গায়ে গায়ে খাবারের দোকান। নিজস্ব চিত্র।
পুড়ে যাওয়া দোকানগুলির ভিতরে তাকালে যে কারও আতঙ্ক হবে। এক চিলতে সিঁড়ি উঠে গিয়েছে রেস্তরাঁর উপরের দিকে। অন্য দিকে আরও একটি সিঁড়ি রয়েছে। এক দোকান থেকে অন্য দোকানের সামান্যতম ব্যবধানও নেই। প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে ক্রেতাদের ভিড় গিজগিজ করে দোকানগুলি। পয়লা বৈশাখের সন্ধ্যাও তার ব্যতিক্রম ছিল না। রবিবার আচমকা একটি মিটার ঘরে শর্ট সার্কিটের জেরে অল্প সময়ের ব্যবধানে যে ভাবে চারটি দোকান নিমেষে পুড়ে যায়, তাতে ওই ভাবে রেস্তরাঁ তৈরির অনুমতি কী ভাবে দেওয়া হল, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
চিনার পার্কে বছরের পর বছর এমনটা চললেও গত রবিবারের অগ্নিকাণ্ডের পরে নড়েচড়ে বসেছে বিধাননগর পুরসভা। সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পাশাপাশি থাকা দোকানগুলি ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, আগুন আরও ছড়িয়ে পড়লে আরও বড় অঘটন ঘটতে পারত। কারণ ওই সব রেস্তরাঁর পাশেই রয়েছে একটি টায়ারের দোকান এবং পেট্রল পাম্প।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, লোহার কাঠামোর উপরেই হয়েছে যাবতীয় নির্মাণ। ভিতরে ফাইবার, অ্যাসবেস্টস, বোর্ড, কাগজের মতো দাহ্যবস্তু দিয়ে তৈরি করা হয়েছে খাবারের দোকান। ব্যক্তিগত জমি ভাড়ায় নিয়ে ওই সব অস্থায়ী কাঠামোর দোকান তৈরি হয়েছে। এখনও দু’-তিন বছর জমির মালিকের সঙ্গে দোকানগুলির চুক্তি রয়েছে। সুতরাং ঝুঁকি থাকলেও এই মুহূর্তে সেখান থেকে দোকান সরানোর কোনও উপায় নেই বলেই পুর প্রশাসন সূত্রের খবর। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া দোকানগুলি হলুদ ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। বিক্ষিপ্ত ভাবে জটলা করছেন লোকজন। তবে অনিয়ম নিয়ে কেউ কোনও কথা বলতে চাননি। দিন পনেরো আগে ওই চত্বরে খোলা একটি ছোট কাফের মালিক বললেন, ‘‘অল্প সময়ের ব্যবধানে চারটি দোকান পুড়ে গেল। একটি দোকান থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল। তার আগে এমসিবি বাক্সে আগুন লাগে।’’
গার্ডেনরিচ-কাণ্ডের পরে নিজেদের এলাকায় বেআইনি নির্মাণ ঠেকাতে তৎপর পুরসভা। কিন্তু এমন বিপজ্জনক ভাবে তৈরি দোকানও যে কোনও সময়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে, রবিবারের পরে তেমনটাই মনে করছেন চিনার পার্ক এলাকার বাসিন্দারা। ভিআইপি থেকে সিটি সেন্টার-২ পর্যন্ত এলাকা ওই ধরনের দোকানে ভরে গিয়েছে। যেগুলির আইনি বৈধতা ও অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা কী রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে এ দিন জানিয়েছেন বিধাননগর পুরসভার এক শীর্ষ আধিকারিক। এ দিন পুড়ে যাওয়া দোকানগুলি পর্যবেক্ষণ করতে পুরসভা থেকে একটি দলও পাঠানো হয়।
স্থানীয় ১২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল পুরপ্রতিনিধি মমতা মণ্ডল জানান, ‘‘ওই ব্যবসায়ীদের আগেও বলা হয়েছিল, এ বারেও বলা হবে, যাতে তাঁরা সব ধরনের নিয়ম মেনে খাবারের দোকানগুলি চালান। ভিতরে কেন্দ্রীয় ভাবে আগুনে জল ছোড়ার ব্যবস্থাও রাখতে হবে।’’ তবে সেই ভাবনা দোকান ভস্মীভূত হয়ে যাওয়ার পরে কেন মাথায় এল, তা নিয়ে তিনি কিছু বলতে চাননি। উল্লেখ্য, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে এর আগেও ফুটপাতের উপরে ঝুপড়ি দোকান পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়েরা জানান, সিটি সেন্টার-২ এর অদূরে একটি জায়গায় ঝুপড়ি দোকান পুড়ে যাওয়ার পরে ফের সেখানে দোকান বসেছে।
বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী জানান, এই ধরনের দোকান গজিয়ে ওঠা ঠেকানোর দায়িত্ব প্রাথমিক ভাবে নিতে হবে পুর প্রতিনিধিদের। তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে দোকান বসে গিয়ে তাতে আগুন লাগবে, মানুষের জীবন বিপন্ন হবে, এটা মেনে নেওয়া হবে না। পুর প্রতিনিধিদেরই তো এই ধরনের এলাকাভিত্তিক সমস্যার বিষয়ে জানানোর কথা। তাঁরা নিজেরা নিজেদের কাজ করবেন, এটা তো আমি আশা করতেই পারি।’’