মুখোমুখি: আসরে ‘জীবন্ত বই’ ও পাঠক। রবিবার, রবীন্দ্রতীর্থে। নিজস্ব চিত্র
শীতের দুপুরে খোলা লনে ১৪টি গোল টেবিল পাতা। প্রতিটি টেবিলে এক জন ব্যক্তি বা মহিলাকে ঘিরে বসে আছেন পাঁচ-ছ’জন। ওই ব্যক্তি বা মহিলারা যা বলছেন, তা গভীর আগ্রহে শুনছেন তাঁরা। কখনও কখনও তাঁরাও ছুড়ে দিচ্ছেন প্রশ্ন। হাসিমুখে সেই প্রশ্নের জবাবও দিচ্ছেন বক্তারা।
রবিবার নিউ টাউনের রবীন্দ্রতীর্থে বসেছিল কলকাতার প্রথম ‘হিউম্যান লাইব্রেরি’র আসর। সেখানেই ‘জীবন্ত বই’দের পড়তে ভিড় জমালেন দু’শোরও বেশি পাঠক। শুধু কলকাতা নয়, পাঠক এসেছিলেন বাংলাদেশ থেকেও। তাঁদের দিনভর গল্প বলে গেলেন ‘বই’য়েরা। ‘বই’ ছিল ১৪টি— রূপান্তরকামী, সমকামী, এইচআইভি আক্রান্ত, বডি শেমিংয়ের শিকার হওয়া ব্যক্তি, দৃষ্টিহীন মহিলা, যৌনকর্মী, ঘরোয়া নির্যাতনের শিকার, সোলো ট্র্যাভেলার, মহিলা প্রতিমাশিল্পী, নেশা থেকে মুক্তি পাওয়া ব্যক্তি, অবসাদগ্রস্ত, শিশু নির্যাতনের শিকার, কলকাতার বিভিন্ন শৌচাগারে স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখার জন্য লড়াই করা যুবক। ২০০০ সালে কোপেনহেগেনে তৈরি হয়েছিল এই ‘হিউম্যান লাইব্রেরি’।
এ দিনের আসরে তিন-চার জনকে নিজের ‘গল্প’ বলছিলেন এইচআইভি আক্রান্ত এক ব্যক্তি। গল্পের মাঝেই এক পাঠকের প্রশ্ন— ‘এইচআইভি মানেই কি মৃত্যু’? স্মিত হেসে ‘বই’য়ের জবাব, ‘‘এইচআইভি হয়তো সারে না, কিন্তু মোকাবিলা করা যায়। ২০০৬ সালে জানা যায়, আমি এইচআইভি আক্রান্ত। এখন ২০১৯। দিব্যি তো বেঁচে আছি।’’
আর এক ‘বই’ মৌশ্রী বশিষ্ঠ ছ’বছর বয়সে জটিল রোগে দৃষ্টিশক্তি হারান। তা নিয়ে লড়ে পিএইচডি অর্জন করে তিনি এখন কলকাতা পুলিশের ল’ ইনস্টিটিউটের শিক্ষক। কথা বলতে গিয়ে হোঁচট (স্ট্যামারিং) খান, এমন এক ব্যক্তি মৌশ্রীর লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। মৌশ্রী জানালেন, অসুবিধাকেই নিজের হাতিয়ার করা উচিত। আবার কলকাতার পবন ঢাল লড়ছেন এলজিবিটি সম্প্রদায়ের হয়ে। মাঝবয়সি এই মানুষটি নিজেও সমকামী। নতুন প্রজন্মকে শোনাচ্ছেন তাঁদের লড়াইয়ের কথা।
‘জীবন্ত বই’য়ের গল্পের আসরে এসে খুশি বাংলাদেশের ইশরাত আরা শিল্পী। বললেন, ‘‘এমন তো আগে শুনিনি। তাই এলাম।’’ এক কলেজ-পড়ুয়া ঋষভ সেনের কথায়, ‘‘অনেক কিছুই জানলাম। তবে দু’টোর বেশি বই পড়তে পারলে আরও ভাল লাগত।’’
আসরের অন্যতম উদ্যোক্তা তথা ‘দ্য হিউম্যান লাইব্রেরি, কলকাতা চ্যাপ্টারে’র ফাউন্ডার, বুক ডিপো ম্যানেজার দেবলীনা সাহা বলছেন, ‘‘প্রায় ২৫০ জন এসেছেন। সাড়া মিলবে জানতাম। এতটা ভাল হবে, আশা করিনি।’’