বিজয়ী: প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়া জয়িতা চক্রবর্তীর হাতে চেক তুলে দেওয়া হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র
কারও বিরুদ্ধে ব্যাঙ্ক প্রতারণার অভিযোগ। কেউ বা নিকট আত্মীয়ের হত্যায় অভিযুক্ত। কারও আবার নাম জড়িয়েছে পরিজনের মৃত্যুর মামলায়। এই সব নিয়েই চার দেওয়ালের অন্ধকার কুঠুরিতে দিন কাটে তাঁদের। কিন্তু তা সত্ত্বেও নিজেদের ছোট ছোট ভাল লাগা বিসর্জন দেননি তাঁরা। সেই ভাল লাগাকে সঙ্গী করেই নিজেদের প্রতিভা চেনালেন জয়িতা, শৌভিক, তুহিন, আশিস, পরিতোষ ও রঞ্জিতেরা। তাই প্রেসিডেন্সি জেল মাঠে বন্দিদের তৈরি জিনিসপত্রের ‘উইন্টার কার্নিভাল’-এ ভিড় সে ভাবে দেখা না গেলেও জয়িতা-শৌভিক-তুহিনদের মঞ্চের সামনে উপচে পড়ল শ্রোতার ভিড়।
বন্দিদের মধ্যে গানের প্রতিভা খুঁজতে ‘সুপার সিঙ্গার ইনমেট’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল কারা দফতর। গত মাসে রাজ্যের বিভিন্ন জেলে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছেছিলেন জয়িতা চক্রবর্তী, শৌভিক মুখোপাধ্যায়, তুহিন রায়, আশিস সহিস, পরিতোষ ঘোষ ও রণজিৎ দাস। রবি-সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্সি জেল মাঠে সেই প্রতিযোগিতারই ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়।
‘সরফারোশি কি তমন্না অব হমারে দিল...’-এ আক্ষরিক অর্থেই মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিলেন বন্দি গায়কেরা। এক বন্দির কণ্ঠে শোনা গেল, ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে’। রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে নজরুলগীতিতেও মঞ্চ আলো করলেন প্রতিযোগীরা। এই
প্রতিভা যে শুধুমাত্র জেল কুঠুরিতেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়, হাততালিতেই তা বারবার বুঝিয়ে দিলেন উপস্থিত শ্রোতারা। তাঁদের সেই অনুচ্চারিত ইচ্ছেকে সম্মান জানাতেই বুঝি ‘সুপার সিঙ্গার ইনমেট’ প্রতিযোগিতার বিজয়ীকে পেশাদার মঞ্চে পাঠানোর সুযোগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারা দফতর। সেই সঙ্গে বিজয়ীর গানের সিডি-ও প্রকাশ করার ভাবনাচিন্তা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কারা দফতরের ডিজি অরুণ গুপ্ত।
প্রায় দেড় মাসের প্রতিযোগিতায় বিজয়ীর মুকুট উঠল খড়্গপুরের বাসিন্দা জয়িতার মাথায়। পরিজনের মৃত্যুর মামলায় মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে কারাবাস করছেন তিনি। কিন্তু বছর আঠাশের জয়িতার কণ্ঠে তার প্রভাব পড়েনি। বরং জেল কুঠুরিতে সময় পেলেই গানের রেওয়াজ করেন তিনি। হাওড়ার বাসিন্দা শৌভিক রয়েছেন প্রেসিডেন্সি জেলে। দ্বিতীয় হয়েছেন তিনি। প্রতারণা সংক্রান্ত মামলায় সাজাপ্রাপ্ত শৌভিকের পছন্দের শিল্পী মান্না দে ও মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়। তাই প্রতিযোগিতার মঞ্চে ওই শিল্পীদের গান গেয়েছেন তিনি। গানের পাশাপাশি ক্রিকেটের মাঠেও যথেষ্ট দক্ষ শৌভিক। এক আত্মীয়কে খুনের অভিযোগে দমদম জেলে দিন কাটানো তুহিন প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হয়েছেন। রবিবার শুধুমাত্র গান গেয়েই প্রতিভা চেনাননি তুহিন, অন্যদের গানের সঙ্গে বাদ্যযন্ত্রেও সহায়তা করেছেন। এর পাশাপাশি দমদম জেলের ‘রক্তকরবী’ নাটকের দলেও অন্যতম নাম তুহিন।
প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের ট্রফির পাশাপাশি পুরস্কার হিসেবে টাকাও দেয় কারা দফতর। প্রথম স্থানাধিকারীকে ২৫ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানাধিকারী পেয়েছেন যথাক্রমে ১৫ ও ১০ হাজার টাকার চেক। তিন বিজয়ী-সহ চূড়ান্ত পর্বে থাকা মোট ছ’জন বন্দি গায়কদের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে আর্থিক পুরস্কার দিয়েছে দফতর।