প্রতীকী ছবি।
চার বছর হয়ে গেল, বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু লুকিয়ে-চুরিয়ে নিষিদ্ধ সেই মাদক, পোস্তখোসা বিক্রির খবর আসছিল আবগারি দফতরের কাছে। গত দু’দিন ধরে বড়বাজারে হানা দিয়ে প্রায় দু’হাজার কিলোগ্রাম পোস্তখোসা বাজেয়াপ্ত করেছে রাজ্য আবগারি দফতর। গ্রেফতার করা হয়েছে তিন জনকে। বাজেয়াপ্ত হওয়া মাদকের বাজারদর প্রায় এক কোটি টাকা বলে জানা গিয়েছে।
কী এই পোস্তখোসা?
এটি আসলে পোস্ত ফলেরই একটি অংশ। জল গরম করে তাতে ওই খোসা ফেলে ভিজিয়ে রাখা হয়। পরে সেই জল খেলে তা থেকে নেশা হয়। পঞ্জাবে এই নেশা খুব জনপ্রিয়। সেখানে এটি পরিচিত ‘ভক্কি’ নামে। মূলত পঞ্জাবের লরিচালকেরাই এই নেশা করেন। বাঙালিদের মধ্যে পোস্তখোসার নেশা করার প্রবণতা তুলনায় অনেক কম। বিহার, উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দারাও এই নেশা করেন। এ রাজ্যে হাইওয়ে সংলগ্ন বিভিন্ন ধাবাতেও লুকিয়ে পোস্তখোসা বিক্রি হয় বলে আবগারি দফতর সূত্রের খবর।
রাজ্য আবগারি দফতরের বিশেষ কমিশনার সুব্রত বিশ্বাস জানিয়েছেন, তাঁদের ব্যারাকপুর শাখার যুগ্ম কমিশনার সুদেষ্ণা চক্রবর্তীর নেতৃত্বে অফিসারেরা হানা দিয়ে যে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে, তাঁরা হলেন কৃষ্ণকুমার মিশ্র, মহেন্দ্র গুপ্ত এবং মাধব দত্ত।
এক সময়ে সারা ভারতে আফিম চাষ বৈধ ছিল। বহু মানুষ চিকিৎসকের পরামর্শে আফিম খেতেন। ১৯৮৫ সালে সেই ঢালাও লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। শুধু সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত কয়েকটি সংস্থাই পোস্তখোসার ব্যবসা করতে শুরু করে। তার মধ্যে এ রাজ্যের কয়েক জন ব্যবসায়ীও ছিলেন। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়ে তাঁদের কাছে গেলে তাঁরা সেই পোস্তখোসা দিতেন। শুধু মরফিনের মতো ওষুধ তৈরির জন্য সরাসরি সরকারি তত্ত্বাবধানে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশে আফিমের চাষ চলতে থাকে।
ঠিক হয়, আস্তে আস্তে পোস্তখোসা বিক্রির অনুমোদনও রদ করে দেওয়া হবে। ২০১৬ সালে সারা দেশে পোস্তখোসা বিক্রিও নিষিদ্ধ হয়ে যায়। সুব্রতবাবু জানিয়েছেন, ধৃতদের মধ্যে কৃষ্ণকুমার এবং মহেন্দ্রর আগে পোস্তখোসা বিক্রির পারিবারিক ব্যবসা ছিল। সেই লাইসেন্স ২০১৬ সালে বাতিল হয়ে যাওয়ার পরেও তাঁরা তা লুকিয়ে-চুরিয়ে চালিয়ে যাচ্ছিলেন। জেরার মুখে তাঁরা জানিয়েছেন, এই পোস্তখোসা ঝাড়খণ্ড থেকে তাঁরা নিয়ে আসতেন। খোলা বাজারে কিলোগ্রাম প্রতি দাম প্রায় পাঁচ হাজার টাকা।