বিপদের সময়ে আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ করে যাত্রীদের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞাপন দেখা যায় প্রায় প্রতিটি মেট্রো স্টেশনেই। প্ল্যাটফর্মে ঝোলানো এলইডি টিভিগুলিতে হামেশাই চোখে পড়ে মেট্রোর তরফের প্রচার। যেখানে দেখানো হয়, দুর্ঘটনা ঘটলে
কামরার কোথায় খুঁজতে হবে অগ্নি-নির্বাপক, কোথায় রয়েছে আপৎকালীন বোতাম। কী করে সেগুলি ব্যবহার করতে হবে, তারও বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। যদিও নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, সেই আপৎকালীন বোতাম কিংবা অগ্নি-নির্বাপক তাঁদের চোখে পড়ে না।
নিত্যযাত্রীদের অনেকেরই দাবি, ওই সব বিজ্ঞাপন দেখে সতর্ক হওয়ার চেষ্টা করেছেন তাঁরাও। তবে নন-এসি কিংবা এসি— কোনও ধরনের ট্রেনেই ওই সব আপৎকালীন ব্যবস্থা তাঁরা খুঁজে পাননি। যদিও যাত্রীদের সেই অভিযোগ মানতে চায়নি মেট্রো।
গত ১৩ জুলাই সজলকুমার কাঞ্জিলাল নামে এক ব্যক্তির হাত মেট্রোর রেকের দরজায় আটকে যায়। সেই অবস্থায় তাঁকে নিয়ে মেট্রো সুড়ঙ্গে ঢুকে যায়। মারা যান সজলবাবু। ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং ওই কামরায় থাকা যাত্রীদের অভিযোগ ছিল, সজলবাবুকে বাইরে ঝুলতে দেখে তাঁরা কামরার আপৎকালীন বোতাম টিপেছিলেন। কিন্তু তা কাজ করেনি। সেই কামরায় আপৎকালীন বোতাম ছিল বলেই জানিয়েছিলেন যাত্রীরা। কলকাতা মেট্রোয় আগুনের ফুলকি দেখতে পাওয়া কিংবা সুড়ঙ্গের ভিতরে কামরা থেকে ধোঁয়া বেরোনোর ঘটনা হামেশাই ঘটে। গত কয়েক বছরে যাত্রীদের ভিড়ও অনেকটাই বেড়েছে।
অনেক যাত্রীরই প্রশ্ন, সব মেট্রোতেই কি আপৎকালীন বোতাম এবং অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র থাকে?
দেবশ্রী সেনগুপ্ত নামে এক নিত্যযাত্রী জানান, মেট্রো স্টেশনের টিভিতে অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্রের বিজ্ঞাপন দেখে একাধিক দিন তিনি সেগুলি কামরায় খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘বেশির ভাগ কামরাতেই ওই সব জিনিস চোখে পড়েনি। এক বার মাত্র একটি কামরায় একটি অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র দেখেছিলাম। কিন্তু সেটি আসনের নীচে এমন জায়গায় রাখা ছিল যে, সাধারণ যাত্রীদের পক্ষে তা জানা সম্ভবই নয়। আদৌ সেই অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্রের মেয়াদ রয়েছে কি না তা-ও দেখা সম্ভব হয়নি।’’
অন্য এক যাত্রী প্রীতম রাই তুলনা করেছেন দিল্লির মেট্রোর সঙ্গে। তাঁর কথায়, ‘‘দিল্লির মেট্রোর রেকের প্রতিটি কামরায় যাত্রীদের চোখের সামনেই যেমন আপৎকালীন বোতাম থাকে, তেমনই প্রতিটি কামরার দরজার পাশেই অগ্নি-নির্বাপক রয়েছে। এ সব ব্যবস্থা চোখের সামনেই থাকা প্রয়োজন। কলকাতা মেট্রো এত নতুন রেক আনছে। তা হলে এ ধরনের রেক আনছে না কেন?’’
মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সব কামরাতেই নির্দিষ্ট জায়গায় আসনের নীচে অগ্নি-নির্বাপক রাখা থাকে। কোথায় আছে সেটাও তির চিহ্ন দিয়ে বলা আছে।’’ তিনি আরও জানান, বিজ্ঞাপনেও দেখানো আছে কোথায় যন্ত্রটি থাকে। ইন্দ্রাণীর ওই দাবির সঙ্গে অবশ্য একমত নন অনেকেই।