মোটরবাইক সফরে নরেশ পটেল। নিজস্ব চিত্র
মোটরবাইকে সওয়ার ৭৩ বছরের ‘তরুণ’। সঙ্গের ব্যাগে কাপড়জামা তেমন কিছু নেই। বদলে আছে মানচিত্র, জল, গাছ, কন্যা সন্তান রক্ষা এবং ভূমিক্ষয় সংক্রান্ত ব্যানার। রয়েছে কিছু লিফলেট, যাতে প্রিয়জনেদের নামে গাছের চারা লাগানো এবং তা রক্ষা করার কথা লেখা রয়েছে।
২১ দিনেই ওই তরুণ চষে ফেলেছেন দক্ষিণ এবং পূর্ব ভারতের ন’টি রাজ্যের সাড়ে আট হাজার কিলোমিটার রাস্তা। সেই সব জায়গার প্রায় ১০০টি প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি স্কুলের পড়ুয়া-শিক্ষকদের হাতে আঞ্চলিক ভাষায় লেখা ব্যানার ও লিফলেটে গাছ বাঁচানোর বার্তা দিয়েছেন তিনি। গুজরাতের আমদাবাদের প্রাক্তন পুলিশকর্তা নরেশ পটেল। ট্র্যাফিক পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে তিনি অবসর নিয়েছেন ১৩ বছর আগে। দ্রুত বদলে চলা পরিবেশ এবং তার জেরে বিপন্ন জনজীবনকে রক্ষা করতে গত ৪০ বছর ধরে কাজ করছেন তিনি। সমুদ্রের ধার ধরে মোটরবাইকে ঘুরেই গাছ আর বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস নিয়ে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেন। তাঁর উদ্যোগেই গুজরাতের শতাধিক স্কুল পড়ুয়া নিজেদের নামে বৃক্ষরোপণ প্রকল্পে শামিল হয়েছে। এমনকি, প্রতি সপ্তাহের শুক্র এবং শনিবার আমদাবাদের বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে পরিবেশ রক্ষা নিয়ে ক্লাসও নেন।
রবিবার শহরে পৌঁছনোর পরে থ্যালাসেমিয়া নিয়ে কাজ করা একটি সংস্থার পক্ষ থেকে তাঁকে স্বাগত জানানো হয়। এ দিন শহরের অন্য প্রবীণ ‘মোটরবাইক রাইডার’ তরুণ বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। তরুণবাবুও দিন কয়েক আগেই সমুদ্রের ধার বরাবর দক্ষিণ ও পূর্ব ভারতের ১১টি রাজ্যে প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার পথ মোটরবাইকে পাড়ি দিয়ে ফিরেছেন। কন্যাসন্তান জন্মালে সেই সদ্যোজাতের নামে ১১টি গাছ লাগানোর বার্তা নিয়ে পথে বেরিয়েছিলেন তিনি। সোমবার ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ হয়ে সুরাতে রওনা হওয়ার আগে পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলতে তরুণবাবুর কাছে বাংলাটা ঝালিয়ে নিচ্ছিলেন নরেশবাবু।
এ দিন ব্যারাকপুর স্টেডিয়ামে পুলওয়ামায় নিহত জওয়ানদের স্মৃতিতে বৃক্ষরোপণ করেন তিনি। ব্যারাকপুর থেকে ওড়িশার দারিংবাড়ি পর্যন্ত থ্যালাসেমিয়া সচেতনতার প্রচারে বেরোনো একটি মোটরবাইক যাত্রার সূচনা করে প্রাক্তন পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘বয়সটা সংখ্যা মাত্র। স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে যখন পরিবেশ বাঁচানোর কথা বলি, তখন ওদের বন্ধু হয়ে যাই। বয়স বা ভাষা কোনওটাই তখন অন্তরায় হতে পারে না।’’