মর্মান্তিক: দুর্ঘটনার পরে গাড়িটি।
এঁকেবেঁকে তীব্র গতিতে বিমানবন্দরের দিকে ছুটে যাচ্ছিল চার চাকার একটি গাড়ি। আচমকাই নিউ টাউনের সৃষ্টি মোড় থেকে ইউ-টার্ন নিতে যায় সেটি। তখনই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন চালক। গাড়িটির গতি তখন খুব বেশি থাকায় চালক ব্রেক কষার চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি। চাকা ঘষটাতে ঘষটাতে প্রায় ৪০ ফুট দূরে গিয়ে প্রথমে একটি ডিভাইডারে ধাক্কা মারে সেটি। যার জেরে ফেটে যায় বাঁ দিকের চাকা। এর পরে ফুট পাঁচেক শূন্যে উঠে গিয়ে মেট্রোর স্তম্ভে ধাক্কা মারে। তার পরে সার্ভিস রোডে গিয়ে আরও একটি ডিভাইডারে ধাক্কা মারে গাড়িটি।
মঙ্গলবার ভোর সওয়া পাঁচটা নাগাদ এই দুর্ঘটনায় তিন আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। বাকি দু’জনের মধ্যে এক জনের আঘাত গুরুতর। অন্য জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ জানায়, মৃতদের নাম নিশিধ জয়সওয়াল (১৭), কৌশল ঝাওয়ার (১৭) এবং ময়াঙ্ক ঝাওয়ার (১৮)। আহতদের নাম মোহিত জৈন (২১) এবং সর্বজিৎ সিংহ (১৮)। পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্যাস কাটার দিয়ে গাড়ির অংশ কেটে মোহিতকে বার করতে হয়। দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির এয়ারব্যাগ খুলে গেলেও তাতে শেষরক্ষা হয়নি বলেই জানাচ্ছেন ফরেন্সিক তদন্তকারীরা।
ফরেন্সিক সূত্রের খবর, দুর্ঘটনার বিষয়ে আরও তথ্য জানা প্রয়োজন। তার জন্য গাড়িটির নির্মাণকারী সংস্থার লোকজনকে ডাকা হয়েছে। গাড়িটির বডি কন্ট্রোল ইউনিটও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই ইউনিট পুনরায় চালু করতে না পারলে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু তথ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, মোহিত ও সর্বজিৎ সল্টলেকের এএইচ এবং সিএফ ব্লকের বাসিন্দা। নিশিধের বাড়ি বিডন স্ট্রিটে এবং ময়াঙ্ক ও কৌশলের বাড়ি কাঁকুড়গাছি-ফুলবাগান এলাকায়। প্রত্যেকেই ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান। ময়াঙ্ক সেন্ট জ়েভিয়ার্স কলেজে বাণিজ্যের স্নাতক স্তরের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। কৌশল একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়ত। নিশিধ পড়ত দ্বাদশ শ্রেণিতে।
আহতদের সঙ্গে কথা বলার পরে পুলিশ জানায়, সল্টলেকে মোহিতের বাড়ি থেকে পাঁচ বন্ধু বেরিয়েছিলেন। গাড়ি চালাচ্ছিলেন মোহিতই। তাঁর পাশে বসেছিলেন সর্বজিৎ। কৌশল, ময়াঙ্ক এবং নিশিধ পিছনের সিটে। গাড়ি চলছিল তীব্র গতিতে। পুলিশের দাবি, আহতেরা জানিয়েছেন, রাতভর পার্টি করার পরে একটু হাওয়া খেতেই তাঁরা গাড়ি নিয়ে বেরোন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরে পুলিশ জেনেছে, শুধু সর্বজিৎ ও মোহিত নয়, বাকি তিন জনও মত্ত অবস্থায় ছিল। তবে তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। পুলিশের অনুমান, দুর্ঘটনার সময়ে ঘণ্টায় ৮০-১০০ কিলোমিটারের কাছাকাছি গতিবেগ ছিল ওই গাড়ির।
ময়াঙ্ক, কৌশল ও নিশিধের পরিবারের অবশ্য দাবি, তিন জনকেই ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ বাড়ি থেকে বেরোতে দেখা যায়। যদিও সর্বজিতের দাদা হরজ্যোত সিংহ জানান, তাঁর ভাই সোমবার রাতে মোহিতের বাড়িতেই ছিলেন। সেখান থেকেই বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়েছিলেন তিনি। কৌশল, ময়াঙ্ক এবং নিশিধের পরিবার অবশ্য এই ঘটনার বিষয়ে বিশদে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
ময়াঙ্কের এক আত্মীয় সি কে শর্মা অবশ্য পুলিশের বক্তব্য খারিজ করে দাবি করেন, খুড়তুতো ভাই কৌশলের সঙ্গে ওই তরুণ ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিলেন। তাঁর দাবি, ময়াঙ্ক উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পরীক্ষায় খুব ভাল ফল করেছিলেন। ভাল ছেলে হিসেবেই তাঁর পরিচিতি ছিল। তাই তিনি ভোরবেলা মত্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরছিলেন, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।
পুলিশ অবশ্য বলছে, আহতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রত্যেকেরই মত্ত অবস্থায় থাকার কথা জানা গিয়েছে। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনায় বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানো ও অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে। মোহিতের বাড়িতে গেলে কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তাঁর মা জানান, মোহিতের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁরা কথা বলার অবস্থায় নেই। ওই বাড়ির কেয়ারটেকার জানান, ভোরে মোহিত গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলেন।