চিকিৎসকদের মিছিলে ছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। ছবি: সুদীপ্তা চৌধুরী সরকার।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকের মৃত্যুর পর ৩০ দিন কেটেছে। এ বারের বিচারের দাবিতে সুর আরও চড়া করল নির্যাতিতার পরিবার। মৃতা চিকিৎসকের মা অভিযোগ করলেন, প্রাসনিক অসহযোগিতার। বাবা প্রশ্ন তুললেন পুলিশি তদন্ত নিয়ে। আর কাকিমা আবেদন করলেন, যত দিন না বিচার মিলছে, তত দিন যেন এই আন্দোলন চালিয়ে যায় নাগরিক সমাজ। তাঁদের দাবি, দ্রুত আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের বিচার।
রবিবার এনআরএস হাসপাতাল থেকে ধর্মতলার উদ্দেশে মিছিল করেন চিকিৎসকেরা। সেই মিছিলে ছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা-সহ পরিবারের সদস্যেরা। সকলের দাবি একটাই, দ্রুত বিচার। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর, সোমবার আরজি করের ঘটনার শুনানি রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। তার আগে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ (আমরা বিচার চাই) স্লোগানের বদলে নির্যাতিতার কাকিমা বললেন, ‘উই ডিমান্ড জাস্টিস’ (বিচার আমাদের দাবি)। তাঁদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে চিকিৎসকেরা বলেন, ‘‘একটাই দাবি আমাদের। বিচার চাই। এ বার সুপ্রিম কোর্টের পরীক্ষা। আমরা আশাহত হয়ে আছি, আমাদের আশা পূরণ করতে পারে শীর্ষ আদালতই।’’
রবিবার ধর্মতলায় দাঁড়িয়ে নির্যাতিতার বাবা জানান, সহজে বিচার পাবেন না, তাঁরা সেটা জানেন। কিন্তু সবাই পাশে থাকলে মেয়ের মৃত্যুর বিচার তিনি ছিনিয়ে আনবেন। তিনি বলেন, ‘‘মেয়ের সঙ্গে যে জঘন্য অপরাধ হয়েছে, তার যে সম্মিলিত প্রতিবাদ হচ্ছে, তাতে আমি সাহস পেয়েছি। সবাইকে বলতে চাই, আমার সঙ্গে থাকুন। যা পরিস্থিতি দেখছি, বিচার সহজে পাব না। বিচার আমাদের ছিনিয়ে নিয়ে আসতে হবে। আশা করি, সবাই আমাকে সহযোগিতা করবেন। আপনারাই আমার সাহস।’’ মৃতা চিকিৎসকের মা ধন্যবাদ জানান সকল আন্দোলনকারীকে। তিনি আঙুল তুলেন পুলিশ-প্রশাসনের দিকে। নির্যাতিতার মায়ের কথায়, ‘‘ছোট থেকেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। বলত, ‘আমি ডাক্তার হব মা।’ বড় হয়ে ডাক্তার হয়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আরজি করে বলিদান করল আমার মেয়ে। নৃশংস, অত্যাচারিত হয়ে হয়তো মেয়েটা ‘মা-মা’ বলেছে। প্রতি দিন কানে মেয়ের ‘মা’ ডাক শুনি।’’ এর পর তিনি অভিযোগ করেন তদন্ত নিয়ে। নির্যাতিতার মা বলেন, ‘‘সরকার, পুলিশ-প্রশাসন প্রথম থেকে আমাদের অসহযোগিতা করেছে। তারা সহযোগিতা করলে আমরা আশার আলো দেখতাম। কিন্তু প্রথম থেকেই প্রমাণ লোপাট করেছে পুলিশ। শুধু একটাই আবেদন, যত দিন আমার মেয়ে বিচার না পায়, আপনারা আন্দোলন জারি রাখুন।’’
এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের পদত্যাগের দাবিতে লালবাজার অভিযান করেন চিকিৎসকেরা। সেই মিছিল বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের কাছে ব্যারিকেড করে রুখে দেয় পুলিশ। জুনিয়র চিকিৎসকেরা সেখানেই রাতভর অবস্থান করেন। পরের দিন কলকাতার পুলিশ কমিশনার তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন তাঁরা। গোয়েলের হাতে পদত্যাগের আর্জিপত্র তুলে দেন চিকিৎসকেরা। রবিবার চিকিৎসকদের আর এক মিছিল থেকে চিকিৎসকের কাকিমা বলেন, ‘‘ছোট থেকে যে মেয়েটাকে বড় হতে দেখেছি, বাপি-মায়ের সঙ্গে যে কাকিমা ডাক শুনেছি মেয়েটার গলায়, আমাকে কাকিমা বলার মতো আর কেউ নেই।’’ কান্নাভেজা গলায় তিনি জানান, মৃত্যুর দিন দশেক আগে বাড়িতে দুর্গাপুজো করবেন বলে তাঁর সঙ্গে কথা হয় চিকিৎসকের। তিনি বলেন, ‘‘মৃত্যুর দিন ১০ আগেও সারা রাত কত গল্প, কত প্ল্যান করলাম। বাড়িতে দুর্গাপুজো হবে বলে কত কথা হল। তার ১০ দিন পরে যে আমাদের ভাগ্যে এমন নিষ্ঠুর দিন অপেক্ষা করছে, কল্পনা করতে পারিনি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘শুধু বলতে চাই, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ না। ‘উই ডিমান্ড জাস্টিস’। আপনারাও সবাই বলুন, আমদের দাবি ‘জাস্টিস’। যত দিন না এই ঘটনার সুবিচার আসে, তত দিন আপনারা কেউ রাস্তা ছাড়বেন না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা হয়তো প্রতি দিন রাস্তায় নামতে পারি না। অনেক প্রতিকূলতা থাকে। বাধা আছে। কিন্তু আপনারা কেউ এই জায়গা ছাড়বেন না।’’ তাঁর বলা শেষ হতেই সমস্বরে চিকিৎসকেরা বলে ওঠেন, ‘উই ডিমান্ড জাস্টিস’।