নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। —ফাইল চিত্র।
সিবিআই হেফাজতে থাকাকালীন খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’। খেতে চাইছেন না ওষুধও। সেই কারণে তাঁর রক্তে শর্করার সমস্যা দেখা দেয়। শনিবার আদালতে এ কথা জানান কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী। এমন অবস্থায় তাঁকে আর হেফাজতে নিতে চাইছে না সিবিআই।
গত মঙ্গলবার বেশি রাতের দিকে সুজয়কৃষ্ণকে নিজেদের হেফাজতে নেয় সিবিআই। শনিবার তাঁর সিবিআই হেফাজতের মেয়াদ শেষ হয়েছে। শনিবার ফের বিচার ভবনে সুজয়কৃষ্ণের মামলা ওঠে।
সুজয়কৃষ্ণকে শনিবার আর নতুন করে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায়নি সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী তাঁকে জেল হেফাজতের পাঠানোর আবেদন জানান। অন্য দিকে, সুজয়কৃষ্ণের আইনজীবী তাঁর মক্কেলের জামিনের জন্য সওয়াল করেন। তবে জামিনের আর্জি খারিজ করে দিয়েছেন বিচারক। আপাতত ‘কালীঘাটের কাকু’কে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির মামলার তদন্তে সুজয়কৃষ্ণের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে চাইছে সিবিআই। শনিবার সেই আবেদনও জানায় তারা। তবে সে ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম মেনে যাতে নমুনা সংগ্রহ করা হয়, সে বিষয়টিও আদালতের নজরে আনেন সুজয়কৃষ্ণের আইনজীবী। মঙ্গলবার সুজয়কে হেফাজতে নেওয়ার পর সিবিআই কী করল, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আইনজীবী। আইনজীবীর বক্তব্য, তাঁর মক্কেল কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তি নন। কোনও সরকারি দফতরের সঙ্গেও যুক্ত নন। দেড় বছর ধরে জেলবন্দি রয়েছেন তাঁর মক্কেল। হেফাজতে থাকাকালীন সুজয়কৃষ্ণের স্ত্রীবিয়োগের কথাও তুলে ধরেন তিনি। বর্তমানে যে হেতু সিবিআই তাঁকে আর হেফাজতে চাইছে না এবং ইডির মামলাতেও তিনি জামিন পেয়েছেন— এমন অবস্থায় যে কোনও শর্তে সুজয়ের জামিনের আর্জি জানান তাঁর আইনজীবী। প্রয়োজনে জামিন দিয়ে গৃহবন্দি করে রাখার প্রস্তাবও দেন।
যদিও সিবিআই আইনজীবীর দাবি, সুজয়কৃষ্ণ হেফাজতে থাকাকালীন অসহযোগিতা করেছেন। তিনি জানান, সিবিআই হেফাজতে খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে উপবাস শুরু করে দিয়েছিলেন সুজয়কৃষ্ণ। ওষুধও খেতে চাইছিলেন না। রক্তে শর্করার মাত্রার সমস্যা তৈরি হয়েছিল। এমন অবস্থায় তিনি অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন বলে মনে করছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবীর বক্তব্য, ‘মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি’ তৈরির চেষ্টা করছেন সুজয়। সুজয় প্রসঙ্গে সিবিআই আইনজীবী আরও জানান, তাঁরা রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং তাঁরা জানেন উপবাস করলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে সিবিআই আর নতুন করে হেফাজতে নিতে চাইছে না বলে আদালতে জানান তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী। যদিও ‘কাকু’র আইনজীবীর বক্তব্য, তিনি জামিন পেলে ডালভাত খেয়ে থাকবেন।
সিবিআই হেফাজতে থাকাকালীন তিনি জেরায় সাহায্য করেননি বলে অভিযোগ তদন্তকারী সংস্থার। সিবিআইয়ের দাবি, জেরার সময় চাকরিপ্রার্থীদের নাম, তাঁদের থেকে কত টাকা নেওয়া হয়েছে কিছুই বলেননি তিনি। সরকারি আধিকারিকদেরও নাম বলছেন না। সুজয় বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ সিবিআইয়ের। যদিও তদন্তকারী সংস্থার এই বক্তব্যে সন্তুষ্ট ছিল না আদালত। কী ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য ‘কাকু’ দিয়েছেন, তা সিবিআইয়ের থেকে জানতে চান বিচারক। আদালতের বক্তব্য, চাকরিপ্রার্থীদের নাম এবং কত টাকা দিয়েছেন সেই তথ্য সিবিআই আগে থেকেই জানে। সুজয়কৃষ্ণ সেই তথ্য দেওয়া বা না-দেওয়ায় কী যায়-আসে? তা নিয়ে প্রশ্ন করে আদালত। বিচারক বলেন, “(তদন্তে) সহযোগিতা মানে এটা নয় যে সিবিআই যা বলবে, তাতেই হ্যাঁ বলতে হবে।”
সুজয়কৃষ্ণ জামিন পেলে তদন্ত কী ভাবে প্রভাবিত হতে পারে, সে প্রশ্নও করেন বিচারক। তখন সিবিআই জানায়, তিনি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন। এই মামলার তদন্তে অনেক সরকারি আধিকারিকের নামও উঠে আসতে পারে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কিন্তু সিবিআইয়ের বক্তব্য, সুজয়কৃষ্ণ তাঁদের নাম বলছেন না।