স্মরণ: বিশ্বজিৎ ভুঁইয়া ও সঞ্জয় বনুর ছবির পাশে সঞ্জয়ের বাবা-মা নীলরতন এবং টুম্পা বনু। বৃহস্পতিবার, শান্তিনগরের ফ্ল্যাটে। নিজস্ব চিত্র।
২০১৮। দু’টি পরিবারের কাছেই অভিশপ্ত দিন। আজও বাড়ির আশপাশে কোনও দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যুর খবর শুনলে পুরনো কথা মনে পড়ে পরিবারের সদস্যদের চোখ ভিজে যায়। ওই দিনই বাড়ির অদূরে বাসের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল দুই পরিবারের দুই ছেলের। ঘটনাস্থল: চিংড়িঘাটা।
বুধবার সেই চিংড়িঘাটাতেই দুর্ঘটনা ঠেকাতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিধাননগর ও কলকাতা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও সে সবে উৎসাহ নেই নীলরতন বনু কিংবা হৃদয় ভুঁইয়ার। সরকারি ব্যবস্থাপনার উপর থেকে কার্যত আস্থা হারিয়েছে দু’টি পরিবারই। অভিযোগ, দুই বাড়ির দুই ছেলের মৃত্যুর পরে লালবাজার থেকে ৫০ হাজার এবং স্থানীয় বিধায়ক সুজিত বসুর তহবিল থেকে আরও ৫০ হাজার টাকা করে সাহায্য দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া বিধায়কের উদ্যোগে নীলরতনের পৈতৃক জমিতে দ্রুত একটি ছোট ফ্ল্যাট করে দিয়েছিলেন প্রোমোটার। আর কোনও সরকারি ক্ষতিপূরণ তাঁরা পাননি বলে দাবি। ওঁদের দাবি, ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি তাঁদের দেওয়া হয়েছিল।
২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি নীলরতনের ছেলে সঞ্জয় এবং হৃদয়ের ভাইপো বিশ্বজিতের মৃত্যু হয়েছিল চিংড়িঘাটা মোড়ে, একটি বাসের ধাক্কায়। বঙ্গবাসী কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র, অভিন্ন হৃদয় দুই বন্ধু সঞ্জয় ও বিশ্বজিৎ তাঁদের আর এক বন্ধুর দাদার বিয়ের জন্য মিষ্টি কিনে ফিরছিলেন। দুর্ঘটনার পরে বাইপাসে বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় ক্ষুব্ধ জনতা।
বৃহস্পতিবার বিধাননগর পুরসভার সংযুক্ত এলাকা শান্তিনগরে নিজেদের একচিলতে ফ্ল্যাটে বসে সঞ্জয়ের বাবা-মা নীলরতন ও টুম্পার ক্ষোভ, ‘‘ঘোষণা করা হয়েছিল, সরকার থেকে দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবে। এলাকায় প্রচার হয়ে গেল, আমরা ওই ক্ষতিপূরণ পেয়েছি। বিশ্বাস করুন, কোনও সরকারি ক্ষতিপূরণ পাইনি। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট দেখাতে পারি।’’ একই অভিযোগ বিশ্বজিতের জেঠু হৃদয়েরও।
টুম্পা ও নীলরতন জানান, ওই সময়ে তাঁরা ছেলের শোকে কাতর। ক্ষতিপূরণ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে তাঁদের কিছু কাগজপত্রে সইও করানো হয়। এমনকি, তাঁদের মেয়ে চাকরি পাবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি ওই দম্পতির। তাঁদের কথায়, ‘‘দুর্ঘটনার মামলারও কী হল, জানি না।’’ বিশ্বজিতের জেঠু হৃদয়ের কথায়, ‘‘কী লাভ পুরনো কথা তুলে। সে সব কথা উঠলে ভাইপোর মুখটা ভেসে ওঠে। কত জন এসে কত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এখন সব ঠান্ডা।’’
শান্তিনগর এলাকায় পরিস্রুত পানীয় জলের অভাব। ই এম বাইপাস টপকে বেলেঘাটা থেকে কলকাতা পুরসভার জল সংগ্রহ করে নিজেদের এলাকায় বিক্রি করেন নীলরতন। তাঁর কথায়, ‘‘ভেড়ির অস্থায়ী কর্মী হিসাবে যে উপার্জন, তাতে সংসার চলে না। মেয়ে স্নাতক পাশ করেছে। একটা চাকরি পেলে লেখাপড়াটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারত।’’
চিংড়িঘাটা অঞ্চলে গত ৬ নভেম্বর এবং ১৬ নভেম্বর দু’জনের মৃত্যুর ঘটনার খবর পেয়ে খারাপ লেগেছে শান্তিনগরের বাসিন্দাদের অনেকেরই। টুম্পা ও নীলরতন বললেন, ‘‘এর পরে ওই পরিবারগুলির কী হবে, সেটা ভেবেই কষ্ট হয়। জানি না, ওঁদেরও ক্ষতিপূরণের কোনও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে কি না।’’
স্থানীয় ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের কোঅর্ডিনেটর প্রবীর সর্দারের দাবি, ‘‘বিধায়ক তাঁর তহবিল থেকে সাহায্য করেছিলেন। একটি পরিবারের বসবাসের সমস্যা ছিল, সেটার সমাধান করা হয়েছিল। আর তো ওঁরা কখনও যোগাযোগ করেননি।’’