Durga Puja 2023

শারদীয়া রোদ কই, বৃষ্টিতে মাথায় হাত শিল্পীদের

মহালয়ার আর ১৫ দিনও বাকি নেই। অথচ, টানা বৃষ্টিতে প্রতিমা তৈরির কাজ ঠিক মতো এগোতেই পারছেন না শিল্পীরা। শুক্রবার রাত থেকে ফের শুরু হয়েছে বৃষ্টি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:৫১
Share:

আড়াল: টানা বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে প্লাস্টিকে ঢাকা হচ্ছে প্রতিমা। শনিবার। ছবি: সুমন বল্লভ।

কুমোরটুলির চালা ঘরে প্লাস্টিকে বন্দি দুর্গা প্রতিমা। ঘরের সামনের অংশটিও প্লাস্টিকে ঢাকা। প্রতিমার প্লাস্টিকের মধ্যেই কোনও মতে জনা দুই কর্মী ঢুকে পড়েছেন। ব্লু ল্যাম্প জ্বালিয়ে মাটির উপরে সদ্য দেওয়া সাদা রঙের প্রলেপ শুকোতে ব্যস্ত তাঁরা। হঠাৎ দমকা হাওয়ায় বৃষ্টির ছাঁট আসতেই ভিতর থেকে এক জন চিৎকার করে বললেন, ‘‘ওরে, আরও কিছু প্লাস্টিক দোকান থেকে এনে ঢেকে দে। এর পরেও যদি প্রতিমা ভেজে, তা হলে আর দেখতে হবে না!’’

Advertisement

মহালয়ার আর ১৫ দিনও বাকি নেই। অথচ, টানা বৃষ্টিতে প্রতিমা তৈরির কাজ ঠিক মতো এগোতেই পারছেন না শিল্পীরা। শুক্রবার রাত থেকে ফের শুরু হয়েছে বৃষ্টি। গত সপ্তাহে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টির পরে রোদ-ঝলমলে আবহাওয়া দেখে নতুন উদ্যমে প্রতিমার কাজ শুরু করেছিল কুমোরপাড়া। কিন্তু কয়েক দিন যেতে না যেতেই ফের নিম্নচাপ চিন্তা বাড়িয়েছে কুমোরটুলির শিল্পীদের। পুজোর মুখে রাত-দিন এক করে কাজ শেষ করার বদলে টানা বৃষ্টিতে অধিকাংশ অসমাপ্ত প্রতিমাই প্লাস্টিকে ঢেকে দিতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। নিম্নচাপ কবে কাটবে এবং প্রতিমা রং করার কাজ কবে শেষ হবে, সেই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন তাঁরা।

কুমোরটুলির শিল্পীদের একাংশ জানাচ্ছেন, প্রতিমার কাজ শেষ করার দিন দশেক আগে সাধারণত রঙের কাজে হাত দেওয়া হয়। খুব দ্রুত কাজ হলেও রং করে প্রতিমার সব কাজ শেষ করতে দিন সাতেকের বেশি সময় লেগে যায়। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ হলে সেই কাজের সময় আরও বেড়ে যায়। বড় বড় পুজো কমিটিগুলি মহালয়ার আগেই উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঠিক করে রাখায় সেখানে তারও আগে প্রতিমা পৌঁছে দেওয়ার বরাত নিয়ে রেখেছেন শিল্পীদের একাংশ। কিন্তু নিম্নচাপের বৃষ্টিতে এখন তাঁদের মাথায় হাত। পরিস্থিতি এমনই যে, অন্য সব কাজ ফেলে বৃষ্টির হাত থেকে প্রতিমা বাঁচাতেই ব্যস্ত থাকছেন শিল্পীরা।

Advertisement

কুমোরটুলির শিল্পী মিন্টু পাল বললেন, ‘‘রঙের কাজ তো ব্লু ল্যাম্প দিয়ে শুকিয়ে হবে না। রোদের সঙ্গে সঙ্গে ভাল আবহাওয়া লাগে। এক বার রঙের প্রলেপ দেওয়ার পরে অন্তত ঘণ্টা চারেক শুকোনোর সময় দিয়ে হয়। কিন্তু আবহাওয়ার যা অবস্থা, এক বার প্রলেপ দিলে সাত ঘণ্টাতেও শুকোচ্ছে না। কাজ এগোবে কী করে!’’ ডেকরেটরের কাছ থেকে গুটিকয়েক বড় পাখা এনে প্রতিমার রং শুকোনোর ব্যবস্থা করতে বাধ্য হয়েছেন শিল্পীদের একাংশ। কেউ কেউ আবার বড় আলো জ্বেলে সেই তাপে রং শুকোনোর ব্যবস্থা করছেন। শিল্পী প্রদ্যোত পাল ব‌‌ললেন, ‘‘কাজ তো সময়ে শেষ করতেই হবে। আবহাওয়া খারাপ হলেও এর তো কোনও বিকল্প নেই। অক্টোবরের শেষে পুজো। তাই ভেবেছিলাম, বৃষ্টির ঝামেলা এড়িয়ে কাজ করা যাবে। কিন্তু বৃষ্টি এ বছরও আমাদের পিছু ছাড়ল না।’’

আবহাওয়ার কারণে খরচের বহরও বেড়ে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন শিল্পীরা। এই সময়ে নতুন করে কর্মী আর না মেলায় হাতে থাকা কর্মীদের দিয়েই অতিরিক্ত সময় (অতিরিক্ত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে) কাজ করাতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। তবে, খরচ বাড়লেও আপাতত দুর্যোগ কাটিয়ে কয়েক দিনের জন্য আশ্বিনের পরিচিত নীল মেঘের দেখা পেতে চাইছেন তাঁরা। শিল্পী পার্থ পালের কথায়, ‘‘সপ্তাহখানেক রোদ পেলেই হবে। দিন-রাত এক করে কাজ শেষ করে দেব। কিন্তু সেটা আদৌ হবে কি না, সেটাই তো কেউ বলছে না!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement