দাউদাউ: গুদামে আগুন। সোমবার, তালতলায়। ছবি: সুদীপ ঘোষ
তালতলার একটি কাঠের গুদামের দু’টি তল ছিল প্লাইউড, কাঠের সামগ্রীতে ঠাসা। আশপাশের বাড়িতে বেশ কয়েকটি পরিবারের বসবাস। গুদামের একাংশেও আট জন বাসিন্দা থাকতেন। সোমবার রাতে সেই গুদাম আগুনের গ্রাসে চলে যাওয়ায় আতঙ্কের জেরে শীতের রাতে ফুটপাতেই আশ্রয় নিতে বাধ্য হলেন বাসিন্দারা। ঘটনায় আগুন নেভাতে গিয়ে জখম হন ছ’জন দমকল ও পুলিশকর্মী।
পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার রাত ন’টা নাগাদ তালতলার পূরণচাঁদ নাহার অ্যাভিনিউয়ের ওই কাঠের গুদামে আগুন ধরে যায়। দোতলা গুদামের পুরোটাই দাহ্য পদার্থে ঠাসা হওয়ায় মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। গুদামের পাশেই প্রবীণ প্যাথোলজিস্ট সুবীর দত্তের বাড়ি। ৮৩ বছরের চিকিৎসককে হুইল চেয়ারে বসিয়ে নীচে নামিয়ে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে আনা হয়। সুবীরবাবু বলেন, ‘‘৪০ বছর আগে একই ভাবে এই কাঠের গুদামে আগুন লেগেছিল। তখনই আমরা সতর্ক হওয়ার কথা বলেছিলাম। কিন্তু এত দিনেও কারও শিক্ষা হয়নি। আজকের ঘটনা তার প্রমাণ।’’
পিছনের দিকে লাহাবাড়ির তেতলায় পাঁচটি পরিবার ভাড়া থাকে। প্রাণ বাঁচাতে সকলে রাস্তায় নেমে আসেন। তত ক্ষণে গুদামে যে আট জন থাকতেন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তাঁরাও নেমে আসেন। আগুনের ভয়াবহতা বুঝে দমকলের তরফে একের পর এক ইঞ্জিন পাঠানো শুরু হয়। মুচিপাড়া, নিউ মার্কেট, বৌবাজার থানা-সহ কলকাতা পুলিশের বিশাল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। আসে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও। ঘটনাস্থলে পৌঁছন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু। আগুন ধরে যাওয়া গুদামকে চারপাশ থেকে ঘিরে আগুন নেভানোর কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন দমকলকর্মীরা। তবে রাত ১১টার আগে দমকলকর্মীরা গুদামে ঢুকতে পারেননি।
গুদামের দোতলায় রাখা এসি-তে আগুন ধরে গেলে পূরণচাঁদ নাহার অ্যাভিনিউ থেকে ভিড় সরিয়ে দিতে তৎপর হয় পুলিশ। শিয়ালদহ থেকে তালতলা হয়ে ধর্মতলা যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
এরই মধ্যে পিচের প্রলেপ দেওয়া গুদামের ছাউনি আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যায়। বস্তুত, পিচের ছাউনি আগুনের তীব্রতাকে আরও যেন বাড়িয়ে দেয়।
লাহাবাড়ির একতলার ভাড়াটে কোকিলা পারেখ বলেন, “আমাদের বাড়ি একেবারে গায়েই। শৌচাগারের দরজা পুড়ে গিয়েছে। গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে কোনও মতে পরিবারের বাকিদের সঙ্গে বেরিয়ে আসি।” ঘটনার সময়ে ছেলে রাজীব গোমসকে চা দিচ্ছিলেন মা চিত্রা গোমস। জানলা দিয়ে আগুনের শিখা দেখে দুই ছেলেকে নিয়ে দ্রুত নেমে আসেন চিত্রা। বিপর্যয়ের রাতে ফুটপাতই হয়ে ওঠে তাঁদের আশ্রয়স্থল। এ দিন ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। রাত ১১টা পর্যন্ত দমকলের ১৭টি ইঞ্জিনকে আগুন মোকাবিলায় সচেষ্ট থাকতে দেখা যায়।
রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ দমকলের ডিজি জগমোহন জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে বলা যেতে পারে। তবে আগুনের উৎস স্পষ্ট নয়।