয়েছে, সে কারণে পুজোয় সময়ে বেড়াতে যাওয়ার জন্য বিমানযাত্রীর সংখ্যাও এ বারে কম হয়েছে।