Post Mortem

করোনায় মৃত্যু না-হলেও হচ্ছে ময়না-তদন্ত

কোভিড-ত্রস্ত আবহে এ ভাবেই করোনায় মৃত্যু না হলেও ডেথ সার্টিফিকেট পেতে দেহের ময়না-তদন্ত করাতে হচ্ছে পরিবারকে।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া 

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২০ ০৫:৩৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

আচমকা অসুস্থ হয়ে রাতেই মারা গিয়েছিলেন কড়েয়া লোয়ার রেঞ্জ এলাকার বছর পঞ্চান্নের এক মহিলা। পড়শিদের সাহায্য নিয়ে ওই মহিলার স্বামী রাতেই এলাকার বেশ কিছু চিকিৎসককে ফোন করলেও করোনা-আবহে তাঁদের কেউই আসতে রাজি হননি। শেষে পরের দিন সকালে বাধ্য হয়ে পড়শিরা ফোন করেন থানায়। তার পরেই পুলিশ পৌঁছে ওই মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। কিন্তু ডেথ সার্টিফিকেট পেতে মৃতার দেহের ময়না-তদন্ত করাতে বাধ্য হয় তাঁর পরিবার।

Advertisement

মাস খানেক আগে একই ঘটনা ঘটেছিল টালা থানা এলাকাতেও। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত তরুণী বাড়িতে শয্যাশায়ী ছিলেন। হঠাৎ এক সকালে তরুণীর মা দেখেন, মেয়ে সাড়া দিচ্ছেন না। কিন্তু করোনা-আতঙ্কে সাহায্য করার বদলে নিজেদের বাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ করে দেন প্রতিবেশীরা। এর পরে মেয়ের দেহ নিয়ে মা একা কয়েক ঘণ্টা বসে রয়েছেন বলে খবর পেয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর পুলিশ ডাকেন। পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সে ক্ষেত্রেও মা তাঁর মেয়ের দেহ এবং ডেথ সার্টিফিকেট পান ময়না-তদন্তের পরেই।

কোভিড-ত্রস্ত আবহে এ ভাবেই করোনায় মৃত্যু না হলেও ডেথ সার্টিফিকেট পেতে দেহের ময়না-তদন্ত করাতে হচ্ছে পরিবারকে। কারণ, অসুস্থ রোগীকে বাড়িতে এসে দেখে গেলেও এবং তাঁর বাড়িতে মৃত্যু হলেও শংসাপত্র দিতে ইতস্তত করছেন চিকিৎসকেরা। ফলে করোনায় মৃত্যু না হলেও দেহ হাসপাতালে নিয়ে যেতে পুলিশের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে পরিবারকে। আর পুলিশ কোনও মৃতদেহ হাসপাতালে নিয়ে গেলে নিয়মমাফিক তার ময়না-তদন্তও করাতে হচ্ছে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, কড়েয়া এবং টালা দু’টি ঘটনাতেই ময়না-তদন্তের রিপোর্টে কোনও অস্বাভাবিক কিছুই মেলেনি। করোনা সংক্রমণের লক্ষণও মেলেনি। কিন্তু শুধুমাত্র ডেথ সার্টিফিকেট পেতে আর পড়শিদের আতঙ্কেই ময়না-তদন্ত করাতে হয় ওই দুই পরিবারকে।

কিন্তু এমন ঘটনা ঘটছে কেন?

বিভিন্ন থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, অনেক সময়েই কেউ অসুস্থ হলে পারিবারিক চিকিৎসককে ডেকে দেখাচ্ছে ওই রোগীর পরিবার। সে ক্ষেত্রে রোগীর শরীরে করোনা-উপসর্গ না থাকলেও করোনা পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়েছেন ডাক্তার। কিন্তু সেই পরীক্ষার রিপোর্ট আসার আগেই মারা গিয়েছেন রোগী। সে ক্ষেত্রে পরিচিত চিকিৎসকের থেকে মৃত্যুর শংসাপত্র নিয়ে দেহ সৎকার করার পরে জানা যাচ্ছে, মৃত্যুর সময়ে ওই রোগী কোভিড পজ়িটিভ ছিলেন। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে এখন আর চিকিৎসকেরা বাড়িতে এসে ডেথ সার্টিফিকেট দিতে চাইছেন না। ফলে কোভিডে আক্রান্ত না–হলেও পুলিশ ডাকতে হচ্ছে মৃতের পরিবারকে। তবে কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অতীন ঘোষ বলছেন, “আগের থেকে এই সমস্যা অনেকটাই কমেছে। প্রথম প্রথম অনেক চিকিৎসকই রোগী দেখতে যেতে বা পরে মৃত্যু হলে ডেথ সার্টিফিকেট দিতে চাইছিলেন না। কিন্তু এখন অনেকেই বুঝতে পারছেন যে, পিপিই পরে গিয়ে ডেথ সার্টিফিকেট দিতে অসুবিধা নেই। আসলে করোনা-আতঙ্কের কারণে কিছুটা সামাজিক ব্যাধিও তৈরি হয়েছে। আশা করছি এটাও দ্রুত কেটে যাবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement