Holi 2023

ক্যাম্পাসে জারি হওয়া সতর্কবার্তাকে উপেক্ষা! কোথাও কোথাও বক্স বাজিয়ে শুরু রং খেলা

বছর তিনেক আগে বসন্ত উৎসবে অশ্লীলতার নিরিখে খবরে উঠে এসেছিল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ। এ বছর ওই ধরনের উৎসব না হলেও ক্যাম্পাসে রং খেলা বন্ধ থাকবে না বলেই জানাচ্ছেন পড়ুয়াদের একাংশ।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৩ ০৬:০৩
Share:

রংমিলান্তি: রাস্তাতেই রং খেলতে ব্যস্ত কলেজপড়ুয়ারা। রবিবার, আমহার্স্ট স্ট্রিটে।  ছবি: সুমন বল্লভ।

শিক্ষাঙ্গনে রং খেলার নামে বেপরোয়া উৎসব-যাপন যেন অশ্লীলতা ও উৎশৃঙ্খলতার পর্যায়ে না যায়, তা নিশ্চিত করতে চলতি বছরে বুঝে পদক্ষেপ করছে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিছু জায়গায় এ নিয়ে ক্যাম্পাসে নোটিস টাঙানো হয়েছে। কড়া বার্তা দিয়েছে একাধিক ছাত্র সংগঠনও। তার পরেও প্রশ্ন উঠছে, রবিবার শহরের কিছু ক্যাম্পাস চত্বরে যে ভাবে রং খেলা চলেছে, তাতে সোম ও মঙ্গলবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে তো?

Advertisement

বছর তিনেক আগে বসন্ত উৎসবে অশ্লীলতার নিরিখে খবরে উঠে এসেছিল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মরকতকুঞ্জ (বিটি রোড) প্রাঙ্গণ। সেখানে কয়েক জন তরুণ-তরুণীকে পিঠে-বুকে রং দিয়ে অশ্লীল শব্দ এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত বিকৃত ভাবে লিখতে দেখা যায়। সেই ছবি ভাইরাল হয়,বিষয়টি গড়ায় পুলিশ পর্যন্ত। চিহ্নিত করা হয় বহিরাগত কয়েক জন পড়ুয়াকে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সেই সময়ে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এর ফলে পরের বছর থেকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে বসন্ত উৎসবের আয়োজন বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এ বছর ওই ধরনের উৎসব না হলেও ক্যাম্পাসে রং খেলা বন্ধ থাকবে না বলেই জানাচ্ছেন রবীন্দ্রভারতীর পড়ুয়াদের একাংশ। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা বিশ্বজিৎ দে (বাপ্পা) বললেন, ‘‘প্রতিষ্ঠানের নাম খারাপ হচ্ছিল, তাই ওই ধরনের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে কেউ রং খেললে কারও কিছু বলার নেই।’’ তবে এ বছর নতুন উদ্যোগের কথা শোনালেন সেখানকার পড়ুয়ারা। ‘রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বসন্ত উৎসব এ বার ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র কলেজে’ লেখা একটি ব্যানারের ছবি ঘুরছে পড়ুয়াদের ফোনে ফোনে। নৈহাটির ওই কলেজের প্রাক্তন পড়ুয়া, টিএমসিপি-র বর্তমান রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রবীন্দ্রভারতীর অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে কিছু বহিরাগতের জন্য। তাই রবীন্দ্রভারতীর পড়ুয়াদের নিয়েই এ বার বসন্তোৎসব পালন করবে ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র কলেজ। তবে সেখানে যাতে কোনও অশ্লীলতা না থাকে, তা নিশ্চিত করবে পড়ুয়ারাই।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘আমরা ইতিমধ্যেই বলেছি, কাউকেই জোর করে রং বা আবির মাখানো চলবে না। বসন্তোৎসবের ঐতিহ্য বজায় রাখতে হবে।’’

Advertisement

একই রকম কড়া পদক্ষেপের বার্তা দিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নোটিস দিয়ে জানিয়েছেন, আগে অনেক সময়েই রং উৎসবের নামে ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। তাই অশোভন আচরণ রুখতে বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবে দোল খেলতে হবে। কাউকে জোর করে রং মাখানো যাবে না। ক্যাম্পাসের পঠনপাঠনের পরিবেশেও বিঘ্ন ঘটানো যাবে না। এই নির্দেশ লঙ্ঘনে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে নির্দেশিকায়। যদিও শনিবারই ওই ক্যাম্পাসে দেদার রং খেলা হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, এমন সতর্কবার্তা তাঁরা আগেও জারি করেছেন।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবাশিস দাস বললেন, ‘‘আলাদা করে কোনও নির্দেশিকা জারি করিনি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করা হয় না।’’ একই রকম উৎসবের আয়োজন না করার ঘোষণা করেছেন আশুতোষ কলেজ, জয়পুরিয়া কলেজ বা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজ কর্তৃপক্ষও। আশুতোষ কলেজে আবার পরীক্ষা চলবে বলে জানাচ্ছেন সেখানকার ছাত্রনেতারা। তবে এর ফাঁকেই শ্যামাপ্রসাদ কলেজের (আশুতোষ কলেজের সান্ধ্য বিভাগ) তরফে বসন্তোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে সোমবার। কলকাতাবিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও জানাচ্ছেন, আজ, সোমবার সেখানে দোল খেলা উপলক্ষে ভাড়া করা হয়েছে কয়েকটি সাউন্ড বক্স।

রবিবারেও এমন সাউন্ড বক্সের দাপটের অভিযোগ উঠেছে ফুলবাগানের গুরুদাস কলেজ চত্বর থেকে। অভিযোগ, সেখানে কলেজের মূল দরজায় তালা লাগানো থাকলেও ক্যাম্পাস চত্বরে চলেছে দেদার রং খেলা। এক স্থানীয় বাসিন্দা সখেদে বলছেন, ‘‘রং খেলার নামে এই বেলাগাম উৎসব বন্ধ হবে কবে? ছুটির দিনে এই সব চলছে। না শিক্ষকেরা দেখছেন, না পুলিশ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement